Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Prakash Karat

বাংলা, ত্রিপুরার হার থেকে শিক্ষা নিক কেরল, বার্তা কারাটের

সময় থাকতে বাংলা ও ত্রিপুরার বিপর্যয় থেকে শিক্ষা না নিলে কেরলেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে বলে দলকে সতর্ক করে দিচ্ছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।

প্রকাশ কারাট।

প্রকাশ কারাট। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৭:৪১
Share: Save:

একটি রাজ্যে বাম সরকার ছিল ৩৪ বছর। অন্য আর একটিতে টানা ২০ বছর। কিন্তু সেই দুই রাজ্যেই এখন ভোট-ব্যাঙ্ক তলানিতে, সংগঠনও ক্ষয়িষ্ণু। সময় থাকতে বাংলা ও ত্রিপুরার বিপর্যয় থেকে শিক্ষা না নিলে কেরলেও একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে বলে দলকে সতর্ক করে দিচ্ছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। আর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির বার্তা, মুখ্যমন্ত্রী থেকে দলের শাখা সম্পাদক, প্রত্যেককে থাকতে হবে ধরাছোঁয়ার মধ্যে।

লোকসভা ভোটে কেরলে এ বারের ভরাডুবিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এক দিকে যেমন দক্ষিণী এই রাজ্যে নতুন নজির গড়ে পরপর দু’বার ক্ষমতায় ফেরার তিন বছরের মধ্যে বামেদের ভোট প্রায় ১০% কমে গিয়েছে, তেমনই আবার বিজেপির ভোট বেড়েছে। এই প্রথম বার কেরলে বিজেপি একটি লোকসভা আসনও জিতেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের অভিমুখ ঠিক রাখা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে সিপিএমের একেবারে শীর্ষ স্তর থেকে। তারই অঙ্গ হিসেবে দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে প্রাথমিক পর্যালোচনা হয়ে যাওয়ার পরে কেরলে অঞ্চলভিত্তিক চারটি বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। রাজ্যের মোট ১৪টি জেলাকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে লোকাল কমিটির সম্পাদক থেকে শুরু করে রাজ্য কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই বৈঠক ডাকা হয়েছিল কান্নুর, কোঝিকোড়, এর্নাকুলম ও কোল্লমে। দলের রাজ্য নেতৃত্ব ছাড়াও আঞ্চলিক বৈঠকে ছিলেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্যেরা। সেই আসরেই দলের জন্য কড়া বার্তা দিয়ে রেখেছেন কারাট, ইয়েচুরিরা।

কান্নুরে আঞ্চলিক বৈঠকে ছিলেন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির আলোচনার নির্যাস পেশ করতে গিয়েই কারাট বলেছেন, বাংলা ও ত্রিপুরার বিপর্যয় থেকে দলকে শিক্ষা নিতেই হবে। নইলে কেরলেও একই পরিস্থিতির সামনে দাঁড়াতে হতে পারে! তাঁর মতে, নিজেদের ভুল শুধু শুধরে নেওয়াই যথেষ্ট নয়। মানুষকে বোঝাতে হবে যে, দল ভুল সংশোধন করছে। প্রসঙ্গত, বাংলায় ক্ষমতা হারানোর মুখে দাঁড়িয়ে ও তার পরেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলতেন, ‘মানুষ যে ভাবে চান, সে ভাবে পার্টিকে গড়ে তুলতে হবে’। তাঁর বক্তব্য ছিল, সিপিএম দলীয় স্তরে যা ভাবার, ভাবছে। কিন্তু মানুষ কী মনে করছেন, সেটা বোঝা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সেই সুরই কারাটের কাছে শুনেছেন কেরলের সিপিএম নেতা-কর্মীরা।

দলের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি ছিলেন কোঝিকোড়ের আঞ্চলিক বৈঠকে। সরকারের কাজ ও দলের ভূমিকা, দুইয়েরই কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি। উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে সাধারণ মানুষের রুটি-রুজির প্রশ্নের দিকে বাম সরকারকে বেশি নজর দেওয়ার পরামর্শ তিনি দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। দলের রাজ্য কমিটির প্রাথমিক রিপোর্টের সূত্র ধরেই তিনি বলেছেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-সহ সাধারণ মানুষের বেশ কিছু অংশের পেনশন আটকে যাওয়ার মতো সমস্যা ভোটে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভাবে কেরলের বাম সরকারকে নিশানা করেছে। কিন্তু মানুষের সঙ্গে দলের সংযোগ নিবিড় না থাকলে এই আক্রমণের তীব্রতা জনতাকে বোঝানো যাবে না। সূত্রের খবর, বৈঠকে ইয়েচুরি এমন কথাও বলেছেন যে, কেরলে ইদানিং কোনও মন্ত্রীর আপ্ত-সহায়কের কাছে পৌঁছতেও মানুষের কালঘাম ছুটে যায় বলে অভিযোগ আছে। কেন এই ‘বিচ্ছিন্নতা’ থাকবে? তাঁর পরামর্শ, মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে দলের এক জন শাখা সম্পাদক— প্রত্যেককেই ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকতে হবে। গণ-সংযোগ বাড়িয়েই বিজেপির উত্থানের মোকাবিলা করতে হবে।

কেরলে দলের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন ও রাজ্য থেকে আর এক পলিটব্যুরো সদস্য এ বিজয়রাঘবনও স্বীকার করেছেন, প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক স্তরে বিস্তর ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। জনতার সঙ্গে যোগাযোগেও ঘাটতি আছে। তাঁদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া বার্তা ও ক্ষেত্রবিশেষে ‘ভর্ৎসনা’র অর্থ মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে আলাদা করে নিশানা করা নয়। গোবিন্দনের বক্তব্য, ‘‘মানুষের সঙ্গে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে হবে। এটাই কেন্দ্রীয় কমিটির বার্তা, রাজ্যের রিপোর্টও তাই। এই বার্তা সর্বস্তরে উদ্ধত নেতা-কর্মীদের জন্যই। কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশে কিছু নয়!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy