প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
নিখাদ সরকারি অনুষ্ঠান। দেশ জুড়ে রেলের ৫০৮টি স্টেশনের আধুনিকীকরণের কাজ হবে। রেল স্টেশনগুলি নতুন করে তৈরি করা হবে। তার শিলান্যাস। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে আজ ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধীদের আক্রমণ করলেন। শিলান্যাস করতে গিয়ে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’-কে নিশানা করে আবার ‘কুইট ইন্ডিয়া’-র মন্ত্র আওড়ালেন। উন্নয়ন প্রকল্পের অনুষ্ঠানে বিরোধীদের আক্রমণ করে উল্টে তাঁদের বিরুদ্ধেই নেতিবাচক রাজনীতি করার অভিযোগ তুললেন।
রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে দেশের ৫০৮টি রেল স্টেশনের পুনর্নির্মাণের কাজের ভার্চুয়াল শিলান্যাস করেন। স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ থেকে শতবর্ষ পর্যন্ত সময়কে মোদী আগেই অমৃতকাল এবং কর্তব্যকাল নাম দিয়েছেন। এই স্টেশনগুলিকে আজ অমৃত রেল স্টেশন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদরা হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে বা বিভিন্ন স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সকলের সামনেই বিরোধীদের আক্রমণ করে মোদী বলেন, “কিছু ঘটনা দেখলে মনে দুঃখ হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের দেশের বিরোধীদের একটি অংশ পুরনো কায়দায় চলছে। তারা নিজেরা কিছু কাজ করবে না, কাউকে করতেও দেবে না। এই জেদ ধরে বসে রয়েছে। ভবিষ্যতের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে সংসদের আধুনিক ইমারত তৈরি হয়েছে। সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক। সরকার, বিরোধী সকলের প্রতিনিধিত্ব থাকে। বিরোধীরা তারও বিরোধ করেছে।” জবাবে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “দেশের সমস্যার সমাধানের বদলে প্রধানমন্ত্রী রোজ নিজের জন্য নতুন নতুন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান খোঁজেন। সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনীতি করেন। বিরোধীদের আক্রমণ করেন।” বিরোধী নেতাদের প্রশ্ন, নতুন সংসদ উদ্বোধনে মোদী রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ডাকেননি। তারই বিরোধিতা করা হয়েছিল। আর সংসদের প্রতি এত নিষ্ঠা থাকলে মোদী সেখানে মণিপুরের হিংসা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেন? কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ মাণিকম টেগোর বিরুদ্ধনগর স্টেশনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। মাণিকম বলেন, “আমরা তো ২০ জুলাই থেকে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ খোলার দাবি করছি। আজ বিরুদ্ধনগর রেল স্টেশনে এসে দেখি মোদীজি বক্তৃতা করছেন। আমরা লোকসভায় ওঁর জন্য অপেক্ষা করব।”
বিরোধী জোটের ‘ইন্ডিয়া’ নামকরণের পর থেকেই মোদী তাকে নিয়মিত আক্রমণ করছেন। ‘কুইট ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলেছেন। এদিন রেলের অনুষ্ঠানে মোদী ফের বলেছেন, “৯ অগস্ট আসছে। সেদিন ভারত ছাড়ো বা কুইট ইন্ডিয়া আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। এখন গোটা দেশ সমস্ত খারাপ বিষয়কে ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বলছে। চারদিকে একটাই গুঞ্জন। দুর্নীতি কুইট ইন্ডিয়া, দুর্নীতি ভারত ছাড়ো, পরিবারতন্ত্র কুইট ইন্ডিয়া, তোষণের রাজনীতি কুইট ইন্ডিয়া।” খড়্গে তার জবাবে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীরমুখে এখন ইন্ডিয়া সম্পর্কে কটু কথা শোনা যাচ্ছে। ওঁর রাজনৈতিক পূর্বসূরিরা ব্রিটিশ শাসকদের সাহায্য করেছিল, ‘কুইট ইন্ডিয়া’র বিরোধিতা করেছিল। গান্ধী হত্যার চক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। জাতীয় পতাকার বিরোধিতা করেছিল। সর্দার পটেল তার জন্য ওদের হুমকি দিয়েছিলেন। এখন আবার ওঁদের ‘কুইট ইন্ডিয়া’ মনে পড়েছে। এটাই আমাদের সাফল্য।”
শুধু জোট নয়, আজ মোদী আলাদা করে কংগ্রেসেরও সমালোচনা করেন, তবে নাম না করে। তিনি বলেন, ‘‘ওরা ৭০ বছরে সেনার শহিদদের জন্য ওয়ার মেমোরিয়াল তৈরি করেনি। এখন হলে সেটার সমালোচনা করেছে। কর্তব্যপথের বিরোধিতা করেছে। সর্দার বল্লভভাই পটেল স্ট্যাচু অব ইউনিটি বিশ্বের সবথেকে বড় মূর্তি। কিছু রাজনৈতিক দলভোটের সময় সর্দারকে স্মরণ করলেও তাঁদের কোনও বড় নেতা ওখানে গিয়ে মূর্তি দর্শন বা প্রণাম করেননি।’’ সরকারি অনুষ্ঠানে এই ভাবে রাজনীতির কথা টেনে আনার পরেও মোদী দাবি করেন, “আমরা উন্নয়নের ইতিবাচক রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই নেতিবাচক রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ইতিবাচক রাজনীতিরপথে হাঁটছি।”
বিরোধীদের প্রশ্ন, বালেশ্বরের রেল দুর্ঘটনায় ২৯৪ জন রেলযাত্রীর মৃত্যুর দু’মাস পরে রেলের অনুষ্ঠানে গিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন একটি শব্দও খরচ করলেন না? কংগ্রেস সভাপতি বলেন, “নরেন্দ্র মোদী গত দশ বছরে নিজেই শুধু নেতিবাচক রাজনীতি করেছেন। গত তিন মাসে মণিপুরের হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। বিভাজনকারী রাজনীতির ফলে গৃহযুদ্ধে ১৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হরিয়ানায় যেখানে কয়েক দশক কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসা হয়নি, সেখানে কী হচ্ছে, গোটা দেশ দেখছে। সঙ্ঘ পরিবার ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই বাধিয়েছে। গত দশ বছরে শুধু বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক অসাম্য, মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতা, দলিতদের উপরে অত্যাচার বেড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy