রামলালার মন্দিরে মোদীর প্রণাম। রবিবার। পিটিআই।
তিনি চলেছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর দেখানো পথে। তিনি চলেছেন সুভাষচন্দ্র বসুর দেখানো পথে। এর আগে নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার এমন সব দাবি করেছেন। আজ গুজরাতের ভোটের মুখে দীপাবলির আগের সন্ধ্যায় অযোধ্যায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী দাবি করলেন, তিনি রামের দেখানো পথেও চলছেন।
প্রধানমন্ত্রীর মোদীর দাবি, যে ভাবনায় ভর করে রাম তাঁর রাজত্ব চালাতেন, প্রশাসন চালাতেন, সেই ভাবনাই তাঁর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রের অনুপ্রেরণা। তাঁর ‘সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’-এর আধার।
তিনি নিজে রামের পথে দেখানো চলছেন বলে দাবি করার পাশাপাশি আজ প্রধানমন্ত্রী নাম না করে কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, এত দিন বারাণসী থেকে অযোধ্যার মতো হিন্দু তীর্থস্থলগুলির অবহেলা হয়েছে। গুজরাত-হিমাচলের বিধানসভা ভোটের আগে বিরোধীরা একে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা করার চেষ্টা বলেই মনে করছে।
গত দু’সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর মন্দিরের নতুন করিডরের উদ্বোধন করেছেন। কেদারনাথ, বদ্রীনাথে গিয়েছেন। তার পরে রবিবার, দীপাবলির আগের সন্ধ্যায় অযোধ্যায় রাম মন্দিরের কাজ ঘুরে দেখেছেন। রামলালার মন্দিরে পুজো দিয়েছেন। রামের প্রতীকস্বরূপের রাজ্যাভিষেক করেছেন। সরযূর ঘাটে দীপোৎসবে যোগ দিয়েছেন। আরতিও করেছেন সরযূর ঘাটে। রামলীলা ও লেজ়ার শো দেখেছেন। তার পরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে সঙ্গে নিয়ে অভিযোগ করেছেন, আগে সরযূর ঘাটের দুর্দশা, বারাণসীর নোংরা গলি দেখলে তাঁর মন ভেঙে যেত। গত আট বছরে বারাণসী, অযোধ্যা, কেদারনাথ, মহাকালের মতো তীর্থস্থলের উন্নয়ন হয়েছে। এত দিন এই সব তীর্থস্থল অবহেলার শিকার ছিল।
কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, গুজরাতের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী এ সব বলে হিন্দু ভাবাবেগ উস্কে দিতে চাইছেন। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, টাকার পতনের সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে চাইছেন। এর পরে দীপাবলির দিনে সীমান্তে গিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে তিনি দেশপ্রেমের আবেগ উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। চিনের সেনা যে ভারতের জমি দখল করে রেখেছে, তা নিয়ে মুখ খুলবেন না।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে নরেন্দ্র মোদী স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লোগোতে গান্ধীর চশমাকে কাজে লাগিয়ে বা সাবরমতী আশ্রমে চরকায় সুতো কেটে বার বার দাবি করেছেন, তিনি গান্ধীর দেখানো পথে চলছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব নন, তিনিই গান্ধীর প্রকৃত উত্তরসূরি। গত মাসে ইন্ডিয়া গেটের সামনের ছত্রিতে সুভাষচন্দ্র বসুর ২৮ ফুট উঁচু মূর্তির আবরণ উন্মোচন করে মোদী বলেছিলেন, গত আট বছরে তাঁর সরকার যে সমস্ত কাজ করেছে, যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে সুভাষচন্দ্রের আদর্শ, স্বপ্নের ছাপ রয়েছে। ইন্ডিয়া গেট থেকে রাইসিনা হিল পর্যন্ত রাজপথের নাম বদলে ‘কর্তব্য পথ’ রেখেছিলেন তিনি। আজ তিনি রামের দেখানো পথেও চলছেন বলে দাবি করে মোদী ফের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের থেকে মৌলিক কর্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সওয়াল করেছেন। সেখানেও রামকেই হাতিয়ার করেছেন।
অযোধ্যায় মোদী বলেছেন, “রাম কর্তব্যের সজীব স্বরূপ। তিনি বনবাসে যাওয়া থেকে সব সময়েই নিজের কর্তব্য পালন করেছেন। রাম ভারতের সেই ভাবনার প্রতীক, যে ভাবনায় নিজের কর্তব্য পালন করলেই অধিকার স্বয়ংসিদ্ধ হয়ে যায়।” মোদী জমানায় বার বার সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী ক্রমাগত মৌলিক কর্তব্যকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। মূল সংবিধানে মৌলিক কর্তব্যের প্রসঙ্গ ছিল না। ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থার সময়ে সংবিধান সংশোধন করে মৌলিক কর্তব্যের বিষয় ঢোকানো হয়।
আজ প্রধানমন্ত্রীর যুক্তি, মূল সংবিধানের যে পৃষ্ঠায় মৌলিক অধিকারের কথা রয়েছে, সেই পৃষ্ঠাতেই রাম, সীতা, লক্ষ্মণের ছবি আঁকা রয়েছে, যা একই সঙ্গে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা ও নাগরিকদের কর্তব্যের সাংস্কৃতিক বোধকে তুলে ধরে। গত ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী আগামী পঁচিশ বছরের জন্য নাগরিকদের ‘পঞ্চ পণ’ বা পাঁচটি সঙ্কল্প করতে বলেছিলেন। তার মধ্যেই নাগরিকদের কর্তব্য পালনের কথা ছিল। মোদীর দাবি, রামের আদর্শ মেনেই তাঁর পঞ্চ পণের ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy