কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির (সিসিএস) জরুরি বৈঠক ডাকলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওই বৈঠক শুরু হয়েছে। সিসিএস-এর অন্যতম সদস্য কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। তিনি ইতিমধ্যে আমেরিকা-পেরু সফর কাটছাঁট করে ভারতে ফিরছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে বৈঠকের যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে নির্মলাকে দেখা যায়নি। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাধারণ পর্যটকদের নির্মম ভাবে হত্যার ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ ছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রয়েছেন এই কমিটিতে। বুধবারের এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের একাংশে প্রকাশ, তিন বাহিনীর প্রধানেরা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলির শীর্ষ আধিকারিকেরা এই বৈঠকে থাকতে পারেন।
পহেলগাঁওয়ের হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সৌদি আরব সফরে কাটছাঁট করে সকালেই দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নয়াদিল্লিতে ফিরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথও আলাদা করে ডোভালের সঙ্গে একটি বৈঠক সেরে নিয়েছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এবং অন্য আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।
মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের গুলিতে অন্তত ২৬ সাধারণ পর্যটকের মৃত্যুর পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে দেশবাসী। নিহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেরও তিন জন রয়েছেন। হামলার চক্রীদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের দাবি উঠতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীও আশ্বস্ত করেছেন, হামলায় জড়িত কাউকে রেয়াত করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবারই কাশ্মীরে পৌঁছে গিয়েছেন শাহ। সেখানে স্বজনহারাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। শাহও জানিয়েছেন, ভারত সন্ত্রাসের কাছে নত হবে না। এই নৃশংস জঙ্গি হামলায় দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এই অবস্থায় বুধবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবারের এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান ইতিমধ্যে এই ঘটনার দায় এড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, “পহেলগাঁও হামলায় আমাদের কোনও হাত নেই।” বস্তুত, টিআরএফের উত্থান ২০১৯ সালে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ হওয়ার পর। টিআরএফের জন্ম হয়েছিল কাশ্মীরি জঙ্গি শেখ সাজ্জাদ গুলের হাতে। সে সময় জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র সদ্য অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই লশকরের ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। উপস্থিতি জানান দিতে সে সময় লশকর, জৈশ-ই-মহম্মদ-সহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে এই সংগঠনে সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়। এদের মূল লক্ষ্য ছিল, কাশ্মীরের স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো এবং ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা।