মনোহর লাল খট্টর। —ফাইল ছবি।
‘‘নরেন্দ্র মোদী ও মনোহর লাল খট্টর খুব বন্ধু ছিলেন। দু’জনেই ছিলেন আরএসএসের প্রচারক। মোদীজি হরিয়ানায় এলে খট্টরের মোটর বাইকের পিছনে বসেই ঘুরে বেড়াতেন। এমনই ছিল দু’জনের বন্ধুত্ব’’—কারনালের বিজেপি জেলা সদর দফতরে বসে গল্প শোনাচ্ছিলেন দলের প্রবীণ নেতা।
সেই বন্ধুত্ব কি এখনও অটুট?
হরিয়ানায় বিজেপির প্রচারে অন্তত সেই বন্ধুত্বের ছাপ নেই। সাড়ে নয় বছর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মনোহর লাল খট্টর। গত মার্চে তাঁকে আচমকাই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে নায়ব সিংহ সাইনিকে হরিয়ানার বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। খট্টরকে কারনাল থেকে লোকসভায় প্রার্থী করা হয়েছিল। তার পরে তিনি কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিদ্যুৎ ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী হয়েছেন। অথচ খট্টরের গড়, তাঁর সংসদীয় এলাকা কারনালে বিজেপির কোনও হোর্ডিংয়ে তাঁর ছবি মিলবে না! হোর্ডিংয়ে শুধুই ছয় মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নায়ব সিংহ সাইনি। তাঁর পাশে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ, জে পি নড্ডাদের ছবি রয়েছে। মোদীর পুরনো বন্ধু খট্টর অদৃশ্য!
কারনাল থেকে চলে আসুন কুরুক্ষেত্রে। হরিয়ানার এই কুরুক্ষেত্রেই কুরু-পাণ্ডবে যুদ্ধ হয়েছিল বলে মানুষের বিশ্বাস। এই কুরুক্ষেত্রের লাডয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী সাইনি। সেখানেও খট্টর নেই। তিনি ভোটের প্রচারে জনসভায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু তাঁকে বক্তৃতার সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল না। পরের দিকে তাঁকে বিজেপি জনসভা থেকেও দূরে রেখেছে। কেন? বিজেপি নেতাদের থেকে উত্তর মিলছে, খট্টর সরকারের কাজে মানুষের মধ্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল, তা কমাতেই তাঁকে প্রচার থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
কীসের এত রাগ মানুষের?
কুরুক্ষেত্র শহরের রোড় ধর্মশালার উঠোনে জাঠ কৃষকদের আড্ডায় তার উত্তর মিলল। হুঁকোয় টান দিয়ে সোহনলাল পহেলওয়ান বললেন, ‘‘খট্টর ‘পরিবার পহেচান পত্র’ চালু করেছিল। দু’বছরের নাতনির আয় দু’লক্ষ টাকা বলে কার্ডে লিখে দিয়েছে! এখন আর কোনও সরকারি সুবিধাই মিলছে না! খট্টর সম্পত্তির কার্ড চালু করেছিল। সেখানেও আমার সম্পত্তি জেঠার নামে লিখে দিয়েছে! পরিবারের একজন লোক সারা দিন কার্ড বানাতে আর তার ভুল শোধরাতেই ব্যস্ত!’’
শনিবার ৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় ভোটগ্রহণ। লোকসভা নির্বাচনের পরে হিন্দি বলয়ের প্রথম কোনও রাজ্যে বিধানসভা ভোট হচ্ছে। ছয় মাস আগে মনোহর লাল খট্টরের বদলে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে সাইনি তাঁর কেন্দ্র কারনাল থেকেই উপনির্বাচনে জিতে বিধানসভায় গিয়েছিলেন। অথচ এ বার বিধানসভা ভোটে সাইনি ফের কারনাল থেকে প্রার্থী হতে চাইলেও তাঁকে আর কারনালে দাঁড় করানো হয়নি। কারণ খট্টর নিজে তাঁর ঘনিষ্ঠ জগমোহন আনন্দকে কারনাল থেকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। তার উপরে খট্টরের উপরে অসন্তোষের জন্য কারনাল আর নিরাপদ আসন বলে বিজেপি মনে করছে না। তাই সাইনিকে কুরুক্ষেত্রে লড়তে পাঠানো হয়েছে। সেখানেও কি নিরাপদ হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী?
কুরুক্ষেত্রের ফসলের মান্ডিতে তেমন কোনও খবর নেই। মান্ডি জুড়ে থরে থরে বাসমতী চালের বস্তা পড়ে রয়েছে। কেনার লোক নেই। কুইন্টাল প্রতি ২৩২০ টাকা এমএসপি ঘোষণা হলেও বাজারে দাম মিলছে মাত্র ১৭০০ টাকা। চাষিদের মুখে রাগ-বিরক্তি। বিজেপি নেতারা শঙ্কিত— কৃষকদের এই অসন্তোষে খোদ মুখ্যমন্ত্রী সাইনি নিজেই না হেরে যান!
মনোহর লাল খট্টর হরিয়ানায় রাজনীতি করলেও আদতে পঞ্জাবি। নিজের পঞ্জাবি পরিচিতি মুছে ফেলতে ইদানিং আর খট্টর পদবী ব্যবহার করছেন না। তাতেও রাগ কমেনি অনেকেরই। খট্টরের বদলে ওবিসি নেতা সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করে হরিয়ানার ৩০ শতাংশ ওবিসি ভোটকে পাখির চোখ করছে বিজেপি। কিন্তু সাইনিকে খট্টরের ‘রাবার স্ট্যাম্প’ হিসেবেই দেখছে হরিয়ানা। কুরুক্ষেত্রের ব্রহ্মসরোবর ঘিরে থাকা বাজারে গুঞ্জন, হরিয়ানায় খট্টরই পিছন থেকে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। এই ধারণা দূর করতেই বিজেপি ভোটের প্রচার থেকে খট্টরকে স্রেফ ‘ভ্যানিশ’ করে দিয়েছে।
খট্টর এর প্রতিশোধ নেবেন না তো? কংগ্রেস নেতারা মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘শনিবার হরিয়ানায় ভোট পড়বে। ৮ অক্টোবর ফল প্রকাশ হবে। সে দিন খট্টর প্রমাণ করে দেবেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে তাঁর বন্ধু নরেন্দ্র মোদী ভুল করেছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy