ধর্মযাজক জোসেফ কাল্লারাঙ্গাট
খ্রিস্টান ও হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরণ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকার ও বিরোধী দলের তোপে পড়লেও বিজেপির সমর্থন পেলেন কেরলের ধর্মযাজক জোসেফ কাল্লারাঙ্গাট। তাঁর রাজ্যের খ্রিস্টান এবং হিন্দু মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বা মাদক দিয়ে আচ্ছন্ন করে জেহাদিরা মগজধোলাই করছে— এই মন্তব্যের জেরে সম্প্রতি সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেরলের ওই ধর্মযাজক। এ বার তাঁর নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সভাপতি জর্জ কুরিয়েন।
চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, রাজ্যে খ্রিস্টান ও হিন্দুদের মধ্যে যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে তারই প্রতিফলন হয়েছে ওই যাজকের কথায়। যে মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও বিরোধীরা। এক দল ‘কট্টরপন্থী’ জোসেফের বাড়ির বাইরে মিছিল করেছে এবং তাঁর উপরে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ বিজেপির। কুরিয়েন চিঠিতে লিখেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ করছি। ওই যাজক ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানাচ্ছি।’’
প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরণ বা বিপথে চালনা করার মতো অভিযোগকে ‘লাভ জেহাদ’ নামে দেগে তা রুখতে বহু দিন ধরেই আইন আনার কথা ভাবছে বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্য। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের একাংশের দাবি, বহু রাজ্যেই ‘লাভ জেহাদ’-এর মাধ্যমে জোর করে মেয়েদের বিয়ের আগে বা পরে মেয়েদের ধর্মান্তরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জোর করে ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনও পাশ করেছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলি। বিজেপির মুখপাত্র টম ভাডাক্কাম আজ বলেছেন, ‘‘কোনও এক বিশেষ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। এই কার্যকলাপ জাতীয় সুরক্ষা ও যুবসমাজের পক্ষে ক্ষতিকর।’’ কেন্দ্রীয় সরকার আইন এনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুক এবং ‘লাভ জেহাদ’ ও ‘মাদক জেহাদ’-এ জড়িতদের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হোক।
কেরলের ওই ধর্মযাজকের এ-ও দাবি, মগজধোলাই করে খ্রিস্টান ও হিন্দু মেয়েদের জঙ্গি দলে নাম লেখাতে ‘মাদক জেহাদ’-ও চলছে। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি কেরল থেকে আফগানিস্তানে গিয়ে আইএস জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখেছিলেন নিমিষা ও সনিয়া সেবাস্তিয়ান নামে দুই মহিলা। ধর্মান্তরণের পরে যাঁরা নাম বদলে ফতিমা ও আয়েষা নামে পরিচিত হন। ওই যাজকের দাবি, এই দুই মহিলাকে এমন ভাবে বোঝানো হয় যে তাঁরা পরিবার, পরিজন, ধর্ম এমনকি দেশ ছাড়ার আগেও দু’বার ভাবেননি। কী ভাবে অল্পবয়সিদের ফাঁদে ফেলছে এই জঙ্গিরা তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ওই যাজক। তাঁর দাবি, স্কুল, কলেজের কাছাকাছি আইসক্রিম বা কোল্ডড্রিঙ্কের দোকান দিচ্ছে তারা। সেই খাবারে মাদক মিশিয়ে বিক্রি করছে পড়ুয়াদের। এর পরে মাদকসক্ত পড়ুয়াদের মধ্যে থেকে বেছে বেছে জঙ্গি দলে নাম লেখানোর জন্য প্ররোচিত করছে।
জোসেফের এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ একাধিক রাজনৈতিক দল। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের এমন কোনও মন্তব্য করা ঠিক নয় যাতে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হয়।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, এই বিশপ তাঁর সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন এবং বিজেপি তাঁর এই বিভেদমূলক মন্তব্যকে সমর্থন করছে। তবে তার পরেও কেরলের বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, রাজ্যে প্রেম বা মাদকের ফাঁদে ফেলে ধর্মান্তরণ বাড়ছে এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সন্ত্রাসবাদ ও রাজ্যে দেদার মাদক ঢোকার মতো ঘটনার মধ্যে যে যোগাযাগ রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে কেরল সরকারের কাছে এ বিষয়ে তথ্য আসলেও তারা তা মানতে রাজি হচ্ছে না। এতে বিপদ আরও বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy