মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়াই করতে হবে।’’ ছবি: পিটিআই।
দেশে গরিবরা থাকার জায়গা পাচ্ছেন না, আর এক শ্রেণির মানুষের চুরি করা টাকা রাখার জায়গা কুলোচ্ছে না— স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এমনই বললেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, দেশে কোনও রকম দুর্নীতি তিনি বরদাস্ত করবেন না।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি, কেন্দ্রীয় বাক্যবন্ধে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদ্যাপনে সোমবার লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভাষণের শুরুতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানান মোদী। দুর্নীতি প্রসঙ্গ আসে তাঁর বক্তৃতার একেবারে শেষ পর্যায়ে। মোদী বলেন, ‘‘দেশের পরিস্থিতি ভাল নয়। ভারতের মতো গণতন্ত্রে যেখানে মানুষ প্রত্যেক মুহূর্তে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করছে, যেখানে একদল মানুষের থাকারই জায়গা নেই, সেখানে আর একটি দল চুরি করা মাল রাখার জায়গা পাচ্ছে না।’’
ঘটনাচক্রে, দুর্নীতি নিয়ে মোদী যখন এই মন্তব্য করছেন, তার কিছু দিন আগেই দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রী-বিধায়ক-আমলাদের বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। তাঁদের কারও কারও বাড়ি থেকে বহু হিসাববহির্ভূত অর্থ উদ্ধার হয়েছে বলে ওই সব সংস্থার দাবি। তালিকায় যেমন মহারাষ্ট্র রয়েছে, তেমনই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডও। এই পরিস্থিতিতে স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতি সংক্রান্ত মন্তব্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
সম্প্রতিই মহারাষ্ট্রে সঞ্জয় রাউতের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ হিসাবহীন নগদ উদ্ধার করেছে বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি দাবি করেছে। তার আগে বাংলায় এসএসসি দুর্নীতি মামলায় নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের বাড়িতেও অভিযান চালিয়েছে ইডি। অভিযান চালানো হয়েছে বাংলার প্রাক্তনমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও। এই অর্পিতারই অনেকগুলি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৫০ কোটি নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে বলে ইডির দাবি। পাওয়া গিয়েছিল বিদেশি মুদ্রা, প্রায় ৫ কেজি ওজনের সোনাদানাও। এর পাশাপাশি নিকট অতীতে ঝাড়খণ্ডের তিন কংগ্রেস বিধায়কের কাছ থেকেও ৫০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। মোদী অবশ্য তাঁর বক্তৃতায় কোনও বিশেষ রাজ্য, বা নেতা বা মন্ত্রীর নাম করেননি।
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়াই করতে হবে। গত আট বছরে আমরা সে কাজে সফলও হয়েছি।’’ মোদীর কথায়, ‘‘‘ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’-এর সাহায্যে আধার-মোবাইল এবং অন্য আধুনিক ব্যবস্থা প্রয়োগ করে লক্ষ কোটি টাকা ভুল হাতে যাওয়া থেকে বাঁচানো গিয়েছে। এমনকি, সেই টাকা দেশের ভাল কাজে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ যদিও বিরোধীরা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বার বার ইডি, সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে ‘অপব্যবহার’ করে মুখ বন্ধ করানোর অভিযোগ করে এসেছেন। তাঁরা এ-ও বলেছেন, বিরোধীদের যেখানে ইডি, সিবিআই দিয়ে ‘হেনস্থা’ করানো হচ্ছে, সেখানে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে প্রায় দেউলিয়া করে দিয়ে যারা বিদেশে বসে আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্র।
মোদী এ প্রসঙ্গে তাঁর জবাব দিয়েছেন স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের মঞ্চ থেকেই। তিনি বলেছেন, ‘‘যারা আগের সরকারে ব্যাঙ্ক লুট করে পালিয়ে গিয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে করে টাকা ফেরানোর চেষ্টা করছে সরকার। যাঁরা দেশের টাকা চুরি করেছেন, তাঁদের টাকা ফেরাতে বাধ্য করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভারত কড়া অবস্থান নিচ্ছে। দেখে ভাল লাগছে, এখন দেশে দুর্নীতি-বিরোধী একটা মনোভাবও তৈরি হয়েছে।’’ কিন্তু তাঁর অনুযোগ, অনেকে দুর্নীতি নিয়ে সরব হলেও কেউ কেউ দুর্নীতিবাজদের ‘সমর্থন’ও করছেন। যা কোনও দেশে শোভা পায় না।
উল্লেখ্য, রবিবার বিকেলেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘কেন অনুব্রতকে গ্রেফতার করা হল? ও কী করেছিল?’’ সোমবার মোদী বলেন, ‘‘আমি দেখতে পাচ্ছি, যারা দুর্নীতি করেছেন তাঁদের প্রতি উদারতা দেখানো হচ্ছে। কেউ কেউ লজ্জা-শরমের রেয়াত না করে এমন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছেন যে, অভিযুক্ত কোর্টে শাস্তি পাওয়ার পর, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, এমনকি, গ্রেফতার হয়ে জেলে যাওয়ার পরও তাঁদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। তাঁদের মহিমাকীর্তন করছেন। তাঁদের বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।’’ নাম না করলেও রাজনৈতিক মহলের একাংশের প্রশ্ন, তবে কি পরোক্ষে সেই মন্তব্যকেই লক্ষ্য করে এ কথা মোদীর? যদিও অনুব্রত গ্রেফতার হলেও জেলে যাননি। এমনকি আদালতে দোষী সাব্যস্তও হননি। তাই বিষয়টি ধোপে টিকছে না।
মোদী এদিন তাঁর দুর্নীতি প্রসঙ্গে বক্তব্য শেষ করার আগে আরও একবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, যত ক্ষণ না সমাজে খারাপের প্রতি ঘৃণাবোধ তৈরি হচ্ছে, তত ক্ষণ ভাল এবং স্বচ্ছ ভাবমূর্তির চেতনাও জাগ্রত হবে না। তাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy