Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
U.S Election 2020

কুপোকাত হল বিভাজনের রাজনীতি, স্বস্তি

ট্রাম্পের উগ্র চিন বিদ্বেষ তাঁর উত্তরসূরি বাইডেনের মধ্যে না-দেখার সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছেন দীপেশবাবু।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২০ ০৫:১৮
Share: Save:

দিনটা চমৎকার ছিল! শনিবার শিকাগোর রাতে রবিবাসরীয় সকালের কলকাতায় ফোনে কথা বলছিলেন ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী। ‘‘শীতফিত নেই! ফুরফুরে হাঁটতে বেরোনোর মতো দিনেই মুক্তির স্বাদ এল’’, বললেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাঁর অনেক প্রবীণ সহকর্মীই আনন্দাশ্রুতে ভাসছেন! ‘যাক দেশটা বেঁচে গেল!’-মেসেজে হোয়াটসঅ্যাপ ভরপুর।

পেনসিলভেনিয়ায় ট্রাম্প বেকায়দায় খবরটা শুক্রবার নিউ ইয়র্কেই পেয়েছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসুও। কলকাতায় ফিরে রবিবার তিনিও বলছেন, ‘‘ক্যাম্পাসগুলোয় খুশির হাওয়া। অনলাইন ক্লাস চললে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের দেশে পাঠানোর হুমকি কেউ ভোলেনি।’’

ট্রাম্প প্রায় অর্ধেক ভোট পেলেও গাঢ় লাল থেকে নীল হওয়া কয়েকটি স্টেটে তিনি কুপোকাত। জর্জিয়ায় নজিরবিহীন ভাবে উদ্বুদ্ধ বিপুল কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার। একটু বেশি আশাবাদী শোনালেও বিভাজনের রাজনীতি কোথাওই সহজে পার পাবে না, এমন একটা সঙ্কেত খুঁজতে দুই প্রবীণ ইতিহাসবিদই আপত্তি করছেন না। দীপেশবাবুর কথায়, ‘‘আমার চারপাশে অনেকের কাছেই ট্রাম্প অসহ্য হয়ে উঠেছিলেন। তিনি না মানেন গণতন্ত্র, না মানেন বিজ্ঞান। করোনাতেও একগুঁয়ে। তেমনই মুখের ভাষা! মেয়েদের ছিটেফোঁটা সম্মান করেন না! মিথ্যে খবর রটিয়ে বিভ্রান্ত করেন।’’ দেশের জন্য বিপজ্জনক এমন প্রেসিডেন্টকে শান্তিপূর্ণ ভাবে সরানোটা খুব কম কথা নয় বলে মনে করেন তিনি! তাঁর মতে, ট্রাম্পের মতো নেতা পার পেলে খুব খারাপ বার্তা যেত। জাত্যভিমানী নেতারা সব দেশেই হয়তো সামান্য হুঁশিয়ার হবেন। সুগতবাবুও মনে করেন, ‘‘ট্রাম্পের ধাঁচের নেতা দ্বিতীয় বার সুযোগ পেলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতেন। তার ফল কী হতে পারে, সেটা ভারত দেখছে। সংখ্যাগুরুবাদের বিরোধী রাজনীতি যাঁরা করেন, যে কোনও দেশেই তাঁরা সাহস পাবেন।’’ দীপেশবাবুর অভিজ্ঞতা, শিকাগোর কাছেই বিজেপিপন্থী ভারতীয়েরা নতুন নাগরিকত্ব আইনের ব্যাখ্যা করতে আমেরিকানদের ‘তোমরা যেমন মেক্সিকান অনুপ্রবেশ নিয়ে চিন্তা করো’ বলে বোঝাচ্ছিলেন। এতেও পরিষ্কার দু’টি শিবিরের মিল। আবার অমিলও আছে। ‘‘আমেরিকায় জাত্যভিমানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী মূলত অল্পশিক্ষিত চাকরিহারা বা মধ্যবিত্ত শহরতলির শ্বেতাঙ্গ। ভারতে শিক্ষিতদের মধ্যেও জাত্যভিমান সংস্কৃতি প্রবল। তাই পরিস্থিতি কঠিনতর,’’ বললেন দীপেশবাবু।

‘‘তবে যা বুঝছি, আমেরিকাতেও ভারতীয়দের মধ্যে অনেকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। ‘হাউডি মোদী’ গোছের অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা বাদ দিলে বেশির ভাগই ডেমোক্র্যাটদের দিকে’’, বলছেন সুগতবাবু। ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট কমলা হ্যারিসও এই ভোটকে দারুণ প্রভাবিত করেছেন বলে সুগতর অভিমত। তাঁর কথায়, ‘‘অ-শ্বেতাঙ্গ সমর্থন পেতে বাইডেনের কমলাকে দরকার ছিল। প্রবীণ বাইডেনকে কমলা তাঁর আগেকার কিছু শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যকামী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সমালোচনাও করেছিলেন। বাইডেন-কমলারা আশা করব, সবাইকে নিয়েই চলবেন। রিপাবলিকানদেরও পুরনো রাজনীতি বদলাতে হবে।’’

ট্রাম্পের উগ্র চিন বিদ্বেষ তাঁর উত্তরসূরি বাইডেনের মধ্যে না-দেখার সম্ভাবনাই প্রবল বলে মনে করছেন দীপেশবাবু। তবে তার মানেই ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার কিছু দেখছেন না। দু’জন ইতিহাসবিদই হাসছেন, ভোটের দিন বা ফল বেরোনোর দিন গোলমাল, ভাঙচুরের শঙ্কায় কিন্তু ভারতেরই ভোট-ছায়া। আমেরিকা আবার উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াই, কোভিড-যুদ্ধ বা উদ্বাস্তু সমস্যার বিরুদ্ধে প্রথম সারিতে থেকে লড়ুক, এটাও চেয়েছিলেন ট্রাম্পে বীতশ্রদ্ধ বহু আমেরিকান। ‘‘নতুন করে শুরু তো বটে’’, রাজপথের উচ্ছ্বাসের রঙে ওবামার প্রথম বার জয়ের দিনটিকেও দীপেশবাবুর মনে পড়ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy