ছবি সংগৃহীত।
প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জওহরলাল নেহরুর সমালোচনা করে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামিকাল অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাসের ঠিক আগে একই সুরে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের চেষ্টায় তৎপর সঙ্ঘ পরিবার। বিষয়, মন্দির।
১৯৫২ সালে সোমনাথ মন্দিরের ধ্বংসস্তূপে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ প্রসঙ্গে নেহরুর আপত্তি এবং অসহযোগিতার অভিযোগে আজ সরব হয়েছে আরএসএস। সব মিলিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে নেহরুর মন্দির সংক্রান্ত মতাদর্শ নিয়েই। তাঁরই মন্ত্রিসভার সদস্য (পরবর্তীকালে জনসঙ্ঘের নেতা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) গুজরাতের কানহাইয়া লাল মুন্সির ‘পিলগ্রিমেজ টু ফ্রিডম’ বইটিকে সামনে নিয়ে এসেছেন আরএসএসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনমোহন বৈদ্য। বলেছেন, ‘‘নেহরুর ভারতীয়ত্ব ছিল ইউরোপের প্রিজমে চোখ রেখে দেখা। তুলনায় রাজেন্দ্র প্রসাদ অথবা সর্দার বল্লভভাই পটেলের মতো নেতারা ভগবদ্গীতা আদর্শ থেকে গড়তে চেয়েছেন সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের দর্শন। সেই প্রত্যয় থেকেই মন্দিরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন তাঁরা।’’
ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, নেহরুকে সে সময় অনেক দিকে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়েছে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার দেশে সরকার কোনও একটি বিশেষ মন্দির নির্মাণে টাকা ঢালবে, এটা ছিল তাঁর নাপসন্দ। পাশাপাশি সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের প্রাচীন ইতিহাসকে সামনে নিয়ে এসে সাম্প্রদায়িক আবেগে উস্কানি দিতে চাননি তিনি— এমনটাই মত ওই ইতিহাসবিদদের। কানহাইয়া লাল মুন্সির বইটিকে উদ্ধৃত করে নেহরু সম্পর্কে আরএসএস নেতার অভিযোগ মূলত তিনটি। এক, তিনি সোমনাথ মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা ঘিরে হওয়া উৎসবকে ‘হিন্দুত্বের পুনর্জাগরণ’ হিসেবে উল্লেখ করে সমালোচনা করেছিলেন। দুই, নেহরু তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদকে নিষেধ করেছিলেন ওই শিলান্যাসের পুজোয় উপস্থিত থাকতে। সেই নিষেধ না শুনেই রাষ্ট্রপতি সেখানে যান এবং বক্তৃতা দেন। আর সেই বক্তৃতাকেও নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন নেহরু। তিন, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে মন্দির নির্মাণে কোনও অর্থ তিনি দিতে চাননি।
তবে নেহরুর বক্তব্য ছিল, নদী বাঁধগুলিই হল আধুনিক ভারতের মন্দির। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তার অনেক বছর পরে বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ২০০১ সালে বেঙ্গালুরুতে একটি আইটি পার্ক উদ্বোধনে গিয়ে নেহরুর সুরেই বলেছিলেন, এ সবই হল নতুন ভারতের মন্দির।
ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, বিষয়টি নিয়ে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে সূত্রের মতে, ইতিহাসবিদদের একটি বড় অংশের বক্তব্য, নেহরু সে সময়ে রাজেন্দ্র প্রসাদকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে কোনও মন্দিরের শিলান্যাসে তাঁর যাওয়া একবারেই উচিত নয়। একজন ধর্মীয় উপাসক হিসেবে গেলে অন্য কথা। তবে শেষ পর্যন্ত রাজেন্দ্র প্রসাদ সেখানে যান এবং দীর্ঘ বক্তৃতাও দেন। কানহাইয়া লাল মুন্সিদের পক্ষ থেকে অর্থ জোগাড়ের জন্য যখন বিভিন্ন রাষ্ট্রে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে গিয়েছে, তখন নেহরু বিষয়টিতে বাধা দেন।
ইতিহাসবিদদের মতে, জওহরলালের বক্তব্য ছিল, একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার দেশে কোনও সরকার একটি বিশেষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে টাকা দিতে পারে না। তা ছাড়া, সে সময় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছিল সোমনাথের পুরনো মন্দিরের জায়গায় নতুন মন্দির গড়তে। পুরনো ধ্বংসস্তূপ সেখানেই সংরক্ষণ করার কথা ভাবা হয়েছিল। জওহরলালের আপত্তির এটিও একটি কারণ। কিন্তু সেই নিষেধ সেই সময় মানা হয়নি।
ইতিহাসবিদ তনিকা সরকারের বক্তব্য, নেহরু বাঁধের সঙ্গে মন্দিরের তুলনা করেছিলেন রূপকার্থে। তবে সোমনাথ মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠায় যেতে রাজেন্দ্র প্রসাদকে নিষেধ করার পিছনে তাঁর একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল। তনিকার কথায়, “সোমনাথ ধ্বংসের একটি সাম্প্রদায়িক স্মৃতি রয়েছে। সেখানে দেশের রাষ্ট্রপতি গিয়ে নতুন করে তার উদ্বোধন করলে বিষয়টিকে চাগিয়ে দেওয়া হয়। যা নেহরু চাইছিলেন না। তাঁকে অনেক দিক মাথায় রেখে চলতে হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy