মঙ্গলবার গুজরাটের জামনগরে বন্যপ্রাণী উদ্ধার, পুনর্বাসন এবং সংরক্ষণকেন্দ্র ‘বনতারা’র উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানীর তৈরি এই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকেন্দ্র ঘুরেও দেখেন তিনি। বর্তমানে এই বন্যপ্রাণ সংরক্ষণকেন্দ্রে ২,০০০-এর বেশি প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। দেড় লক্ষেরও বেশি উদ্ধার হওয়া, বিপন্ন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের আশ্রয়স্থল এই ‘বনতারা’। এই উদ্যোগের মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন অম্বানীপুত্র অনন্ত এবং তাঁর সহযোগীরা।

‘বনতারা’ পরিদর্শনের সময়ে সেখানে বন্যপ্রাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। পরিদর্শন করেন সেখানকার পশু চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিও। এই প্রাণী সংরক্ষণকেন্দ্রে পশুদের এমআরআই, সিটি স্ক্যান, আইসিইউ-সহ আরও অন্য সুবিধা রয়েছে। সেগুলিও ঘুরে দেখেন তিনি। জামনগরের এই ‘বনতারা’ শুধু পশুদের আশ্রয়স্থলই নয়, এখানে রয়েছে প্রাণীদের চিকিৎসার বিভিন্ন সুব্যবস্থা। বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসার জন্য এখানে রয়েছে অ্যানেস্থেসিয়া, কার্ডিয়োলজি, নেফ্রোলজি, এন্ডোস্কোপি, ডেন্টিস্ট্রি, ইন্টারনাল মেডিসিন-সহ বিভিন্ন পৃথক বিভাগ। মঙ্গলবার ‘বনতারা’ পরিদর্শনের সময়ে প্রতিটি বিভাগের কাজ নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন মোদী।
‘বনতারা’ উদ্বোধনের পরে সেখানে সিংহশাবকদের দুধ খাওয়াতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। কখনও আবার তাদের সঙ্গে খেলতেও দেখা গিয়েছে মোদীকে। সেই ছবিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। জামনগরের এই সংরক্ষণকেন্দ্রে পুনর্বাসিত হওয়া প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে এশিয়াটিক সিংহশাবক, বিরল প্রজাতির সাদা সিংহশাবক, চিতাশাবক, ক্যারাকালশাবক (এক প্রজাতির বনবিড়াল)-সহ আরও অন্য প্রাণী। ‘বনতারা’তেই জন্ম নেওয়া এক সাদা সিংহশাবককে নিজে হাতে খাইয়েও দেন মোদী। এই সিংহশাবকের মা-কে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছিল প্রাণী সংরক্ষণকেন্দ্রে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীদের পুনর্বাসিত করা হয়েছে ‘বনতারা’য়। এক সময়ে ভারতে প্রচুর ক্যারাকাল দেখা যেত, কিন্তু এখন তা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এই প্রজাতির জন্য ‘বনতারা’য় একটি বিশেষ প্রজনন কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই উদ্যোগে ক্যারাকালদের খাঁচাবন্দি দশায় প্রজননের পরিবর্তে বন্য পরিবেশে ছেড়ে রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদী ‘বনতারা’য় এমআরআই কক্ষে গিয়ে একটি এশিয়াটিক সিংহের ‘এমআরআই’ পদ্ধতিও পর্যবেক্ষণ করেন। সেখানে প্রাণীদের অপারেশন থিয়েটারেও যান তিনি। ওই সময় সেখানে একটি চিতাবাঘের অস্ত্রোপচার চলছিল। পথ দুর্ঘটনা আহত ওই চিতাবাঘটিকে ‘বনতারা’য় আনা হয়েছিল। পাশাপাশি ‘বনতারা’য় এশিয়াটিক সিংহ, স্নো লেপার্ড, একশৃঙ্গ গণ্ডার-সহ বিভিন্ন প্রাণীদেরও সংরক্ষণ করা হয় এখানে। রয়েছে বিশাল আকৃতির অজগর, বিরল দুই মাথাযুক্ত সাপ, দুই মাথাযুক্ত কচ্ছপ, টাপির, জায়ান্ট ওটার, হরিণ, সীল, শিম্পাঞ্জি, জেব্রা, জলহস্তী, জিরাফ ইত্যাদিও। এই প্রতিটি প্রাণীর সঙ্গেই দীর্ঘক্ষণ সময় কাটিয়েছেন মোদী।
‘বনতারা’য় হাতিদের জন্য তৈরি একটি বিশেষ ‘জ্যাকুজ়ি’ (স্নানের ব্যবস্থা) পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। এখানে আর্থারাইটিস এবং পায়ের সমস্যায় আক্রান্ত হাতিদের চিকিৎসা করা হয়। তিনি হাতিদের জন্য নির্মিত বিশ্বের বৃহত্তম হাসপাতালটিও ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি, উদ্ধার হওয়া কিছু তোতাপাখিকে খোলা আকাশে মুক্ত করেন তিনি।