গৌতম আদানি। —ফাইল চিত্র।
দেশের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) পরিচালন সমিতির এক সদস্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক যোগাযোগ থাকার কারণেই নিজেদের টাকা নিয়ম বহির্ভূত ভাবে মরিশাসে পাচার করা এবং আবার তা ঘুরপথে ফিরিয়ে এনে আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারেই লগ্নি করার কাজ সহজ হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে শুনানিপর্বে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এ কথা জানিয়েছে আবেদনকারী পক্ষ। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ রিপোর্ট এবং অর্গানাইজ়ড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর ভিত্তিতে দায়ের করা হয়েছে ওই মামলা।
সম্প্রতি ওসিসিআরপি তাদের অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টে দাবি করেছিল, বিদেশের লগ্নি তহবিলকে কাজে লাগিয়ে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিরা ঘুরপথে ওই গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার অংশীদারি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ভারতের নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী বেআইনি ভাবে তা করা হয়েছে। প্রায় একই রকম অভিযোগ করা হয়েছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টেও। আবেদনকারী অনামিকা জয়সওয়ালের দায়ের করা হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘‘আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্তে সেবি-র একটি আপাত স্বার্থের দ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ সেবির আধিকারিক সিরিল শ্রফের মেয়ে, আদানি গ্রুপের চেয়ারপারসন গৌতম আদানির ছেলে করণ আদানিকে বিয়ে করেছেন!’’
আবেদনে বলা হয়েছে, সিরিল একটি আইনি পরমর্শদাতা সংস্থা সিরিল অমরচাঁদ মঙ্গলদাসের অংশীদার তথা পরিচালক। আবার তিনি কর্পোরেট গভর্নেন্স সংক্রান্ত সেবির কমিটিরও এক জন সদস্য। ওই কমিটি ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’-এর মতো অপরাধ নিয়ে কাজ করে। সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বারমুডা এবং মরিশাসের আদানিদের আটটি তহবিলের মধ্যে ছ’টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ওই লগ্নির মাধ্যমে ঠিক কারা লাভবান হয়েছিল, সেই তথ্য অনুসন্ধান করা এখন সেবির পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবেদনকারী পক্ষের দাবি, সেবি আগে তদন্ত শুরু করলে ওই সমস্ত লেনদেনে কারা উপকৃত হয়েছিল তা জানতে পারত। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তা করা হয়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, অনেক আগে থেকেই সেবির কাছে আদানিদের অনিয়মের তথ্য ছিল। তারা তদন্তও করছিল। কিন্তু মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই তা ধামাচাপা পড়ে। চলতি মাসের গোড়ায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন টুইটার) দাবি করেন, পুরনো একটি চিঠি থেকে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, ২০১৪ থেকে সেবি আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা জানত। কিন্তু সেবির তৎকালীন চেয়ারম্যান এখন আদানিদের সংস্থার মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন ডিরেক্টর। তাঁর তোপ, ‘‘এই যোগসাজশই ভারতকে বিক্রি করে দিচ্ছে।’’
এর পরে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কে সি বেণুগোপাল এক্স-এ সেই চিঠি তুলে ধরেন। সেটি ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি তৎকালীন সেবি চেয়ারম্যান ইউকে সিন্হাকে পাঠিয়েছে রাজস্ব সংক্রান্ত তদন্তকারী ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স। আরব আমিরশাহি থেকে আদানি গোষ্ঠীর আমদানি করা কিছু পণ্যের বেশি মূল্যায়নের কথা লেখা আছে সেখানে। বলা হয়েছে, ভারত থেকে দুবাই হয়ে মরিশাসে তাদের ৬২৭৮ কোটি টাকা সরানো হয়েছে। সিন্হা যেন তা দেখেন। বেণুগোপালের দাবি, ওই বছর ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। ধামাচাপা পড়ে আদানিদের নিয়ে সেবির তদন্ত। ২০১৭ সালে সিন্হা আদানিদের ‘ক্লিন চিট’ দেন। সিন্হাই এখন আদানিদের মালিকানাধীন একটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীন ডিরেক্টর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy