Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
G20 Summit 2023

২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে জি২০-র ‘লাভ’ তোলা লক্ষ্য, নভেম্বরে আরও একটি সম্মেলন চান মোদী

এ বারের জি২০ বিশ্বে ভারতের বিস্তৃত এক আলেখ্য তৈরি করল। সূত্রের খবর, ‘বিশ্বগুরু’র এই ভাবমূর্তিকে বারবার সামনে নিয়ে আসবে এক দিকে মোদীর সরকার, অন্য দিকে বিজেপি।

মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফসা-সহ রাষ্ট্রনেতারা (বাঁ দিক থেকে)। রবিবার নয়াদিল্লিতে।

মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফসা-সহ রাষ্ট্রনেতারা (বাঁ দিক থেকে)। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪২
Share: Save:

বছরের শেষে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ‘সেমিফাইনাল’। আর তার পরেই ‘ফাইনাল’, অর্থাৎ ২০২৪-এর লোকসভা ভোট। তার আগে নভেম্বরের শেষে ভারতের নেতৃত্বে আরও একটি জি২০ সম্মেলন করার প্রস্তাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক শিবির বলছে, প্রস্তাবের আকারে কার্যত ঘোষণাই করলেন তিনি। জি২০-র শেষ বেলায় যা নিঃসন্দেহে বড় একটি চমক, যা মোদীর স্বভাবসিদ্ধ সাধারণ প্রথার বাইরের রাজনীতিরই আরও একটি নিদর্শন বলে মনে করা হচ্ছে।

আজ সকালে রাজঘাটে শ্রদ্ধাপর্ব সেরে ভারতমণ্ডপমে ফিরে সমাপ্তি বক্তৃতার মাঝে জি২০-র আগামী সভাপতি ব্রাজ়িলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার হাতে দায়িত্ব ভার তুলে দেন মোদী। তাঁকে আগাম অভিনন্দনও জানান। এই পর্যন্ত কোনও চমক নেই, গতানুগতিক এমনটাই হয়ে থাকে যে কোনও বহুপাক্ষিক বৈঠক শেষে। কিন্তু তিনি, নরেন্দ্র মোদী, সর্বদাই হাঁটতে পছন্দ করেন ছকের বাইরে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, তাঁর এই ছকভাঙা যাত্রার পিছনে আসলে থাকে একটি সুনির্দিষ্ট হিসাব কষা রাজনৈতিক ছক। যা তিনি কখনই সামনে আনেন না। মোড়ক থাকে কখনও জাতীয়তাবাদের, কখনও দেশপ্রেমের। এ ক্ষেত্রে বিশ্বকল্যাণের।

লুলার হাতে জি২০-র দায়িত্বভারের প্রতীক কাঠের হাতুড়িটি অর্পণ করে মোদী উপস্থিত উনিশ জন রাষ্ট্রনেতার উদ্দেশে বলেন, “আপনারা সকলেই জানেন, নভেম্বর পর্যন্ত জি২০ সভাপতিত্বের দায়িত্ব ভারতের হাতে রয়েছে। এখনও আড়াই মাস বাকি। এই দু’দিনে আপনারা সবাই অনেক বক্তব্য তুলে ধরেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অনেক প্রস্তাব রেখেছেন। আমাদের অগ্রগতি কী ভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, তা দেখার জন্য যে পরামর্শগুলি এসেছে, তা পর্যালোচনা করার দায়িত্ব আমাদের। আমি প্রস্তাব রাখছি যে, আমরা নভেম্বরের শেষে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আরেকটি ভার্চুয়াল অধিবেশন করব। সেই অধিবেশনে আমরা এই শীর্ষ সম্মেলনের সময় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি পর্যালোচনা করতে পারি। আমাদের টিম এই পর্যালোচনাগুলি বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সবার সঙ্গে ভাগ করে নেবে। আশা করি আপনারা সবাই এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।”

কূটনৈতিক শিবির বলছে, এই ঘটনা জি২০-র ক্ষেত্রে একান্তই বিরল। একই রাষ্ট্রের সভাপতিত্বে আট সপ্তাহের মধ্যে পর পর দু’টি শীর্ষ পর্যায়ের জি২০ অধিবেশন আগে কখনওই হয়নি। গত কাল দিল্লি ঘোষণাপত্রে সবার সই করিয়ে আসার পর টিম মোদী বারবার বলেছে, এ বারের জি২০ বিশ্বে ভারতের বিস্তৃত এক আলেখ্য তৈরি করল। সূত্রের খবর, ‘বিশ্বগুরু’র এই ভাবমূর্তিকে বারবার সামনে নিয়ে আসবে এক দিকে মোদীর সরকার, অন্য দিকে বিজেপি। বিভিন্ন জেলা, ব্লক, পঞ্চায়েতে যেখানে যে ভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরলে সংযোগে সুবিধা হয়, সে ভাবেই প্রাঞ্জল করে মোদীর বিশ্ব-আধিপত্যের গৌরব প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। বিজেপি শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, এখনও রাজ্যের ভোট হোক বা কেন্দ্র, মোদীর নামেই বিজেপি ভোট পায়। তিনিই তারকা প্রচারক। সে কারণেই রাজস্থান থেকে মধ্যপ্রদেশ— রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে দিয়েই বিধানসভার ভোট ঘোষণার আগেই অন্তত ছ’টি করে জনসভা করাতে চাইছেন।

ইতিমধ্যেই জি২০-র ‘সাফল্য’কে প্রচারে তুলে ধরতে আসরে নেমে পড়েছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। গত কাল রাষ্ট্রপতির দেওয়া নৈশভোজে ভারতমণ্ডপমে মোদীর পাশেই ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ তিনি সমাজমাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘‘জি২০-র ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজিকে অভিনন্দন। নয়াদিল্লির ঘোষণাপত্র গ্রহণ করাই হোক বা আফ্রিকান ইউনিয়নকে অন্তর্ভুক্ত করা, এই শীর্ষ সম্মেলন সমস্ত ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে একটি সেতু তৈরি করেছে। মোদীজির দর্শন, ‘এক বিশ্ব এক পরিবার এক ভবিষ্যতের’ জন্যই তা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশের প্রত্যেকে, যাঁরা আমাদের সাংস্কৃতিক মূল্যে বিশ্বাস করেন এই সম্মেলন তাঁদের সবাইকে জয় এনে দিয়েছে। এই সম্মেলন, বিশ্বকে আরও বাসযোগ্য করার পথে সবাইকে একজোট করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখল।’’

অমিত শাহের এই প্রশস্তির পরেই বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা বলেন, ‘‘ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের বিপুল জয় হল। প্রধানমন্ত্রী মোদীজির নেতৃত্বে ভারত অনুন্নত ও গরিব দেশগুলির স্বর হয়ে উঠল। এই ভূকৌশলগত সংঘাতের সময়েও দেখিয়ে দিল যে, দেশগুলি আরও ভাল ভবিষ্যতের জন্য সহযোগিতা করতে পারে। এই সাফল্য ভারতের কূটনীতির এক স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করল, যা প্রত্যেক ভারতবাসীর হৃদয়কে গর্বে ভরিয়ে দিয়েছে।’’ বিজেপি নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির সম্মিলিত নেতৃত্বে, আন্তর্জাতিক নেতাদের সমর্থনে এবং বসুধৈব কুটুম্বকম-এর অন্তর্লীন অর্থে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং নতুন অংশিদারিত্ব তৈরি হল। এই জি২০-কে মনে রাখতে হবে ভারত এবং সমস্ত দক্ষিণ বিন্দুর দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক বদলের প্রধান কান্ডারি হয়ে ওঠার কারণেও।’’

অন্য বিষয়গুলি:

G20 Summit 2023 Narendra Modi India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy