প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডের তিন টিকার সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দিল কেন্দ্র। ১৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ ও জিএসটি-সহ কোভিশিল্ড টিকা দেওয়ার জন্য ৭৮০ টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। কোভ্যাক্সিনের সর্বোচ্চ দাম ১৪১০ টাকা এবং স্পুটনিক ভি-র দাম ১১৪৫ টাকায় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোনও অবস্থাতেই ১৫০ টাকার বেশি সার্ভিস চার্জ নেওয়া চলবে না। সরকারি হাসপাতালে অবশ্য টিকা নিখরচাতেই মিলবে। তবে টিকা বণ্টনের প্রশ্নে ২১ জুন থেকে নরেন্দ্র মোদী সরকার পুরনো নীতিতে ফিরে গেলেও রাজ্যের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত টিকা আসবে কোথা থেকে, তার স্পষ্ট দিশা এখনও নেই।
আজ সেই ধোঁয়াশা আরও বাড়িয়ে দেন নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আজ ২৫ কোটি কোভিশিল্ড ও ১৯ কোটি কোভ্যাক্সিন প্রতিষেধকের বরাত দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে সিরাম ইনস্টিটিউট ও ভারত বায়োটেককে। বিনোদ পল প্রথমে দাবি করেন, ওই ৪৪ কোটি প্রতিষেধক অগস্ট মাসেই কেন্দ্রের হাতে চলে আসবে। কিন্তু পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী অগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ওই প্রতিষেধক কেন্দ্রকে জোগাবে দুই সংস্থা। এ ছাড়া দেশীয় সংস্থা বায়োলজিক্যাল-ই ৩০ কোটি প্রতিষেধক দেবে। তবে তা সেপ্টেম্বরের আগে নয়। ফলে দেশ জুড়ে প্রতিষেধকের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যে কারণে থমকে গিয়েছিল ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণ, সেই সমস্যার এখনই কোনও সমাধান কার্যত নেই কেন্দ্রের কাছে।
কেন্দ্রের টিকা নীতি বদলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, ‘‘আজকের দিনে টিকার জোগান বাড়বে কী ভাবে? সরকারের লক্ষ্য, ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি দেশবাসীকে প্রতিষেধক দেওয়া। কিন্তু বর্তমানে ফি-দিন গড়ে ৩০ লক্ষ মানুষ টিকা পান। বছর শেষের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে হলে তা প্রতি দিন অন্তত ৮০ লক্ষ হওয়া উচিত। কিন্তু তার জন্য পর্যাপ্ত টিকা রাজ্যগুলিকে জোগাতে মোদী সরকার যে ব্যর্থ, তা পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট। ওই টিকা সরকারের হাতে কই!’’ টিকার অভাব সহজে যে মিটবে না, তা বুঝেই টিকাদানের ক্ষেত্রে আজ অগ্রাধিকারের তালিকা স্থির করে দিয়েছে কেন্দ্র। সেই অনুযায়ী, আগের মতোই প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের, তার পরে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের নাগরিকদের, তাঁদেরও পরে দ্বিতীয় ডোজ় প্রত্যাশীদের এবং সব শেষে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের টিকাকরণের সুযোগ দেওয়া হবে।
কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত, রাজ্যগুলি কত প্রতিষেধক পাবে, প্রতি বার এক মাস আগে থাকতেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে। তার ভিত্তিতে অগ্রাধিকারের ওই তালিকা স্থির করতে হবে রাজ্যগুলিকে। কেন্দ্র জানিয়েছে, সরকারি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে টিকা পাওয়া যাবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলি মোট টিকার ২৫ শতাংশ প্রতিষেধক উৎপাদনকারী সংস্থার কাছ থেকে সরাসরি কিনতে পারবে। বিনোদ পলের কথায়, ‘‘বড় শহরের মতোই ছোট শহরের হাসপাতালগুলি যাতে টিকাকরণ কেন্দ্র খুলতে উৎসাহী হয়, তার জন্যই ১৫০ টাকা সার্ভিস চার্জের কথা বলা হয়েছে।’’ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি টিকার দাম বাড়ালে তা নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশ বিজেপি-শাসিত রাজ্য হওয়ায় সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি টিকা পাঠিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় অবশ্য কেন্দ্র দাবি করে, জনসংখ্যার ভিত্তিতেই রাজ্যগুলিতে টিকা বণ্টন করা হয়ে থাকে। কোনও রাজ্যকে বাড়তি সুবিধে দেওয়া হয়নি। এখন নীতি বদলের পরেও পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা করছেন বিরোধীরা। জয়রাম রমেশের কথায়, ‘‘কিসের ভিত্তিতে রাজ্যগুলিকে টিকা বণ্টন করা হবে, তার কোনও স্বচ্ছ নীতি এখনও নেই কেন্দ্রের কাছে। গত ১৮ এপ্রিল মনমোহন সিংহ তাই কেন্দ্রকে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করে টিকা বণ্টনের প্রশ্নে একটি স্বচ্ছ নীতি প্রণয়ন করতে বলেছিলেন। তা না-হওয়ায় এ যাত্রাতেও পক্ষপাতিত্বের আশঙ্কা রয়েছে।’’ জবাবে বিনোদ পল বলেন, ‘‘একাধিক শর্ত পর্যালোচনা করে তবেই রাজ্যগুলিকে টিকা পাঠানো হয়। তার মধ্যে ওই রাজ্যের জনসংখ্যা যেমন একটি, তেমনই রাজ্যে সংক্রমণের হার কত, সংক্রমণ কতটা ছড়িয়েছে, রাজ্যের কত টিকার প্রয়োজন রয়েছে, রাজ্যে টিকাকরণ কতটা মসৃণ ভাবে চলছে, তা খতিয়ে দেখা হয়। টিকাকরণ অভিযানে কী পরিমাণ প্রতিষেধক নষ্ট হচ্ছে, সেটিও বিচার্য।’’ এক স্বাস্থ্যকর্তার ব্যাখ্যা, যে রাজ্যে টিকা নষ্টের পরিমাণ কম, স্বাভাবিক ভাবেই সেই রাজ্যকে বেশি টিকা পাঠানোর প্রশ্নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy