প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
জওহরলাল নেহরু বা ইন্দিরা গাঁধী তো বটেই। তিনি পিছনে ফেলে দিয়েছেন বারাক ওবামা, মার্গারেট থ্যাচার, হেলমুট কোলকেও। ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্টের পরে এ বার বিল ক্লিন্টনকে টপকেও গেলেন তিনি।
হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই।
বুধবার আচমকাই মোদী সরকার থেকে বিজেপি নেতৃত্ব ‘নরেন্দ্র মোদীর ২০তম বছর’ বলে প্রচারে নেমে পড়ল। মন্ত্রিসভার বৈঠকে সকলে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানালেন। গত উনিশ বছরের প্রতিটি ধাপে মোদী কী কী কীর্তি স্থাপন করেছেন, তার প্রচার করা হল। আমজনতার জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন থেকে সুশাসনের নতুন নজির স্থাপন করেছেন বলে সকলে ধন্য ধন্য করলেন।
কিন্তু ২০তম বছর? উত্তর মিলল, ২০০১-এ এই দিনটিতেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদী শপথ নিয়েছিলেন। ১৩ বছরের মুখ্যমন্ত্রিত্বের পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর ছয় বছর কেটে গিয়েছে। অতএব কেন্দ্রেই হোক বা রাজ্যে, নির্বাচিত সরকারের প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদী ২০তম বছরে পদার্পণ করে নতুন রেকর্ড করলেন। এক টানা এত দিন সরকারের প্রধান হিসেবে থাকার এমন রেকর্ড এ দেশের আর কোনও প্রধানমন্ত্রীর নেই। বিদেশেও এমন রেকর্ড দুর্লভ।
আরও পড়ুন: কল রেকর্ড ঘিরে নয়া দাবি, হাথরসে মেয়াদ বৃদ্ধি সিটের
হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রিত্ব ও প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ জুড়ে দিয়ে নতুন মাইলফলক সন্ধানের প্রয়োজন হল কেন?
বিরোধীরা বলছেন, সবটাই বাস্তব সমস্যা থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা। কোভিড সামলানোই হোক বা অর্থনীতির হাল, মোদী সরকার সব দিকেই ব্যর্থ। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুরবস্থার সময়েও তিনি নীরব ছিলেন। এখন হাথরসের দলিত তরুণীর গণধর্ষণেও তিনি নীরব। চিনের সেনা জমি দখল করলেও তিনি চিনের নাম মুখে আনতে পারেননি। তিনি শুধু নিজের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতেই ব্যস্ত।
আরও পড়ুন:হাথরসে যেতে চেয়ে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ সাংবাদিক
রাহুল গাঁধী বলেছেন, “পিএম-জি, একা একা টানেলে হাত নাড়া ছাড়ুন। নীরবতা ভাঙুন। প্রশ্নের মুখোমুখি হোন। দেশ অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করছে।” নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ় যে দু’দিন আগেই মোদী সরকারকে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা এবং আচমকা লকডাউনের ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশার জন্য দায়ী করে ‘মুসলিম বিরোধী অবস্থান’ বদলাতে বলেছেন, তা-ও মনে করান রাহুল।
মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা তা মানতে নারাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, “সংবিধানের প্রণেতারা যে কল্যাণকর রাষ্ট্রের কথা ভেবেছিলেন, তা চরিতার্থ করার কাজ নরেন্দ্র মোদী করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই হোক বা প্রধানমন্ত্রী— মোদীজি জনকল্যাণকেই প্রথমে রেখে জীবনকে মানুষের কল্যাণ ও দেশের বিকাশে সমর্পিত করেছেন।”
‘#20thYearOfNaMo’ মন্ত্রে বিজেপি আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারে নেমেছে। তাদের যুক্তি, ইন্দিরা গাঁধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৫,৮২৯ দিন। নেহরু ৬,১৩০ দিন। মোদীর মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ৬,৯৪১ দিন হয়ে গিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর পদে হেলমুট কোল টানা ১৬ বছর ছিলেন। আমেরিকায় রুজভেল্ট গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন ১৬ বছর ৩ মাস। ক্লিন্টন গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট পদ মিলিয়ে ২০ বছর ছিলেন বটে। তবে একটানা নয়। ফলে একটানা নির্বাচিত সরকারের প্রধান হিসেবে ২০তম বছরে পা দিলেন মোদী।
সিপিএম নেতারা মনে করাচ্ছেন, জ্যোতি বসুই তো টানা ২৩ বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পলিটবুরোর নেতা নীলোৎপল বসু বলেন, “দেশের এই করুণ অবস্থার মধ্যে যাঁরা এই সব রেকর্ড উদযাপন করছেন, তাঁদের পেশাদার মনোবিদের সাহায্য নেওয়া উচিত। নরেন্দ্র মোদীর সরকার কোভিডের মোকাবিলা থেকে অর্থনীতি, সব দিকেই ব্যর্থ। স্টিগলিৎজ় মোদী সরকারকে ব্যর্থতার পোস্টার-বয় বলেছেন। তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নীরবতা পালন করছেন।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মোদী আজ টুইটারে লেখেন, ‘‘কেউ কখনও দাবি করতে পারে না, তার মধ্যে কোনও খামতি নেই। এত গুরুত্বপূর্ণ এবং দায়িত্বপূর্ণ পদে লম্বা সময় কেটেছে। এক জন মানুষ হিসেবে আমারও ভুল হতে পারে। কিন্তু আমার সৌভাগ্য যে, এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আপনাদের ভালবাসা উত্তরোত্তর বাড়ছে।’’ মোদীর বক্তব্য, জনতাই যে জনার্দন— ছোট থেকেই এই বিশ্বাস রয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy