প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধনের ঠিক ন’দিনের মাথায় বাজেট অধিবেশন শুরু হল সংসদে। বুধবার দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই অধিবেশনে ঢোকার মুখে বক্তৃতা শুরু করলেন রাম নাম করে। সংসদে অধিবেশন শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তৃতা নতুন ঘটনা নয়। তবে মোদী সাধারণত তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন দেশবাসীকে ‘মিত্র’ বা ‘সাথী’ বা ‘পরিবারজন’ বলে সম্বোধন করে। এর মধ্যে পরিবারজন শব্দটি সাম্প্রতিক অতীতে ব্যবহার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বুধবার মোদী দেশবাসীর উদ্দেশে হাতজোড় করে বললেন, ‘রাম রাম’।
উত্তর ভারতের গো বলয়ে সৌজন্য বিনিময়ের এই রীতি অত্যন্ত প্রচলিত। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রের মোদী সরকারের শেষ অধিবেশনের আগে এবং রামমন্দির উদ্বোধনের পরে এই রাম রাম সম্বোধন নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে প্রশ্ন উঠেছে, মোদী কি জেনে বুঝেই সৌজন্য বদল করলেন? তিনি কি এটাই বোঝাতে চাইলেন, বিরোধীরা রামমন্দির নিয়ে তাঁকে যতই (ধর্ম থেকে শুরু করে নারীবিদ্বেষ) কটাক্ষ করুন, তিনি তার পরোয়া করছেন না!
জল্পনাটি আরও দৃঢ় হয়েছে মোদী শুরুতেই তাঁর সরকারের ‘নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার মনোভাব’কে সর্বসমক্ষে তুলে ধরায়। মোদী বলেছেন, ‘‘নতুন সংসদ ভবনে প্রথম যে অধিবেশন হয়েছিল, তার শেষে এই সংসদ একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত ছিল, লোকসভা, বিধানসভা এবং রাজ্যসভা আসনের এক তৃতীয়াংশ মহিলাদের জন্য সংরক্ষণ। তার পরে ২৬ জানুয়ারিও আমরা দেখেছি, কী ভাবে কর্তব্যপথে দেশের নারীশক্তি তাদের ক্ষমতায়নের প্রদর্শন করেছে। আর আজ যখন বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তখনও আমাদের পথ প্রদর্শন করছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং বৃহস্পতিবারও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করবেন। অর্থাৎ এ হল নারীশক্তির উৎসব।’’ ঠিক ন’দিন আগেই রামমন্দিরের উদ্বোধনের সন্ধ্যায় কেন্দ্রকে নারীবিদ্বেষী বলে কটাক্ষ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘ওরা শুধু জয় শ্রীরাম বলে কেন? জয় সিয়ারাম তো বলে না। সীতা ছাড়া কি রাম হয়? সীতার নাম কেন নাও না তোমরা? তবে কি তোমরা নারীবিদ্বেষী?’’ তবে কি মমতার সেই আক্রমণের জবাবই ন’ দিন পর বাজেট অধিবেশনের সূচনা বক্তৃতায় দিলেন প্রধানমন্ত্রী?
উত্তর ভারতের গোবলয়ে ‘রাম রাম’ সম্বোধনে সৌজন্য বিনিময় যেমন প্রচলিত। তেমনই জয় সিয়ারাম সম্বোধনেও সৌজন্য বিনিময় করেন অনেকে। সীতার নাম না করেই শুধু ‘রাম রাম’ সম্বোধনে কি তবে মোদী বুঝিয়ে দিলেন তিনি বিরোধীদের আক্রমণের পরোয়া করেন না!
তবে বাজেট অধিবেশনের বক্তৃতা এখানেই শেষ করেননি মোদী। বিরোধীদের উদ্দেশে আরও বার্তা দিয়েছেন।
লোকসভা ভোটের আগে এই বাজেট অধিবেশনই কেন্দ্রের মোদী সরকারের শেষ বাজেট অধিবেশন। তার আগে সংসদের দুই কক্ষ থেকে সাসপেন্ড হওয়া সমস্ত সাংসদের উপর থেকে সাসপেনশন তুলে নেওয়া হয়েছে। বুধবার বাজেট অধিবেশন শুরুর আগের বক্তৃতায়, সেই প্রসঙ্গেই বিরোধী দলের সাংসদদের বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিরোধী সাংসদদের তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই শেষ অধিবেশন ভোটের আগে সাংসদদের প্রায়শ্চিত্যের অধিবেশন। তাঁরা যেন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন।
মোদীর কথায়, ‘‘গত দশ বছরে বিরোধী সাংসদদের যাঁর যেমন রাস্তা পছন্দ হয়েছে, সেই ভাবে নিজের কাজ করেছেন। কিন্তু আমি মাননীয় সংসদদের বলব তাঁরা আত্মনিরীক্ষণ করুন। ভেবে দেখুন, এই দশ বছরে তাঁরা যা করেছেন, তা কি কেউ মনে রেখেছেন?’’
এর জবাবও অবশ্য মোদীই দিয়েছেন। বিরোধী সাংসদদের বলেছেন, ‘‘নিজের সংসদীয় ক্ষেত্রের মানুষজনকে প্রশ্ন করে দেখলে বুঝবেন, কারও কিছু মনে নেই। বিরোধীদের স্বর যতই ধারালো হোক, যতই তাঁদের আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক জোরদার হোক না কেন, অধিকাংশ মানুষ তাঁদেরই মনে রাখবেন, যাঁরা সংসদে গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। বিরোধিতা করলেও যাঁরা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবেন এবং দেশের কল্যাণের জন্য কথা বলবেন, তাঁদের দেশের মানুষ মনে রাখবেন। কিন্তু যাঁরা ইচ্ছাকৃত ভাবে দুষ্ট ব্যবহার করছেন, তাঁদের কেউ মনে রাখবে না। তাই এই শেষ অধিবেশনকে নিজেদের শুধরে নেওয়ার জন্য কাজে লাগান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy