বুলডোজ়ারের আঘাতে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বাড়ি। শনিবার অসমের নগাঁও জেলায়। ছবি: পিটিআই
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে শনিবার বিকালে অসমের বটদ্রবা থানা জ্বালিয়ে দিয়েছিল একদল জনতা৷ রবিবার সকালে থানা পোড়ানোর ঘটনায় ‘অভিযুক্ত’দের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিল পুলিশ৷ বাদ যায়নি পুলিশের হেফাজতে মৃত সফিফুল ইসলামের বাড়িঘরও৷
পুলিশের স্পেশাল ডিজি জিপি সিংহ রবিবার বটদ্রবায় গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন৷ তাঁর দাবি, থানায় আগুন দেওয়া, নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলা মোটেও ক্ষোভের তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ নয়৷ এ আসলে সুযোগ বুঝে কিছু দুষ্কৃতীর ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড৷ তিনি এর পেছনে জেহাদি যোগ কয়েছে বলেও দাবি তাঁর। বলেন, তদন্তের সময় এই জায়গায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে৷ স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গড়ে এর তদন্ত চালানোর কথা ঘোষণা করেন সিংহ৷
শনিবারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে৷ আরও ১৪-১৫ জন এখনও থানায় আটক৷ জেহাদি বা কোনও জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে অভিযুক্তদের সম্পর্কের তথ্য মিললে তাদের বিরুদ্ধে নতুন ধারা যুক্ত হবে বলে আগাম জানিয়ে রাখেন জিপি সিংহ৷
এ দিকে, অভিযুক্তদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার সমালোচনায় সরব কংগ্রেস৷ সাংসদ আব্দুল খালেক বলেন, থানা পোড়ানোর ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়৷ একই ভাবে অভিযুক্তদের বাড়িঘরে বুলডোজার চালানো মানবাধিকারের প্রত্যক্ষ লঙ্ঘন৷ বটদ্রবার কংগ্রেস বিধায়ক শিবামণি বরাও একই সুরে বাড়ি ভাঙার নিন্দা করেন৷ তৃণমূল নেতা অভিজিৎ মজুমদার বলেন, ঘটনার পিছনে তৃতীয় শক্তির হাত রয়েছে বলে এখন পুলিশ দাবি করছে। কিন্তু তারা এ ভাবে জড়ো হয়ে, এতক্ষণ ধরে থানা ধ্বংস করেছে, এটা তাৎক্ষণিক ঘটনা হতে পারে না। এই ঘটনা গোয়েন্দা ও পুলিশ বিভাগের বড় ব্যর্থতা। তাই ডিজিপির পদত্যাগ করা উচিত। আর থানায় আগুন লাগানো হয়েছে বলে পুলিশ যে ভাবে পরের দিন অভিযুক্তদের ও লকআপে মৃত যুবকের বাড়ি বুলডোজারে ভেঙেছে, সেটাও প্রতিশোধপরায়ণতার নমুনা। এতে পুলিশ ও অপরাধীর ফারাক থাকছে না।
স্পেশাল ডিজিপি বলেন, ধিংয়ের ওই এলাকায় বসবাসকারী কারও জমির পাট্টা নেই৷ দুই-চার জন পাট্টা দেখাতে পারলেও সেগুলি জাল৷ বেআইনি ভাবে জমি দখল করে এরা ওখানে নানা ধরনের অবৈধ কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে৷ শনিবারের ঘটনাও এরই ফসল৷ পুলিশ নগাঁও জেলা প্রশাসনকে এ ব্যাপারে জানালে তারাই উচ্ছেদের নির্দেশ জারি করে৷ পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিজিপি জানান, বটদ্রবা থানার ওসি কুমুদ গগৈকে সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ বাকি অফিসার-কর্মীরাও ক্লোজড হয়েছেন৷ চিরঞ্জিৎ লাহনকে নতুন ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া, ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসার এই ঘটনার তদন্ত করবেন৷
ডিজিপি এ কথা বললেও রাজ্যের পুলিশপ্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত পুলিশ হেফাজতে সফিকুলের মৃত্যূর অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তাঁর বক্তব্য, মদ খেয়ে হইচই করছিল মৎস্য ব্যবসায়ী সফিকুল৷ গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার রাতে বটদ্রবা পুলিশ তাকে থানায় তুলে আনে৷ পর দিন সকালে তার স্ত্রীকে ডেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ তখন স্ত্রীই তাকে কিছু খাওয়ানোর সময় সমস্যা দেখা দেয়৷ তাকে তখন পরপর দুই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ কিন্তু ৩৯ বছর বয়সী সফিকুল নগাঁও হাসপাতালে মারা যায়। সফিকুলের স্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ হেফাজতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর স্বামীর৷ জামিনের জন্য তার কাছে টাকা দাবি করা হয়েছিল৷ তিনি ওই টাকা নিয়ে গিয়ে শোনেন, সফিকুলকে নগাঁও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে স্বামীকে মৃত দেখতে পান বলেই অভিযোগ সফিকুল-পত্নীর৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy