প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
লকডাউনের সময়ে ঘরবন্দি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাদা দাড়ির দৈর্ঘ্য বেড়েছে। অযোধ্যায় রামমন্দিরের শিলান্যাসে ধুতি-পাঞ্জাবিতে তাঁর সাজ দেখে অনেক বিজেপি নেতাই বলেছিলেন, মোদীকে নাকি বেশ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো দেখাচ্ছিল! এমনকি জল্পনা হয়েছিল, ওই সাজ কি বাংলার ভোটের জন্য!
রবিবার সকালে ‘মন কি বাত’-এ নরেন্দ্র মোদী সেই ‘গুরুদেব’-এরই ‘শরণাপন্ন’ হলেন! তাঁর নতুন ঘোষিত লক্ষ্য ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর জন্য আজ প্রধানমন্ত্রী দেশি খেলনার উপরে জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, ভারত বিশ্বের ‘টয় হাব’ হয়ে উঠতে পারে। সেই প্রসঙ্গেই তিনি খেলনা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবনার কথা টেনে এনে বোঝাতে চেয়েছেন, রবীন্দ্রনাথও স্বদেশি খেলনার কথাই বলেছেন।
কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তাঁর নতুন শিক্ষানীতিও রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় অনুপ্রাণিত। আজ তাঁর ফের রবি-স্মরণ দেখে রাজনীতিকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বারবার এত রবি-প্রেম কেন প্রকাশ পাচ্ছে মোদীর! আগামী বছরে বাংলার বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়েই কি কবিগুরুর ‘চরণ ধরিতে’ মরিয়া তিনি?
আরও পড়ুন: মোদীর রবীন্দ্রভক্তির পিছনে কোন অঙ্ক, জল্পনা
দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। রবিবারের তথ্য বলছে, এক দিনে প্রায় ৭৯ হাজার নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গোটা বিশ্বে এ এক নতুন রেকর্ড। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কেন ২৫ লক্ষ পড়ুয়াকে নিট-জেইই পরীক্ষা দিতে পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর ‘মন কি বাত’-এ করোনার সময়ে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন, সংযমের সঙ্গে গণেশ চতুর্থীর মতো উৎসব পালনের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু পরীক্ষা বা অর্থনীতির প্রসঙ্গে যাননি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর মতে, জেইই-নিট পরীক্ষার্থীরা চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ করুন। কিন্তু তিনি ‘খিলোনে পে চর্চা’ করলেন। ‘মন কি বাত’ নয়। এখন ‘স্টুডেন্টস কি বাত’ দরকার। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আজ রাত ১০টা নাগাদ বিজেপির ইউটিউব চ্যানেলে মোদীর এ দিনের ‘মন কি বাত’-এর ভিডিয়োতে গিয়ে দেখা গেল, ‘লাইক’ ১৮ হাজার, ‘ডিসলাইক’ ১ লক্ষ ৮৪ হাজার। চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ৩০.৫০ কোটি।
আরও পড়ুন: সুশান্ত মামলায় বিতর্কে মোদীর জীবনীচিত্র নির্মাতা সন্দীপ
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘খেলনা কেবল মন ভোলায় না। মন তৈরিও করে।’’ তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের অভিযোগ, মোদীও করোনা পরিস্থিতি, পরীক্ষার্থীদের চিন্তা, অর্থনীতির সঙ্কট থেকে পালিয়ে মন ভোলাতে চাইছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কি রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতাও মুখস্থ? উনি কেন রবীন্দ্রনাথের কথা বলছেন জানি না। তবে উনি পলায়নবাদী হয়ে উঠতে চাইছেন। দেশের মানুষ ওঁর থেকে জানতে চায়, করোনার মোকাবিলা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরাহা, অর্থনীতির সঙ্কটের সমাধানের জন্য তিনি কী করছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বদলে খেলনার কথা বলছেন।’’
মোদী আজ বলেন, ‘‘আমি কোথাও পড়েছি, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, সেরা খেলনা হল সেটাই, যা অসম্পূর্ণ। শিশুরা খেলতে খেলতে তা সম্পূর্ণ করবে। গুরুদেব বলেছিলেন, উনি যখন ছোট ছিলেন, তখন নিজের কল্পনায় ঘরে পাওয়া সাধারণ জিনিসপত্র দিয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে নিজের খেলনা ও খেলা তৈরি করতেন।’’ একই সঙ্গে বিদেশি খেলনা বর্জনের আহ্বান জানাতেও তিনি বিশ্বকবিকে টেনেছেন। মোদীর দাবি, রবীন্দ্রনাথের এক খেলার সঙ্গী বিদেশি খেলনা আনায় বাকিদের সঙ্গে তাঁর বিভেদ তৈরি হয়েছিল। বিজেপি নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যই খেলনার মতো ছোট-মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু নেট-দুনিয়ার প্রশ্ন উঠেছে, দেশীয় খেলনায় কি সত্যিই ছোট শিল্পের লাভ হবে? নাকি গত বছর ব্রিটিশ খেলনা সংস্থা ‘হ্যামলে’ কিনে নেওয়া মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠীর লাভ হবে?
মোদীর যুক্তি, কর্নাটকে চন্নাপটনা, অন্ধ্রের কোন্ডাপল্লি, তামিলনাড়ুর তাঞ্জোর, অসমের ধুবুরি, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে খেলনা তৈরির কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু ৭ লক্ষ কোটি টাকার আন্তর্জাতিক খেলনা শিল্পে ভারতের অংশ খুবই সামান্য। তা বাড়াতে হবে। দেশি খেলনার দিকে গিয়ে আত্মনির্ভর ভারতের যে লক্ষ্য তিনি পূরণ করতে চাইছেন, তার বীজ মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে পুঁতে গিয়েছিলেন বলে মোদীর দাবি। ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির থিমে ভিডিয়ো গেমস তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি। সৌগতের প্রশ্ন, ‘‘মোদী গত ছয় বছর প্রধানমন্ত্রীর গদিতে রয়েছেন। দেশের বাজারে যে চিনা খেলনা ভরে গিয়েছে, তা কি উনি এখন টের পেলেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy