শাহিন বাগে পেট্রল বোমা ছোড়ার ঘটনায় তদন্তে পুলিশ। ছবি: পিটিআই।
করোনা রুখতে ‘জনতা কার্ফুর’ দিনে শাহিন বাগ আর জামিয়ার দুশ্চিন্তা বাড়াল পেট্রল বোমা।
রবিবার সকালে শাহিন বাগের প্রতিবাদ মঞ্চের ঠিক পিছনে পেট্রল বোমা ছুড়ে পালাল দুষ্কৃতী। উদ্ধার হল পাঁচ-ছ’টি পেট্রল ভর্তি বোতল। সামান্য সময়ের ব্যবধানে একই ঘটনা ঘটল জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ৭ নম্বর গেটের সামনে প্রতিবাদ মঞ্চের কাছেও। তবে দুই জায়গাতেই কারও হতাহত হওয়ার খবর মেলেনি।
৯৯ দিনের শাহিন বাগের আন্দোলনে টানা ৮০ দিনেরও বেশি শামিল অমিতা বাগ জানান, এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ প্রতিবাদ মঞ্চের ঠিক পিছনে বড়জোর ৫০-৬০ ফুট দূরে পেট্রল বোমা ছুড়েছে এক দুষ্কৃতী। সম্ভবত লক্ষ্য ছিল প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। তাঁর প্রশ্ন, “যাবতীয় নিয়ম মেনে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নিরাপত্তার দায় কি প্রশাসনের নয়?”
আরও পড়ুন: গগৈ কেন রাজ্যসভায়? প্রশ্ন পট্টনায়কেরও
জামিয়ার পড়ুয়া সুযশ ত্রিপাঠীর অভিযোগ, এ দিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ নম্বর গেটের সামনে পেট্রল বোমা ছোড়ার পাশাপাশি গুলিও চালিয়ে পালিয়েছে বাইকে সওয়ার এক দুষ্কৃতী। তাঁর দাবি, বাইকে তিনটি ব্যাগ থাকায় নম্বর দেখা যায়নি। ডেলিভারি বয়ের মতো পোশাক পরা ওই ব্যক্তির মাথায় হেলমেট থাকায় মুখও দেখা যায়নি। পুলিশ গুলির খোল নিয়ে গেলেও পড়ে রয়েছে পেট্রল বোমার বোতলটি।
জামিয়া এবং শাহিন বাগে যে ভাবে প্রতিবাদীদের উপরে বার বার হামলা হচ্ছে, তা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ। এমনকি শাহিন বাগের প্রতিবাদ মঞ্চের পিছনে পেট্রল বোমা পড়ার পরে কিছু ক্ষণের জন্য ‘জনতা কার্ফু’ অগ্রাহ্য করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকে। প্রতিবাদীদের ক্ষোভ, এর আগে শাহিন বাগে গুলি চালিয়ে জামিনে ছাড়া পেয়েছে দুষ্কৃতী। জামিয়ার সামনে গুলি চালিয়েছিল যে, তাকেও বলা হয়েছে নাবালক। এর ফলে আগামী দিনেও হামলার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। অমিতা বাগের কথায়, “করোনা ভয়ঙ্কর সন্দেহ নেই। কিন্তু এখন প্রতি রাতে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতে হয় প্যান্ডেলে। মাথা পর্যন্ত কম্বল-চাদর মুড়ি দিয়ে রাতটুকু কাটিয়ে দিই কোনও ক্রমে। প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে আতঙ্ক। কখন কী হয় কে জানে!”
প্রতিবাদস্থলে লোক কমে যাওয়ার কারণ অবশ্য সরকারি নির্দেশিকা। করোনার কামড় রুখতে জমায়েত রোখার আবেদন জানিয়েছে কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকার। এ দিন রাত্রি ন’টা থেকে দিল্লিতে শুরু হচ্ছে ১৪৪ ধারা। আর কাল ভোর ছ’টা থেকে লক-ডাউন। অন্তত আগামী কয়েক সপ্তাহ একে-অন্যের সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় না-রাখলে, করোনা ভয়ঙ্কর চেহারা নেবে বলে সাবধান করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদের ধাঁচ বদলে ফেলেছে শাহিন বাগও।
ম্যারাপ ঘিরে ভিড় উধাও। ম্যারাপের ভিতরেও পালা করে প্রতিবাদে বসছেন পাঁচ জন। আধ ঘণ্টা পরে তাঁরা উঠে গেলে, আসছেন অন্য পাঁচ জন। বাকি তাকিয়ায় রাখা এক জোড়া করে জুতো আর সিইই-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী পোস্টার। যাতে ভিড়ভাট্টা এড়িয়েও জারি রাখা যায় প্রতীকী আন্দোলন। যদিও দিল্লি সরকার এ দিন যে ১৪৪ ধারা জারির কথা ঘোষণা করেছে, তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে আপাতত কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে না।
অমিতা জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘কথা রেখে’ এ দিন বিকেল পাঁচটায় আওয়াজ তুলেছে শাহিন বাগও। তা-ও আবার পাঁচ নয়, টানা পনেরো মিনিট। স্লোগান উঠেছে, “গো করোনা, গো করোনা। মোদী ভাইয়া বহনোকি শুনোনা। এনআরসি-এনপিআর ওয়াপস লো!” আপাতত এমন প্রতীকী আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্পে অটল আগামী কাল একশো দিনে পা রাখতে চলা শাহিন বাগ।
তবে পশ্চিম নিজামুদ্দিনে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর-বিরোধী যে আন্দোলন চলছিল, আপাতত করোনার কারণে তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এখনকার মতো বাড়ি থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে তাঁদের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy