সংসদে দাঁড়িয়ে আজ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করলেন নরেন্দ্র মোদী। গত স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় বক্তৃতার পরে ফের আজ রাজ্যসভায় ওই বিধি নিয়ে সরব হতে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীকে। রাজনীতিকদের একাংশের মতে, সম্ভবত উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেশ জুড়ে ওই বিতর্কিত আইন আনার ভাবনা-চিন্তা করছে বিজেপি। এর পাশাপাশি, কংগ্রেসের আর্থিক নীতির তীব্র সমালোচনা করে আজ মোদী বলেছেন, স্বাধীনতার পরের চার দশকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধিকে ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ বলে কটাক্ষ করা হয়ে থাকে। ‘শাহি পরিবারের’ ভুল আর্থিক নীতির কারণে সামগ্রিক ভাবে (হিন্দু) সমাজকে গোটা বিশ্বে বদনাম
কুড়াতে হয়।
আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার জবাবি ভাষণে কংগ্রেসের সমালোচনা করতে গিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির উল্লেখ করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কিছু লোক ভাবছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রয়োজন কী! যারা সংবিধান পরিষদের বিতর্কগুলি পড়েছেন, তাঁরাই একমাত্র অনুধাবন করবেন যে, সংবিধানের প্রকৃত উদ্দেশ্য মেনেই আমরা কাজ করে চলেছি।’’ গেরুয়া শিবির দীর্ঘদিন ধরে দেশে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউসিসি) চালু করার পক্ষে সরব। লক্ষ্য, মুসলিম সমাজকে ইউসিসি-র অন্তর্ভুক্ত করা। ইতিমধ্যেই বিজেপি-শাসিত উত্তরাখণ্ডে ওই বিধি চালু হয়েছে। মোদীর রাজ্য গুজরাতও চলতি সপ্তাহে ইউসিসি বিলের খসড়া তৈরিতে কমিটি গঠন করেছে।
খোদ মোদীও গত বছরের স্বাধীনতা দিবসে বলেছিলেন, বর্তমান দেওয়ানি বিধি সাম্প্রদায়িক। এ দেশে বৈষম্যমূলক আইনের কোনও স্থান নেই। সে দিন তিনি সব ধর্মের মানুষের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ দেওয়ানি বিধির পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আজ রাজ্যসভায় তিনি এ বিষয়ে সরব হলেও, কবে ওই বিধি আনা হতে পারে, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি মোদী। তবে ইউসিসি এলে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে কিছু রাজনৈতিক দল যে সেটির বিরোধিতা করবে, তা তিনি বিলক্ষণ জানেন। সেই কারণেই আজ বিরোধীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু লোকের পক্ষে ওই বিল সমর্থন করা বেশ কঠিন হতে পারে। কিন্তু আমরা ওই বিলকে সমর্থন করি। কারণ, সংবিধান-প্রণেতাদের আবেগ আমাদের অন্তরে রয়েছে।’’
আজ নিজের বক্তব্যে স্বাধীনতার পরে কংগ্রেসের লাইসেন্স রাজ ও রক্ষণশীল আর্থিক নীতির তীব্র সমালোচনা করেন মোদী। স্বাধীনতার পরের চার দশকে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির গড় হার সাড়ে তিন শতাংশের আশেপাশে আটকে ছিল, যাকে ব্যঙ্গ করে ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন অর্থনীতিবিদ রাজ কৃষ্ণ। স্বাধীন ভারতে অধিকাংশ সময়ে কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা কংগ্রেসকেই আজ ওই কটাক্ষের সূত্রে বিঁধেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন, এটা তাঁদের ব্যর্থতা। আর্থিক বিশৃঙ্খলা এবং শাহি (গান্ধী)
পরিবারের ভুল নীতির কারণে সামগ্রিক (হিন্দু) সমাজকে বিশ্ব জুড়ে বদনাম হতে হয়।’’ কংগ্রেসের আমলে দেশের আর্থিক বিকাশ থমকে থাকার জন্য লাইসেন্স রাজ ও রক্ষণশীল আর্থিক নীতিকেই দায়ী করেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ভারতীয়রা বরাবর মুক্তি বাণিজ্যে বিশ্বাসী। কয়েকশো বছর আগে থেকেই ভারতীয় বণিকেরা দেশে দেশে ঘুরে বাণিজ্য করত। কোনও বাধা ছিল না। এটাই আমাদের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য ছিল।’’
স্বাধীনতার পরে দেশের আর্থিক গতিবিধি শ্লথ হওয়ার জন্য আজ ফের জওহরলাল নেহরু এবং তাঁর আর্থিক নীতিকে দুষে মোদী বলেছেন, ‘‘নেহরু সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর ভুল নীতি দেশে খাদ্যসঙ্কট ডেকে আনে। হোটেল থেকে ব্যাঙ্ক, সব কিছু সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকায় বেসরকারি উদ্যোগ গড়ে ওঠেনি। অর্থনীতিও সে ভাবে গতি পায়নি।’’
পাল্টা আক্রমণে আজ কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘মোরারজি দেশাই সরকারের আমলে ভারতীয় অর্থনীতির জন্য ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ শব্দবন্ধটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল। আর সেই সরকারকে সমর্থন করেছিল জনসঙ্ঘ। তাদেরই উত্তরসূরি হল বিজেপি।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)