শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।
ও পার বাংলার সঙ্গে ‘সেতু বন্ধনের’ সময়েও নরেন্দ্র মোদীর মুখে ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ তত্ত্ব! নাম না-করেও বার্তা সম্ভবত ভোটমুখী এ পার বাংলাকে।
মঙ্গলবার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের (এ ক্ষেত্রে বিজেপি) সরকার থাকার সুবিধা ফের তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সেতু যে রাজ্যের সঙ্গে পড়শি মুলুকের যোগসূত্র, সেই ত্রিপুরার মানুষের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আপনারা তিন বছর আগে উন্নয়নের ডাবল ইঞ্জিন লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাই আজ কেন্দ্রের সমস্ত প্রকল্পের লাভ সরাসরি পাচ্ছেন। দিল্লির সঙ্গে ঝগড়া করে যাঁরা সময় নষ্ট করছেন, এখন তাঁরাও সেটা বুঝতে পারছেন।’’
উন্নয়নের এই ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ প্রচারকে সম্প্রতি বিহার সমেত বিভিন্ন রাজ্যে ব্যবহার করেছেন মোদী। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, এ দিনের বক্তব্যে ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গের মানুষের প্রতিও বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ দিন বক্তব্যে এক বারের জন্যও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেননি মোদী। কিন্তু বলেছেন, ‘‘ত্রিপুরায় পিএম কিসান নিধি, আয়ুষ্মান-ভারতের মতো প্রকল্পের সুফল দরিদ্ররা পাচ্ছেন। কিন্তু সারা দেশ দেখছে, আপনাদের প্রতিবেশী রাজ্যের মতো যে সব জায়গায় ‘ডাবল ইঞ্জিন’ নেই, সেখানে এ সব প্রকল্প শুরুই হয়নি। উন্নয়ন হচ্ছে অত্যন্ত ধীর গতিতে।’’ এর মাধ্যমে যে প্রধানমন্ত্রী ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গের কথা মাথায় রেখে ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ প্রচারে শান দিয়েছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই রাজনৈতিক শিবিরে।
মোদীর দাবি, ‘‘ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার চতুর্থ বছরে পদার্পণ করছে। ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার দরিদ্র পরিবার নতুন বাড়ি পেয়েছে।... এক-একটি ভোট স্বপ্নপূরণের সুযোগ কী ভাবে এনে দেয়, যাঁরা নতুন বাড়ি পাচ্ছেন, তাঁরা তা জানেন।’’
প্রধানমন্ত্রী এ কথা দাবি করলেও, উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ত্রিপুরায় বেকারত্বের হার পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় চড়া (বিস্তারিত সঙ্গের সারণিতে)। এ রাজ্যের বৃদ্ধির হার দেশের সার্বিক হারের তুলনায় বেশি। বিস্তর ঢাকঢোল পেটানোর পরেও বড় অঙ্কের লগ্নি আসেনি ত্রিপুরায়। বড় বিনিয়োগ অধরা সারা দেশেই। তাই এই ‘ডাবল ইঞ্জিনের তত্ত্ব’ আদৌ কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল।
দীর্ঘ বাম শাসন থেকে ত্রিপুরাকে মুক্ত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ‘‘আগে যে রাজ্যে (ত্রিপুরা) কমিশন এবং দুর্নীতি ছাড়া কাজ হত না, আজ সেখানে কেন্দ্রের টাকা সরাসরি পৌঁছচ্ছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারের সময়েও এই দুর্নীতির প্রসঙ্গ এবং কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা রাজ্যের দরিদ্র মানুষের হাতে না-পৌঁছনোর অভিযোগ বারবার উঠে আসে মোদীর বক্তৃতায়।
ত্রিপুরাকে সফল ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ অন্যতম মডেল হিসেবে তুলে ধরে মোদীর দাবি, ওই রাজ্যে সরকারি কর্মীরা সময়ে বেতন পেতেন না। এখন সপ্তম বেতন কমিশনের পরে সেই দুর্ভাবনা ঘুচেছে। চাষিদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য সুনিশ্চিত হয়েছে। একশো দিনের কাজে দৈনিক মজুরি ১৩৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৫ টাকা। ত্রিপুরার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্র ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালে যেখানে ৩,৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে, সেখানে গত পাঁচ বছরে ওই অঙ্ক ১২,০০০ কোটি টাকা।
বিরোধীদের অবশ্য বক্তব্য, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী এই ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ কথা বললেও, লগ্নি থেকে শুরু করে কর্ম সংস্থান— সমস্ত মাপকাঠিতে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলি বাকিদের তুলনায় এগিয়ে, এমনটা মোটেও নয়। একই কথা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে তাঁদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy