বিজেপির সাফল্যের নেপথ্যে কী রহস্য, তা খোলসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি ফেসবুক থেকে।
পরিশ্রম করলে তার ফল পাওয়া যায়। ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ড— উত্তর-পূর্বের এই তিন রাজ্যের ফল সেই পরিশ্রমেরই ফসল বলে ব্যাখ্যা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে দলের সদর দফতরে কর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘এই নির্বাচনে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছে বিজেপি।’’ আর এই আত্মবিশ্বাসে ভর করেই তাঁর সমালোচক এবং নিন্দকদেরও বিধেঁছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘কিছু কট্টর লোক বলছেন, মর যা মোদী (মরে যা মোদী)। আর দেশ বলছে, মৎ যা মোদী (চলে যাস না মোদী)।’’
পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। তৃতীয় বার দেশের মসনদে বসতে মরিয়া পদ্ম। সেই ভোটযুদ্ধের আগে চলতি বছরে উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে প্রথম পরীক্ষা ছিল বিজেপির। বিশেষ করে, নজরে ছিল ত্রিপুরা। আবার এই রাজ্যের কুর্সি দখল করেছে বিজেপি। নাগাল্যান্ডেও বিজেপি জোটই সরকার গড়ছে। তবে মেঘালয়ের ফল ত্রিশঙ্কু হলেও সরকার গড়তে প্রাক্তন শরিক বিজেপির সঙ্গে আবার জোট বাঁধতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এনপিপি-র (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি) প্রধান কনরাড সাংমা। এই পরিস্থিতিতে উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে বিজেপির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী মোদী।
জয়ের এই আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই নিন্দকদের বিঁধেছেন নমো। তিনি বলেন, ‘‘এমন একটা সময়ে কিছু লোক মোদীর কবর খোঁড়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেখানেই সুযোগ রয়েছে, সেখানেই পদ্মফুল ফুটেই চলেছে।’’ সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ নিয়ে বিতর্ক বাধে। ২০০২ সালে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে গোধরাকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার কথা তুলে ধরা হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। যা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ইউটিউব এবং টুইটারকে বিবিসি-র তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সমাজমাধ্যম থেকে তুলে নিতে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। একে ‘সেন্সরশিপ’ আখ্যা দেন বিরোধীরা। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল দেশে। সেই আবহে তিন রাজ্যের ফলে বিজেপির সাফল্যের কাহিনি তুলে ধরতে গিয়ে মোদীর এ হেন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার মোদী তাঁর ৩৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ভাষণের শুরুতেই বলেছেন, ‘‘সকলের কাছে একটা আর্জি রয়েছে। উত্তর-পূর্বের সমস্ত নাগরিকের সম্মানের জন্য মোবাইলের ফ্ল্যাশ আলো জ্বালিয়ে অভিনন্দন জানান।’’ মোদীর কথা শুনে বিজেপি কর্মীরা মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ আলো জ্বালান। এর পরই উত্তর-পূর্বের মানুষকে জয়ের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। উত্তর-পূর্ব তাঁর হৃদয় জুড়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘উত্তর-পূর্ব ভারত দিল্লির থেকে দূরে নেই। হৃদয়েরও দূরে নেই। ভোটে জেতার থেকেও হৃদয় জিতেছি, এটা বড় পাওয়া।’’ দিল্লি এবং অন্য এলাকার কর্মীদের তুলনায় উত্তর-পূর্বের বিজেপি কর্মীরা বেশি পরিশ্রম করেন বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এটা বিজেপি কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল। আজকের রায় ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ভরসা জুগিয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর মতে, অতীতে উত্তর-পূর্বের ফল নিয়ে বেশি চর্চা হত না। কিন্তু এখন সেই সময় পাল্টেছে।
বিজেপির সাফল্যের নেপথ্য কী রহস্য রয়েছে, তা-ও খোলসা করেছেন মোদী। তাঁর মতে, ‘‘শিবের যেমন ত্রিনয়ন রয়েছে, তেমন আমাদের কাছে রয়েছে ত্রিবেণী, তিন শক্তি। প্রথম শক্তি হল বিজেপি সরকারের কাজ। দ্বিতীয় শক্তি হল বিজেপি সরকারের কর্মসংস্কৃতি। তৃতীয় শক্তি হল বিজেপি কর্মীদের সেবাদান। তাঁদের সেবা, শ্রম, সমর্পণ অতুলনীয়। এই তিন শক্তি মিলেই বিজেপি এগিয়ে চলেছে।’’ তাঁর সরকার দেশের সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গেই রয়েছে এবং দেশকে উন্নয়নের এক নতুন মডেল উপহার দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিন রাজ্যের ফলাফল প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কংগ্রেসকেও বিঁধেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আগের সরকার কোনও কাজ করেনি। গরিবদের কথা ভাবেনি। শুধু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেছে। যার জন্য দেশ ভুগেছে।’’ ছোট রাজ্যকে কংগ্রেস বরাবর ঘৃণার চোখে দেখে এসেছে। তার জন্যই তাদের এখন এই ভরাডুবি। এই ঘৃণার কারণে আগামী দিনে ভোটেও কংগ্রেস ডুববে বলে বিঁধেছেন মোদী। বিজেপির জয়ের পর অনেক সময়ই বিরোধী নেতারা ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ করেন। এ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘এত টিভি দেখার সুযোগ পাই না। জানি না, ইভিএম নিয়ে কেউ দোষারোপ করছে কি না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy