প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
তিনি দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ‘অভিযান’ শুরু করেছেন। সে জন্যই তাঁর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যে অভিযোগ’ তোলা হচ্ছে বলে দাবি করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর যুক্তি, রাজনৈতিক দলের দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে তিনি পদক্ষেপ করছেন বলেই বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বাঁচাও অভিযান’ শুরু করেছে। মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলার জেরে সুরাতের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট রাহুল গান্ধীকে সাজা দেওয়ায় সাংসদ পদ খারিজের পরে কংগ্রেস একে ‘নরেন্দ্র মোদীর ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। আজ মোদী রাহুলের নাম না করে বিচার ব্যবস্থার দিকে আঙুল তোলা, আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ তুলেছেন।
মঙ্গলবার সকালে বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি সাংসদদের ‘কঠিন লড়াই’-এর জন্য তৈরি হতে বলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, বিজেপি যত সাফল্য পাবে, ততই বিজেপির উপরে হামলা হবে। তাই কঠিন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হতে হবে।
সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে নতুন তৈরি সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধনে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী নাম না করে রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, “দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ব্যবস্থা নিলেই তাদের নিশানা করা হচ্ছে। আদালত কোনও সিদ্ধান্ত নিলে বিচারবিভাগীয় প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।’’
কোনও অনুষ্ঠানেই অবশ্য মোদী শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে তাঁর ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে মুখ খোলেননি। তাঁর সরকারের নাকের ডগায় আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগে জেপিসি-তদন্তের দাবি নিয়েও নীরব থেকেছেন। বা তাঁর বিরুদ্ধে আদানিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগেরও জবাব দেননি।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিরুদ্ধে এখন প্রায় সব বিরোধী দল এককাট্টা। আদানি-কাণ্ডে বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদে সরব হচ্ছে। ১৪টি বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই-ইডিকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বিরোধীদের নিশানার মুখে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ তোলেন, দেশে এখন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত বাঁচাও অভিযান’ শুরু হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্তেরা এক মঞ্চে জড়ো হচ্ছেন। গোটা দেশ তা দেখছে। সব বুঝতেও পারছে।
রাহুল একাধিক বার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগের মতো গণতান্ত্রিক সংস্থা, সাংবিধানিক সংস্থা করায়ত্ত করার অভিযোগ তুলেছেন। মোদী পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, দেশ-বিদেশের ভারত-বিরোধী শক্তিগুলি এককাট্টা হয়ে ভারতের উন্নয়নে বাধা দিতে চাইছে। তাই গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে বদনাম করা, বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাহুলের সাংসদ পদ খারিজকে কংগ্রেস তথা বিরোধীরা গণতন্ত্রের উপরে হামলার তকমা দিয়েছে। মোদী জবাবে কংগ্রেসের আমলে জরুরি অবস্থা, শিখ-নিধনের কথা মনে করিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টে বিরোধীরা সিবিআই-ইডির অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে বলেছেন, মোদী জমানায় বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডির মামলা, তল্লাশি বেড়েছে। মোদী তা নিয়ে গর্ব করেই বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হচ্ছে বলেই তাঁর সরকারের নয় বছরে দুর্নীতি-বিরোধী আইনে দ্বিগুণ মামলা দায়ের হয়েছে। ১৫ গুণ বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইডি-র আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে ইউপিএ সরকারের ১০ বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। মোদী সরকারের নয় বছরে ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে ইডি। রাহুল ললিত মোদী, নীরব মোদীর সঙ্গে এক বন্ধনীতে নরেন্দ্র মোদীর নাম টেনে এনেছিলেন। মোদীর অভিযোগ, কংগ্রেসের আমলেই কিছু লোক ব্যাঙ্ক লুট করে পালিয়েছে। বিজেপি সরকার তাদের ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।
বিজেপি আগেই অভিযোগ তুলেছিল, রাহুল গান্ধী ওবিসি-দের অপমান করার জন্য আদালতে সাজা পেয়েছেন। বিজেপির ওবিসি মোর্চার সভাপতি কে লক্ষ্মণ ঘোষণা করেছেন, রাহুলের বিরুদ্ধে ওবিসি-দের অপমান ও উল্টো দিকে মোদী সরকারের ওবিসি-দের জন্য কর্মসূচিকে সামনে রেখে তাঁরা গ্রামে গ্রামে প্রচার করবেন। বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবস ৬ এপ্রিল থেকে বি আর অম্বেডকরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে। মোদী দলের সাংসদদের নিজের নিজের কেন্দ্রে সরকারের নয় বছরের কাজ নিয়ে প্রচারে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy