প্রতীকী ছবি।
হলিউডের রুপোলি পর্দায় তো বটেই, ফোনে আড়ি পাতার দৃশ্য বহু বার দেখা গিয়েছে হিন্দি সিনেমাতেও। এমনকি সেই সত্তরের দশকেও। সাধারণত অপরাধী-‘ভিলেনের’ হদিশ পেতেই ওই অস্ত্রে শান দিতে দেখা গিয়েছে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করা ‘হিরোকে’। পেগাসাস-কাণ্ডে যখন দেশ তোলপাড়, তখন ওই আড়ি পাতা ফের চর্চার কেন্দ্রে।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধেই তো বহু দিন ধরে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ আছে! সেই অভিযোগ শুধু বিরোধীরা তোলেননি। মুকুল রায়, যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহকর্মী ছিলেন এবং হালে আবার হয়েছেন, তিনিও বিজেপিতে থাকাকালীন নিজের ৩টি ফোন দেখিয়ে বলেছিলেন, সেগুলিতে আড়ি পাতে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন তিনি।’’ তাঁর কটাক্ষ, এ রাজ্যের কোনও এক নগরপাল ইজ়রায়েলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কি তিনি পেগাসাস প্রযুক্তিই এনেছিলেন?
পুলিশ কর্তাদের একাংশ অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তদন্তের স্বার্থে আড়ি পাতার সঙ্গে পেগাসাস-কাণ্ডকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। প্রথমত, এতে রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী, সংবাদকর্মীদের ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয়ত, এ ক্ষেত্রে সম্ভবত মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার সাহায্যে আড়ি পাতা হয়নি। সফটওয়্যার ব্যবহার করে কার্যত ফোনের নিয়ন্ত্রণ কব্জা করা হয়েছে। যা বেআইনি এবং হ্যাকিংয়ের শামিল।
এই সূত্রেই পোড়খাওয়া আইপিএস অফিসারদের অনেকে বলছেন, ল্যান্ডলাইন ‘ট্যাপ’ হচ্ছে বহু দিন আগে থেকে। মোবাইলে আড়ি পাতাও একেবারেই নতুন নয়। পুলিশ কর্তাদের মতে, এখনও তদন্তের স্বার্থে নিয়মিত ফোন ট্যাপ করা হয়। বহু ক্ষেত্রে ফোনে আড়ি পেতে ধরা সম্ভব হয়েছে দুষ্কৃতীকে। যেমন, স্কুল শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসু এবং গোয়েন্দা অফিসার পার্থ বসুকে অপহরণ করে খুনের কথা আড়ি পেতে জানতে পেরেছিল পুলিশ। এমন হাজারো উদাহরণ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এ রাজ্যে বাম জমানায় তদন্তের স্বার্থে ফোনে আড়ি পাতা শুরু হয়। পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলনের সময়ে তার বহুল ব্যবহার হয়েছে বলে জানাচ্ছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তারা। সূত্রের খবর, ২০০৯ থেকে ২০১১ সালে জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের অধিকাংশ গতিবিধি আড়ি পেতে জানতে পারত পুলিশ। এমনকি মাওবাদী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ফোনেও তা করার অভিযোগ উঠেছিল সেই সময়ে। রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন এক কর্তা জানান, মাওবাদী আন্দোলন ঠেকাতে ফোনে আড়ি পাতার জন্য মেদিনীপুরে একটি আলাদা ‘সেট-আপ’ তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময়ে একমাত্র কলকাতা পুলিশের এসটিএফের কাছেই ওই ব্যবস্থা ছিল। জঙ্গি দমনেও আড়ি পাতা পুলিশের বড় অস্ত্র বলে জানিয়েছেন কর্তারা। দাবি, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি জঙ্গিদের ফোনে আড়ি পেতে একাধিক সাফল্য এসেছে।
বাম জমানার শেষ দিকে আড়ি পাতার পরিধি বৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। পুলিশি তদন্তের বাইরে ব্যক্তিগত স্তরেও আড়ি পাতা নিয়ে সেই সময়ে সরব হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। আবার ২০১১ সালে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধেও নানা সময়ে ব্যক্তিগত পরিসরে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ করেছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। এমনকি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এক পুলিশ কর্তাকে দিয়ে তা করানো হত বলেও অভিযোগ। যার সূত্রে শমীকের দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করে না। এ রাজ্যে সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করা হয়। এই সরকার এবং দলের নৈতিক এবং রাজনৈতিক অধিকারই নেই এ বিষয়ে (পেগাসাস) মন্তব্য করার।’’ সরকার এবং তৃণমূল যদিও এই সমস্ত অভিযোগ বরাবর জোরালো ভাবে অস্বীকার করেছে।
সূত্রের খবর, সিআইডি ও কলকাতা পুলিশের এসটিএফের কাছে আড়ি পাতার উন্নত পরিকাঠামো আছে৷ পুলিশ কর্তাদের দাবি, তদন্তের স্বার্থে, দুষ্কৃতী ও অপরাধীদের ধরতে তা দিয়ে আড়ি পাতা হয়।
তবে রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্তা জানান, কারও ফোনে আড়ি পাততে হলে, তদন্তকারী সংস্থাকে যুক্তিগ্রাহ্য কারণ-সহ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে লিখিত ভাবে জানাতে হয়। তিনি অনুমতি দিলে, তবেই ফোনে নজরদারি করা যায়। তাই এর সঙ্গে পেগাসাস-কাণ্ডের কোনও তুলনা চলে না বলেই তাঁদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy