সিপিএমের ভিতরে এমন আশঙ্কাই ছিল। শেষ পর্যন্ত ইরফান হাবিবের বিরুদ্ধেও তলোয়ার হাতে নেমে পড়লেন প্রকাশ কারাট!
প্রবীণ মার্ক্সবাদী ইতিহাসবিদ হাবিব সম্প্রতি সিপিএমের পলিটব্যুরোকে কড়া নোট পাঠিয়ে পার্টি লাইন নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের হাতে এখন দেশের গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও শিক্ষানীতি বিপন্ন। এই অবস্থায় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে অযথা বিতর্ক না করে বিজেপি-কে রোখাই সিপিএমের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যপূরণের জন্য কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে নিয়ে একজোট হয়েই লড়াই করা উচিত।
এমন যুক্তি যে কারাট ও তাঁর অনুগামীদের পছন্দ হবে না, সিপিএমের অন্দরে বড় অংশেরই তা জানা ছিল। হাবিবের যুক্তি খণ্ডন করতে দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকই এ বার কলম হাতে নেমেছেন কেরল সিপিএমের মালয়ালম মুখপত্রে। যেখানে তিনি দেখাতে চেয়েছেন, বিজেপি-কে আটকানোর জন্য কংগ্রেসের হাত ধরার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে শ্রেণি সংগ্রামে মনোনিবেশ করাই ভাল।
হাবিব তাঁর নোটে বলেছিলেন, যে কোনও বুর্জোয়া পার্টির হাতে যে ভাবে সরকার চলে, বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার নিছক তেমন নয়। সঙ্ঘ পরিবার তাদের আধা-ফ্যাসিস্ত মতাদর্শ এখন সর্বত্র চালাতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার হাতে থাকায়। কারাট পাল্টা লিখেছেন, ‘ভারতে এখনও ফ্যাসিবাদ আসেনি। বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার যেটা করতে চাইছে, তাকে আধিপত্যবাদী মানসিকতা বলা যেতে পারে। কিন্তু ফ্যাসিবাদের ছায়া দেখার সময় এখনও আসেনি’।
একই ভাবে একজোট হয়ে লড়াইয়ের প্রশ্নেও কারাটের পাল্টা বক্তব্য, ‘শ্রেণি সংগ্রামই চূড়ান্ত এবং একমাত্র পথ। শাসক শ্রেণির একটা দলকে হারাতে শাসক শ্রেণিরই অন্য আর একটা দলকে সঙ্গে নেওয়ার কোনও অর্থ নেই’! কারাট অবশ্য সরাসরি হাবিবের নাম করেননি। কিন্তু তাঁর কলমে একই সঙ্গে যে বর্ষীয়ান ইতিহাসবিদ হাবিব এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিকে নিশানা করা হয়েছে, তা বুঝতে কারও বাকি নেই!
প্রশ্ন হল, কেরলের মালয়ালম মুখপত্রকে বেছে নিলেন কেন কারাট? দলের একটি সূত্রের বক্তব্য, কংগ্রেস-প্রশ্নে সিপিএমের মধ্যে সব চেয়ে কট্টরপন্থী অবস্থান এখন কেরল শিবিরেরই। তাই সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণ শুরু করতে সুবিধা হয়েছে কারাটের। তবে তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য, সিপিএমের ইতিহাসে সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক এ ভাবে রাজনৈতিক ও কৌশলগত পার্টি লাইন নিয়ে এমন সক্রিয়তা দেখাননি। অথচ কারাট এখন পার্টি লাইন নিয়ে বঙ্গ সিপিএমকে তুলোধোনা করার জন্য পলিটব্যুরোর সংশোধনী নোট নিজে তৈরি করছেন, হাবিবকে জবাব দিতেও নিজে এগিয়ে আসছেন!
সিপিএমের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে, আগামী পার্টি কংগ্রেসে কি আবার দলের লাগাম হাতে ফিরে পেতে চান কারাট? দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, পরপর তিন বারের বেশি কেউ সম্পাদক থাকতে পারবেন না। কিন্তু এক দফার বিরতির পরে আবার ফিরে আসায় কোনও নিয়মগত বাধা নেই! কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে কারাটের প্রভাব এখনও প্রশ্নাতীত। সাম্প্রতিক কালে আবার তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে সিপিএমের সদস্যসংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই সব রাজ্য থেকে পার্টি কংগ্রেসে প্রতিনিধির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ইয়েচুরির জমানায় সিপিএম মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক লাইন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ছে বলে বিদ্রোহ করে দলের পবিত্রতা রক্ষায় পুরনো কাণ্ডারীকে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরালো হতে পারে— এমন সম্ভাবনা দেখতে শুরু করেছে দলের একাংশ। তাদের মতে, সেই সম্ভাবনারই এক টুকরো আগাম ইঙ্গিত রয়েছে হাবিবকে খণ্ডন করে কংগ্রেস-বিরোধিতার নীতিতে কারাটের এমন অনড় সওয়ালে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy