গত বছর ১৪ অক্টোবর প্রতি কিলোগ্রাম টোম্যাটোর দর ছিল ৫০ টাকা প্রতীকী ছবি।
পেট্রল, ডিজ়েল থেকে শুরু করে সর্ষের তেল— জ্বালানি আর রান্নার তেলের চড়া দর নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিলই। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজোর এই মরসুমে এ বার পেঁয়াজ, টোম্যাটোর রকেট গতিতে বাড়তে থাকা দামে গরিব, মধ্যবিত্তের ক্ষোভ আঁচ করে মোদী সরকারের দাবি, দাম তো গত বছরের তুলনায় কমই! অথচ সরকারি হিসাবই বলছে, গত অক্টোবরের তুলনায় এখন কলকাতার বাজারে আলুর দাম কম থাকলেও, পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর বেশি।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, কলকাতায় বিশেষত টোম্যাটোর দাম অন্যান্য শহরের তুলনায় বেড়েছে অনেক বেশি। গত বছর ১৪ অক্টোবর প্রতি কিলোগ্রাম টোম্যাটোর দর যেখানে ৫০ টাকা ছিল, সেখানে এ দিন তা ৯৩ টাকা! পেঁয়াজও গত বারের থেকে বেশি। মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যেই এই দুই আনাজের দাম বেড়েছে লাফিয়ে।
এই দুইয়ের দরে মরসুমি ওঠা-নামা তো থাকেই। কিন্তু তার সঙ্গে এ বার এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পিছনে আরও দু’টি কারণ রয়েছে বলে কৃষি অর্থনীতিবিদদের অভিমত। এক, অসময়ে বৃষ্টির ফলে আনাজের জোগান ধাক্কা খেয়েছে। দুই, রাজ্যে লিটারে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই ডিজ়েলের দৌলতে পরিবহণের খরচও বেড়েছে অনেকখানি। আর এই দুইয়ের কারণে শুধু পেঁয়াজ বা টোম্যাটো নয়, আগুন দরে বেগ দিচ্ছে অনেক আনাজই।
সাধারণত প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজের দাম অল্প-বিস্তর বাড়ে। কারণ, এই সময়ে গ্রীষ্মের মরসুমে চাষ করে ফলানো মজুত পেঁয়াজ কমতে থাকে। শীতের সময়ে বাজারে নতুন পেঁয়াজ এলে, ফের দাম কমে। কিন্তু এ বার অক্টোবরের প্রথম ১৫ দিনেই পেঁয়াজের দর প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে। আর টোম্যাটো দ্বিগুণ হওয়ার পথে। কেন্দ্রীয় খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নাইয়ের মতো মেট্রো শহরগুলির পাশাপাশি অন্যান্য শহরেও এই ছবি অনেকটা একই রকম। মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশের মতো পেঁয়াজ, টোম্যাটো উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে অসময়ে বৃষ্টির ফলে ফসল নষ্ট হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিজ়েলের দামও সমস্যা তৈরি করেছে। আনাজের জোগানদার সংস্থাগুলি বলছে, ডিজ়েলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ট্রাক মালিকেরা পরিবহণের জন্য চড়া দর হাঁকছেন। তা জোগাতে গিয়ে অগ্নিমূল্য আনাজের।
পেট্রল, ডিজ়েলের পাশাপাশি সর্ষের তেলের মতো ভোজ্য তেলের দাম কমারও কোনও লক্ষণ নেই। কেন্দ্র বাধ্য হয়ে গত সপ্তাহে রাজ্যগুলিকে বেআইনি মজুতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। আজ, রবিবার পীযূষ গয়ালের খাদ্য, গণবণ্টন ও উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, আলু, পেঁয়াজ ও টোম্যাটোর দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, তার জন্য অগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই সরকার সক্রিয়। সরকারের ঘরে ২ লক্ষ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। ১২ অক্টোবর পর্যন্ত দিল্লি, কলকাতা-সহ দেশের প্রধান বাজারগুলিতে ৬৭ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ পাঠানো হয়েছে। রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের গুদাম থেকে ২১ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে পেঁয়াজ কিনে বাজারে বিক্রির বন্দোবস্তের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আলু ও টোম্যাটোর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতেও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে মোদী সরকারের দাবি।
কিন্তু সরকার এ কথা বললেও, এশিয়ার বৃহত্তম ফল ও আনাজের পাইকারি বাজার, দিল্লির আজাদপুর মান্ডির ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, খুব তাড়াতাড়ি টোম্যাটো, পেঁয়াজের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, ডিজ়েলের চড়া দর। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে টোম্যাটো ৩০-৪০ টাকা কিলোগ্রাম দরে বিক্রি হলেও, ট্রাকে চেপে দিল্লি আসতে-আসতে তার দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ পেট্রল-ডিজ়েলে মোদী সরকারের চড়া করের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, ‘সব কিছুর বিনাশ হচ্ছে। শুধু মূল্যবৃদ্ধির বিকাশ হচ্ছে।’ কংগ্রেস ১৪ থেকে ২৯ নভেম্বর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে জন জাগরণ অভিযান-এ নামারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার অভিযোগ, বিজেপির রাজত্বে এই মূল্যবৃদ্ধির বোঝায় কৃষক-শ্রমিকরা জেরবার। শুধু ‘মোদী মিত্ররাই’ লাভবান হচ্ছেন। প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, “প্রতিদিন দাম বাড়িয়ে ডিজ়েলের দর ১০০ টাকার ঘরে (একাধিক রাজ্যে) পৌঁছে গিয়েছে। এ বার নাইট্রোজেন, পটাশ, ফসফেট সারের দামও বাড়ানো হয়েছে।” চাষি এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশাই তুলে ধরতে চাইছে কংগ্রেস।
কিছু দিন আগেই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস ছিল, জ্বালানি তেলের চড়া দর ইন্ধন জোগাবে মূল্যবৃদ্ধিতে। বিশেষত দামের ছেঁকা টের পাওয়া যাবে আনাজ এবং খাদ্যপণ্যে। এই সমস্যা সামাল দিতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন্দ্রকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy