Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Narendra Modi

আজাদের বিদায়ে চোখে জল, মোদীর কান্নাতেও জল্পনা রাজনীতির

প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল ফেলার দিনে বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, এমন ক’ফোঁটা চোখের জল যদি দিল্লি সীমানায় আন্দোলনরত চাষিদের জন্যও ফেলতেন মোদী!

বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকে রাজ্যসভা থেকে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখ ভিজল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ডান দিকে, সংসদে কেঁদে ফেললেন গুলাম নবি আজাদও। ছবি পিটিআই।

বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদকে রাজ্যসভা থেকে বিদায় জানাতে গিয়ে চোখ ভিজল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ডান দিকে, সংসদে কেঁদে ফেললেন গুলাম নবি আজাদও। ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:২৭
Share: Save:

বিদায়বেলার আবেগ আর চোখের জলেও ‘নতুন শুরুর’ জল্পনা! কানাঘুষো নতুন রাজনৈতিক সমীকরণেরও। সেই সঙ্গে, রাজ্যসভায় বিদায়ী বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর চোখের জল ফেলার দিনে বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, এমন ক’ফোঁটা চোখের জল যদি দিল্লি সীমানায় আন্দোলনরত চাষিদের জন্যও ফেলতেন মোদী!

রাজ্যসভায় সাংসদ হিসেবে আজাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। আপাতত তাঁকে সংসদের উচ্চকক্ষে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা কংগ্রেসের নেই। কিন্তু মঙ্গলবার সেই আজাদের সঙ্গে নিজের দীর্ঘ বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে চোখের জল ফেলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আবার শেষে মুচকি হেসে তাঁর উদ্দেশে বলেছেন, ‘‘আপনাকে আমি অবসর নিতে দেব না।’’

ফলে বিদায়বেলায় আবেগপ্রবণ মুহূর্তেও জন্ম নিয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে, এর পরে কোথায় দেখা যাবে কংগ্রেসের ‘বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর’ নেতা আজাদকে? কারণ তাঁর ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ সম্পর্কে জল্পনা উস্কে দিচ্ছেন যে খোদ প্রধানমন্ত্রীই! তবে তার মধ্যেও মোদীকে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়, কংগ্রেস মুখপাত্র মণীশ তিওয়ারির মতো বিরোধী নেতাদের কটাক্ষ, যে প্রধানমন্ত্রীর হৃদয় এত বড়, বিরোধী নেতার জন্যও যাঁর চোখে জল, দিল্লির সীমানায় প্রবল ঠান্ডায় আন্দোলনরত চাষিদের জন্য তাঁর চোখে জল আসে না কেন?

ইন্দিরা গাঁধী থেকে শুরু করে সঞ্জয়, রাজীব হয়ে সনিয়া—বরাবরই গাঁধী পরিবারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আজাদ। কিন্তু অগস্টে তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ২৩ জন নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি লিখে দলের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অভিযোগের তির ছিল, রাহুল গাঁধীর দিকে। কংগ্রেসের মধ্যে সেই ফাটল নিয়ে সোমবার রাজ্যসভায় কটাক্ষও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে আজ তিনি যে-ভাবে আজাদকে তাঁর ‘প্রকৃত বন্ধু’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে অবসর নিতে দেবেন না বলেছেন, তাতে প্রশ্ন, মোদী সরকার কি তাঁকে কোনও সরকারি পদে বসাতে চলেছে?

এ দিন রাজ্যসভায় আজাদ-সহ চার জন সাংসদের বিদায় সংবর্ধনা ছিল। সকলেই কাশ্মীরের। আবেগপ্রবণ আজাদ নিজেও বিদায়ী বক্তৃতায় বলেন, তাঁকে উৎসবের সময়ে দু’জন নিয়ম করে শুভেচ্ছা জানান। সনিয়া গাঁধী ও নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘যখন পাকিস্তানের পরিস্থিতির কথা শুনি, আমি হিন্দুস্তানি মুসলিম হিসেবে গর্ববোধ করি।’’ মোদী জমানায় সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা বলে কংগ্রেস প্রায়শই অভিযোগ তোলে। এই সরকারের দিকে তারা আক্রমণ শানায় জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার কারণে। সেখানে ‘কাশ্মীরি নেতা’ আজাদের মুখে এ কথা শুনে কংগ্রেসের অনেক নেতাই বিস্মিত।

কিন্তু বিস্ময়ের সেখানেই শেষ নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁর সঙ্গে আজাদের বন্ধুত্ব। কাশ্মীরে ২০০৭ সালে সন্ত্রাসবাদী হামলায় গুজরাতের বাসিন্দাদের মৃত্যুর পরে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি কী ভাবে তাঁকে ফোন করে খবর দিয়েছিলেন, তা সবিস্তার বলেছেন তিনি। শুনিয়েছেন, তখন কী ভাবে নিজের পরিবারের লোকের মৃত্যুতে দুঃখ পাওয়ার মতো কেঁদেছিলেন আজাদ। বন্দোবস্ত করেছিলেন নিহতদের দেহ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের গুজরাত পৌঁছে দেওয়ার। এ কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গলা বারবার বুজে এসেছে। তাঁকে চোখের জল মুছতে হয়েছে। জল খেতে হয়েছে কয়েক ঢোক। তেমনই আজাদ তাঁর দিল্লির বাংলোয় কেমন সুন্দর বাগান করেছেন, তা-ও বলেছেন মোদী। ‘‘ক্ষমতা, গদি আসে-যায়। কিন্তু কী ভাবে তা সামলাতে হয়…’’ এটুকু বলে নিজের কপালে হাত ঠেকিয়ে আজাদকে স্যালুট করেছেন মোদী।

আজাদ, আনন্দ শর্মা, কপিল সিব্বলরা সনিয়াকে চিঠি লেখার পরেই রাহুল-ঘনিষ্ঠ শিবির কটাক্ষ করেছিল, প্রবীণ নেতাদের রাজ্যসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেই কারণেই তাঁরা হঠাৎ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। শাসক দলের সঙ্গে আজাদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুল-শিবিরের প্রশ্ন ছিল, ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পরে কাশ্মীরের অন্য সব নেতাকে ঘরবন্দি করা হলেও, কেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আজাদকে ঘরবন্দি করল না কেন্দ্র? আজ মোদী-আজাদ ঘনিষ্ঠতা প্রকাশ্যে আসায় কংগ্রেসের সেই নেতারা মুচকি হেসেছেন। মোদী শুধু বলেছেন, আজাদকে অবসর নিতে দেব না। আর এক ধাপ এগিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এনডিএ শরিক রামদাস আঠওয়ালে স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘রাজ্যসভায় আজাদকে দরকার। কংগ্রেস তাঁকে জিতিয়ে না-আনলে, আমরা আনব।’’

আজাদ বিদায়-বার্তায় চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন, ‘নেহি আয়েগি ইয়াদ তো বরসো নেহি আয়েগি, পর জব আয়েগি তো বহুত ইয়াদ আয়েগি’। প্রধানমন্ত্রীর কথার পরে জল্পনা, এর পরে কার কথা বেশি মনে পড়বে আজাদের? কোথায়ই বা দেখা যাবে তাঁকে?

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Gulam Nabi Azad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy