Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

‘দাদাগিরি’ শাহের, ইন্ধন নয়া জল্পনায়

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুম্বইয়ে সোমবার সৌরভকেই সরাসরি প্রশ্ন করা হয়—শাহের সঙ্গে আপনার বৈঠক হয়েছে, আপনি কি বাংলায় বিজেপির হয়ে প্রচার করবেন?

অমিত শাহ।

অমিত শাহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

দাদা হলেন রাজা। এল ‘দিদির’ শুভেচ্ছা। দাদাও ধন্যবাদ জানালেন। তবুও দিনভর প্রশ্ন ঘুরপাক খেল, দাদা কি বাংলায় বিজেপির মুখ হচ্ছেন? সেটিই কি অমিত শাহের কৌশল?

ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মুম্বইয়ে সোমবার সৌরভকেই সরাসরি প্রশ্ন করা হয়—শাহের সঙ্গে আপনার বৈঠক হয়েছে, আপনি কি বাংলায় বিজেপির হয়ে প্রচার করবেন? সৌরভের সাফ জবাব, ‘‘না, না। এমন কিছুই নয়। আমাকে এই বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি।’’ একই প্রশ্ন করা হয় বিজেপি সভাপতিকেও। সৌরভের সঙ্গে কোনও ‘ডিল’ হয়েছে? বাংলায় বিজেপির মুখ হচ্ছেন সৌরভ? অমিতেরও উত্তর: ‘‘সৌরভের সঙ্গে কোনও ‘ডিল’ই হয়নি। এমন কথা বলা হলে সেটা সৌরভের জন্য অপপ্রচার।’’ কিন্তু ভবিষ্যতে যদি সৌরভ বিজেপিতে আসেন? বিজেপি সভাপতির বক্তব্য, ‘‘ভারতের যে কোনও নাগরিককেই বিজেপিতে স্বাগত।’’

তবু জল্পনা থামছে না। সৌরভ যেমন বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, তেমনই অমিত-পুত্র জয় হচ্ছেন সচিব আর বিজেপিরই মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের ভাই অরুণ হচ্ছেন কোষাধ্যক্ষ। নতুন দায়িত্বের জন্য সৌরভকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘সৌরভ এই দায়িত্ব পাওয়ায় নিশ্চয়ই গর্বিত। তবে এ জন্য তাঁকে যদি কারও সঙ্গে বৈঠক করতে হয়, তা একই সঙ্গে দুঃখ ও হতাশার। ক্রিকেটার হিসেবেই তিনি এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য। অন্য কোনও সুপারিশের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।’’

দিল্লিতে বসে লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীও বলেছেন, ‘‘সৌরভ আইডল। বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হওয়ায় ক্রিকেটেরই সুবিধা হবে। কিন্তু হঠাৎ সৌরভকে বিসিসিআই প্রধান এবং অমিত শাহের ছেলেকে বড় পদ! কী রকম, কী রকম লাগছে। অনেকে ভাবতে পারেন, সৌরভকে বিজেপি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরবে। সৌরভকেই সেটি ঠিক করতে হবে।’’ কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘বাঙালির জয়জয়কারের দিন। সৌরভ ক্রিকেটার হিসেবেই এই দায়িত্বের জন্য যোগ্য। কারও দয়ার কিছু নেই। তবে বোর্ডের সচিব পদে যিনি এসেছেন, কোনও দিন তিনি ক্রিকেট খেলেছেন কি না সন্দেহ থাকলেও অল্প সময়ে আয় বাড়ানোর ব্যাপারে অনেকগুলো সেঞ্চুরি করেছেন! আশা করি, সৌরভ সব সামলেই যোগ্যতার পরিচয় দেবেন। বাকিটা ভবিষ্যৎ বলবে।’’ সৌরভকে ফোন করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য।

বিজেপির একাংশও বলছে, ‘মুখে অমিত শাহ-সৌরভ যাই বলুন, বাংলায় ভোটের আগে দাদাকে তুলে ধরলে বিজেপির হারা মুশকিল। তবে সৌরভ তখনই রাজি হবেন, যখন তিনি ১০০% নিশ্চিত হবেন বিজেপিই ক্ষমতায় আসছে। এর আগেও সৌরভকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শুধু বিজেপি-ই নয়, অন্য দলও চেষ্টা করেছে। কিন্তু সৌরভ রাজি হননি। তিনি সব দলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখেন।’’

রাজনীতির প্রসঙ্গে না গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সৌরভকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। খেলোয়াড় জীবনে যেমন করেছেন, তেমন ক্রিকেট প্রশাসনেও তিনি দাদাগিরি করুন।’’ সৌরভকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়ও। বিজেপির সাংস্কৃতিক শাখার আহ্বায়ক, অভিনেতা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সামাজিক মাধ্যমে সৌরভের নাম না করে লিখেছেন, বাম আমলে সিপিএমের কাছ থেকে এবং তৃণমূল আমলে তৃণমূলের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন তিনি। এ বার বিজেপির পালা!

‘দিদি’ মমতা এ দিন টুইটে বলেছেন, ‘আপনি ভারত ও বাংলাকে গর্বিত করেছেন। সিএবি’র সভাপতি হিসেবেও আপনার কাজে আমরা গর্বিত। আগামী ইনিংসের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’ মুম্বইয়ে দিদির শুভেচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ‘দাদা’ও মুচকি হেসে বলেন, ‘‘মমতা দিদিকে ধন্যবাদ শুভেচ্ছার জন্য!’’ বিজেপির একটি শিবির অবশ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বিরোধীরা শাহকে বাংলার ‘বাইরের লোক’ বলে কটাক্ষ করে। শাহ ‘দাদা’কে শীর্ষে বসিয়ে বাঙালি আবেগকে উস্কে দিলেন। নিজের ছেলের ঊর্ধ্বে রাখলেন দাদাকে। দিনভর সৌরভকে নিয়ে মাতামাতিতে শাহের বিরুদ্ধে ‘পরিবারতন্ত্র’-এর বিতর্কও ধামাচাপা পড়ল বলে ওই শিবিরের দাবি।

কারাবন্দি পি চিদম্বরমের পুত্র কার্তি অবশ্য জয়কে কটাক্ষ করে টুইটে লিখেছেন, ‘‘ইউপিএ আমলে আমার বাবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় আমি বিসিসিআই সচিব হলে জাতীয়তাবাদী ভক্তরা কী বলতেন?’’ এর জবাব দিয়েছেন বিসিসিআই-এর প্রাক্তন সদস্য রাজীব শুক্লই। যিনি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার শিবিরের ‘লোক’ বলে পরিচিত। রাজীবই আজ সৌরভের নাম ঘোষণা করেন। আর কার্তির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘‘জয় শাহ নয় বছর ধরে ক্রিকেট প্রশাসকের ভূমিকায়। আমদাবাদে সব চেয়ে বড় স্টেডিয়াম তৈরি করছেন। কার ছেলে বড় কথা নয়। ক্রিকেটে কোনও রাজনীতি নেই।’’

এই গোটাটাই কি শাহের মাস্টারস্ট্রোক? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে বলছেন, অরুণ জেটলির প্রয়াণের পর ক্রিকেট এখন শাহেরই দখলে। সৌরভের সঙ্গে নিজের বাড়িতে গত শনিবার বৈঠক করে চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনিই। অনুরাগকে দিয়েছেন গোটা বিষয়টি মসৃণ ভাবে মেটানোর দায়িত্ব। সৌরভের আড়ালে ছেলেকেও নিয়ে এলেন। আবার সৌরভকে সামনে রেখে বাংলার রাজনীতির সলতেও পাকালেন। শাহ অবশ্য বলছেন, ‘‘বাংলায় মুখ ছাড়াই ১৮ আসন জিতেছি। বিধানসভায় দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতব। তাই ব’লে বলছি না, মুখ দরকার নেই!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah BCCI Sourav Ganguly BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy