প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
ধনী দেশগুলিকে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘কার্বন ফুটপ্রিন্ট’ কমানোর আবেদন জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কার্বন ফুটপ্রিন্ট হল বিভিন্ন দেশ কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন-সহ মোট যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপাদন করে। বিশ্ব উষ্ণায়নের কথা ভেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পরিবেশের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলনেও মোদী পরিবেশ রক্ষার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। তবে আন্তর্জাতিক স্তরে মোদীর পরিবেশ-মন্তব্যের তীব্র কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। দেশে পরিবেশ সংক্রান্ত আইনকে কী ভাবে লঘু করা হয়েছে, তা তুলে ধরেছেন।
আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে। তার মধ্যে সাতটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি চারটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। এই নিয়ে তৃতীয় পরিবেশ সম্মেলনে যোগ দিলেন মোদী। এর আগে প্যারিস (২০১৫) ও গ্লাসগোয় (২০২১) উপস্থিত ছিলেন তিনি। ২০২৮ সালে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন বা সিওপি৩৩ আয়োজক হিসাবেও ভারতের নাম প্রস্তাব করেছেন মোদী।
‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল তৈরির সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে যে সমস্ত দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এই তহবিলে সংগৃহীত অর্থের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করাই মূল উদ্দেশ্য। মনে করা হচ্ছে, তহবিলে প্রাথমিক ভাবে ৪৭.৫ কোটি ডলার জমা হবে। তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ১০ কোটি ডলার, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২৭.৫ কোটি ডলার, জাপান ১ কোটি ডলার, আমেরিকা ১.৭৫ কোটি ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সিওপি২৮-এ ‘ট্রান্সফর্মিং ক্লাইমেট ফিনান্স’ অধিবেশনে মোদী জানিয়েছেন, ভারতের প্রত্যাশা ‘নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফায়েড গোল’ (এনসিকিউজি)-এ উন্নতি করা। ধনী দেশগুলি ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলার সাহায্যের অঙ্গীকার করেছিল ২০০৯ সালে। যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে পারে
উন্নয়নশীল দেশগুলি। যদিও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ দেশগুলি।
মোদী জানিয়েছেন, ‘গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড’ বা পরিবেশ উন্নয়ন তহবিলে কোনও আর্থিক প্রতিবন্ধকতা থাকা উচিত নয়। ২০০৯ সালে কোপেনহাগেনে এই তহবিল তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ২০১৪ সাল থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু প্রতি বছরে ১০ হাজার কোটি অর্থ সংগ্রহের যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি।
জলবায়ু সঙ্কটে ভারত-সহ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির ভূমিকা উন্নত দেশগুলির তুলনায় যৎসামান্য বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী। সম্পদের কমতি থাকলেও এই দেশগুলি পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ থেকেছে বলেও জানিয়েছেন।
উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ‘ক্লাইমেট ফিনান্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী। এ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের সমর্থন মিলবে বলে আশাবাদী মোদী। প্রসঙ্গত দূষণে রাশ টানতে আর্থিক পরিকাঠামো তৈরির বিষয়টিকেও ‘ক্লাইমেট ফিনান্স’ বলা হয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার জন্য সমস্ত দেশকে একযোগে কাজ করার আবেদন জানান। দূষণের ক্ষেত্রে ভারতের অবদান উন্নত বিশ্বের দেশগুলির তুলনায় খুব কম বলেও উল্লেখ করেছেন মোদী। তাঁর দাবি, “বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ ভারতের হলেও ভারত মাত্র ৪ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করে। এমনকি জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, পেট্রোলিয়াম) বিকল্প যে অচিরাচরিত শক্তি ব্যবহারের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, ৯ বছর আগেই ভারত তা পূরণ করেছে।”
দূষণে রাশ টানতে উন্নয়নশীল দেশগুলি উন্নয়ন সংক্রান্ত যে ক্ষতির মুখে পড়ে, তা যাতে উন্নত দেশগুলি পুষিয়ে দেয় সেই বিষয়টি ‘গ্রিন ক্রেডিট ইনিশিয়েটিভ’ হিসাবে তুলে ধরেছেন মোদী। পরিবেশে কার্বন কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত যোগদানের আবেদনও জানান মোদী।
সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মহম্মদ বিন রশিদ আল মকতুমের নেতৃত্বের প্রশংসাও করেছেন মোদী। দুবাইয়ে মোদীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান অনাবাসী ভারতীয়েরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা হয়।
আজ সিওপি২৮-এর পাশাপাশি রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের সঙ্গে দেখা করেন মোদী। ভারতে অনুষ্ঠিত জি২০ সম্মেলনে পরিবেশ-সহ যে সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তার অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন তাঁরা।
তবে মোদীর আজকের নানা বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কটাক্ষ করে বলেছেন, “দুনিয়ার বিষয়ে বেশি কথা, ঘরোয়া বিষয়ে কম বলা— এই নীতি নিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। দুবাইয়ে উনি বলেছেন, ‘বাস্তুনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে দুর্দান্ত ভারসাম্য রেখে চলছে ভারত।’ যা আর এক মিথ্যা।”
রমেশ জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের সংশোধনীর পরে বনভূমি সংরক্ষণ আইন, ১৯৮০-এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। দুর্বল হয়েছে বনভূমি অধিকার রক্ষা আইন, ২০০৬। জাতীয় জীববৈচিত্র আইন, ২০০২-কেও গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে মোদী জমানায়। কোভিডের সময়ে পরিবেশ সংক্রান্ত ৩৯টি আইনে বদল আনা হয়েছে। পরিবেশের উপরে প্রভাব সংক্রান্ত মূল্যায়ন ক্রমাগত দুর্বল হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে দুর্বল করা হয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালতকেও। তাঁর দাবি, বর্তমান জমানায় বায়ুদূষণ দেশে ভয়ঙ্কর আকার নিয়েছে। যা মানুষের বেঁচে থাকার উপরে বড় আক্রমণের শামিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy