ছবি পিটিআই।
দেশে কী প্রতিক্রিয়া হল তা নিয়ে কোনও হেলদোল নেই, মূলত বাইরের চাপেই দিশাহারা বিজেপি নেতৃত্ব।
পয়গম্বর নিয়ে নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের পরে দলের সব মুখপাত্রের মুখে লাগাম পরিয়েছে বিজেপি। ফরমান জারি হয়েছে, নেতা থেকে মুখপাত্র— সকলকেই টেলিভিশনের পর্দায় মুখ দেখানো বন্ধ করতে হবে।
সেই নির্দেশ অবশ্য জানতেন না মিরাটের বিজেপি সাংসদ রাজেন্দ্র আগরওয়াল। দলীয় মুখপাত্র নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে কানপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে বক্তব্য রাখতে তিনি আজ বিকালে বসে পড়েছিলেন একটি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে। যা দেখেই চোখ কপালে ওঠে বিজেপির সদর দফতরে উপস্থিত নেতাদের। তড়িঘড়ি রাজেন্দ্রের ফোনে নির্দেশ যায়, ‘দ্রুত উঠে আসুন টিভি শো থেকে’। বিজেপি সূত্রের খবর, বিষয়টি যে ভাবে ভারতের ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক স্তরে কালিমালিপ্ত করেছে, তাতে ওই বিষয়ে ছোট-বড় সব পদাধিকারীকে মুখ খুলতে বারণ করেছে দল। আপাতত নীরবতাই বর্ম করে সময়ের সঙ্গে বিষয়টি থিতিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় বিজেপি নেতারা।
চুপ খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। গতকাল ও আজ বেশ কয়েকটি সরকারি অনুষ্ঠানে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেখানে ভারতের ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়ে একেবারেই ‘নীরব’ মোদী। মুসলিম দেশগুলি ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী কেন চুপ তা নিয়ে সরব বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর কথায়, ‘‘ঘরে ভাঙন ধরায় বর্হিবিশ্বের কাছেও দুর্বল হয়ে পড়েছে ভারত। বিজেপির লজ্জাজনক ধর্মান্ধতা আমাদের ভিতর থেকে দুর্বল করার সঙ্গে বর্হিবিশ্বেও ভাবমূর্তিকে ক্ষতি করেছে।’’ প্রশ্ন উঠেছে কেন মুখপাত্রদের বক্তব্য নিয়ে চুপ করে রয়েছেন মোদী-সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। নূপুরকে টুইটারে ফলো করেন নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথ সিংহ থেকে শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা। সাসপেন্ড হওয়ার পরেও তাঁকে ফলো করছেন তাঁরা। বিরোধীদের মতে নূপুরকে শাস্তি দেওয়াটা লোকদেখানো মাত্র। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের কথায়, ‘‘আমার কোনও সন্দেহ নেই, একে (নূপুর) ভবিষ্যতে আবার নতুন করে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়ে আসা হবে।’’
অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী তথা অধুনা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিন্হার প্রশ্ন, ‘‘দলের মুখপাত্রদের করা মন্তব্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত কোথায়? না কি প্রধানমন্ত্রী গোপনে তাঁদের সমর্থন করছেন!’’ বিজেপি নেতৃত্বের পাল্টা যুক্তি, সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে এমন কোনও আইন নেই। দল ইতিমধ্যেই দুই মুখপাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। দল যে সর্ব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কোনও ধর্মের পূজনীয় ব্যক্তিদের অপমানকে বিজেপি যে প্রশয় দেয় না সেই বিষয়টি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে। অবস্থান স্পষ্ট করতে বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, বিজেপিমুখপাত্রদের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার এক মত নয়। মুখপাত্রদের বক্তব্য তাঁদের একান্তই নিজস্ব। এ সব ওই দলের খুচরো লোকেদের (ফ্রিঞ্জ এলিমেন্ট) মতামত। তার সঙ্গে সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই।বিজেপি নেতৃত্ব ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করেছেন একের পর এক মুসলিম দেশ নূপুরের মন্তব্য নিয়ে সরব হওয়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে সরকার। কারণ, দল জানে, দেশের বৃহত্তর মুসলিম সমাজের কাছে এখনও অচ্ছুৎ বিজেপি। সুতরাং বিষয়টি যত ক্ষণ দেশের গণ্ডির মধ্যে ছিল, তত ক্ষণ ওই বিতর্ক থেকে আখেরে মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলেন বিজেপি নেতারা। তাই প্রথম দিকে নূপুরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, উল্টে ওই মুখপাত্র দাবি করেন, ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পরেও দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর পাশে রয়েছেন। সে জন্য দলীয় নেতৃত্বকে ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন নূপুর। কিন্তু মুসলিম দেশগুলি এক জোটে মুখ খোলায় দুই মুখপাত্রের থেকে দূরত্ব তৈরি করে নূপুরকে সাসপেন্ড ও আর এক মুখপাত্র নবীন জিন্দলকে বহিষ্কার করা হয়। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘ঘরোয়া সমালোচনায় বিজেপির বিন্দুমাত্র হেলদোল ছিল না। উল্টে প্রশয়ই দেওয়া হয়েছে। যখন আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচনা শুরু হল, তখন দুই মুখপাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে।’’
বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, মুখপাত্রদের শাস্তি দিলেই বিতর্ক থেমে যাবে। কিন্তু ওই মন্তব্যের জেরে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিস্থিতি যে এ ভাবে ঘোরালো হয়ে উঠবে তা ছিল তাঁদের কল্পনার অতীত। পরিস্থিতি সামলাতে আজ দ্রুত জাতীয় মুখপাত্রদের বৈঠকে ডেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নূপুর শর্মার পয়গম্বর সংক্রান্ত বিতর্কে কেউ মুখ খুলতে পারবেন না। একই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে রাজ্য স্তরের মুখপাত্রদের কাছেও। বিজেপি চাইছে, সময়ই ক্ষতে প্রলেপ দিক। কংগ্রেস নেতৃত্বের পাল্টা অভিযোগ, এই ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই বিজেপি সমাজে ঘৃণার বীজ বপন করছে। যার ফল এখন পাওয়া যাচ্ছে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কথায়, ‘‘বিজেপি এত দিন মন্দির-মসজিদ করেছে। শ্মশান-কবরস্থান, ৮০-২০ করেছে। তখন বারণ করা হয়নি। এখন ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মুখপাত্রদের বলি দিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দায় ঝাড়ছেন।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy