‘অপারেশন গঙ্গা’-য় ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরা ভারতীয়রা।গাজিয়াবাদ বিমানবন্দরে। ছবি— পিটিআই।
প্রশ্ন অনেক—
প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে, নিজের চেষ্টায় যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে অন্য দেশে চলে আসার পরে বিমানে চাপিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা কী ধরনের উদ্ধার অভিযান?
যেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখানে মোদী সরকার বা ভারতীয় দূতাবাসের কোনও সাহায্য মিলছে না কেন?
অন্য যে কোনও দেশ থেকে তো এমনিই বিমানের টিকিট কেটে চলে আসা যায়। তার জন্য মোদী সরকারের কী দরকার?
যে সব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে না, সেখান থেকে ছাত্রদের বিমানে চাপিয়ে নিয়ে এসে সেটা কেন বড় করে দেখানো হচ্ছে?
কেন রাশিয়া-ইউক্রেনের সঙ্গে কথা বলে খারকিভ, সুমির মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর থেকে সরাসরি ভারতীয়দের বিমানে উদ্ধার করা হচ্ছে না?
ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে দিল্লিতে একের পর এক বিমান নামছে। আর নেমেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। এক সুরে তাঁদের বক্তব্য, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে নাগরিকদের উদ্ধার করে আনাকেই উদ্ধার অভিযান বলে। বাস্তবে ইউক্রেনে, যেখানে যুদ্ধ হচ্ছে, সেখানে ভারত সরকারের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। পড়ুয়াদের নিজের ভরসায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের উচিত ছিল, ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে পথ দেখিয়ে ভারতীয়দের বার করে আনা। তা হয়নি। যে ভাবে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ থেকে পড়ুয়াদের বিমানে চাপিয়ে নিয়ে আসাকে বড় করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে, সেটা উচিত নয়। বিরোধীরা বলছেন, ইউক্রেনে থাকা ভারতীয়দের দেশে ফেরাতে ‘অপারেশন গঙ্গা’ নিয়ে মোদী সরকার প্রচারে নেমেছিল। পড়ুয়ারাই সেই প্রচারের বেলুন ফুটো করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা ফেরত আসা পড়ুয়াদের হাতে গোলাপ ফুল তুলে দিচ্ছেন। পড়ুয়ারা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, এখন হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে কী হবে? ইউক্রেনে আটকে থাকার সময় সাহায্যের দরকার ছিল। তখন তো ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরা কেউ ফোনও ধরেননি।
আজ বারাণসীতে ইউক্রেন থেকে ফেরা উত্তরপ্রদেশের কিছু পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী তাঁদের বলেন, “কারও রাগ হলে, কোনও পড়ুয়ার বাবা-মায়ের রাগ হলে, আমার উপরেও কেউ ক্ষুব্ধ হলে সেটা স্বাভাবিক। কারণ যে ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে, তাতে ক্ষোভ ন্যায্য।” মোদীর অবশ্য বিশ্বাস, পড়ুয়া, তাঁদের বাবা-মায়ের মন শান্ত হলে তাঁরা বুঝতে পারবেন। তখন তাঁদের থেকেই ভালবাসা মিলবে।
আজও মোদী সরকারের মন্ত্রীরা দেশে ফেরা পড়ুয়াদের অভ্যর্থনা জানিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর জন্যই তাঁদের উদ্ধার করে আনা সম্ভব হল বোঝাচ্ছেন। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বায়ুসেনার বিমানে পড়ুয়াদের ফেরত আনার পরে দেখা গিয়েছে, মন্ত্রীরা ‘ভারত মাতা কি জয়’ বলে স্লোগান তুললে বিমানে বসে থাকা পড়ুয়ারা জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। কিন্তু ‘মাননীয় মোদীজি কি জয়’ বলে জয়ধ্বনি দিলে সিংহভাগ পড়ুয়াই মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, ভারত সরকারের তরফে তাঁদের শুধু বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের পশ্চিমে কোনও না কোনও সীমান্তে পৌঁছে যেতে। তাঁরা নিজেরাই ট্রেনে, বাসে, পায়ে হেঁটে প্রবল ঠান্ডার মধ্যে সীমান্তে পৌঁছেছেন। যখন তখন ক্ষেপণাস্ত্র, গোলা বর্ষণ হচ্ছে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার হেঁটে স্টেশনে পৌঁছলেও ভারতীয় বলে ট্রেনে উঠতে দেওয়া হয়নি। সীমান্তে পৌঁছলে ইউক্রেনের পুলিশ, সেনার হাতে মারধর খেতে হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের ফোন করে সাড়া মেলেনি। সাড়া মিললেও সাহায্য মেলেনি। টানা এক দিন, দু’দিন অপেক্ষার পরে সীমান্ত পার করতে পেরেছেন। তার পরে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের দেখা মিলেছে। পড়ুয়াদের অভিযোগ, ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিতে মন্ত্রীদের পাঠানো হয়েছে শুধুমাত্র প্রচারের ঢাক পেটাতে।
আজ রোমানিয়াতে কেন্দ্রীয় বিমানমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এই ‘প্রচারের ঢাক’ পেটাতে গিয়েই পড়ুয়াদের অস্বস্তিরমুখে পড়েছেন। দিল্লিতে নিয়ে আসার আগে ইউক্রেন থেকে পৌঁছনো পড়ুয়াদের রোমানিয়ার একটি শহরে আশ্রয়ের বন্দোবস্ত হয়েছে। সেখানে সিন্ধিয়া বোঝাতে যান, ভারত সরকারই সমস্ত বন্দোবস্ত করেছে। সঙ্গে সঙ্গে শহরের মেয়র সিন্ধিয়ার মুখের উপরে বলেন, থাকার জায়গা, খাবারের বন্দোবস্ত তাঁরা করেছেন। পড়ুয়াদের কী ভাবে ফেরানো হবে, দিল্লির মন্ত্রী বরং সেটা বলুন। সিন্ধিয়া প্রথমে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করলেও শেষে বাধ্য হয়ে রোমানিয়া প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
আজ দিল্লিতে পৌঁছনো এক পড়ুয়া জানান, মোদী সরকার বলছে, ক্ষমতা বেড়েছে বলেই ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। ক্ষমতা থাকলে খারকিভ, সুমির মতো শহরে বায়ুসেনার বিমান নিয়ে গিয়ে ভারতীয়দের উদ্ধার করা হোক। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদের সেখানে থাকার দরকার ছিল। যে সব দেশে যুদ্ধ হচ্ছে না, সেখান থেকে নিখরচায় বিমানে চাপিয়ে আনার মধ্যে কৃতিত্ব নেই। এক ছাত্রী বলেন, “কেউ বিমানের ফ্রি টিকিট চায়নি। সবাই ইউক্রেনের মধ্যে সাহায্য চেয়েছিল। সেটাই মেলেনি।” কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর মন্তব্য, নাগরিকদের উদ্ধার করাটা সরকারের কর্তব্য, আনুকূল্য নয়।
আজ প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে দেশে ফেরা পড়ুয়াদের সামনে পুরনো কংগ্রেস সরকারের দিকেই আঙুল তুলে বলেছেন, অতীতে মেডিক্যাল শিক্ষা নীতি সঠিক হলে কাউকে বাইরে পড়তে যেতে হত না। এখন তাঁর সরকার নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করছে। গত সত্তর বছরে যত ডাক্তার তৈরি হয়েছে, আগামী দশ বছরে তত ডাক্তার তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল কার্টুন টুইট করে দেখিয়েছেন, অপারেশন গঙ্গা-য় প্রধানমন্ত্রী জলে নেমে দু’হাত দিয়ে সেতু তৈরি করে ভারতীয়দের উদ্ধার করছেন। গয়ালকে ‘প্রোপাগান্ডা মন্ত্রী’ বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy