কামাখ্যায় বলি বন্ধের ডাক দিয়ে জনতার রোষের মুখে পড়লেন জুবিন গর্গ। এর আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ছিঁড়ে ফেলার ডাক দিয়েছিলেন তিনি। তাতে বিধায়কদের একাংশ তাঁর সমালোচনা করলেও অসমবাসীকে পাশে পেয়েছিলেন যোরহাটের এই গায়ক-প্রযোজক। কিন্তু কামাখ্যার ধর্মাচার ও ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিভিন্ন আচার নিয়ে সমালোচনা করায় জুবিনের উপরে ক্ষিপ্ত রাজ্যের অনেকে। কামাখ্যাবাসী ঘোষণা করেছেন, প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে জুবিনের জন্য নীলাচল পাহাড়ের রাস্তা বন্ধ থাকবে।
অভিনেতা গোবিন্দ রবিবার কামাখ্যা দর্শনে এসে মোষ বলি দেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে জুবিন গত রাতে কামাখ্যার বিহু অনুষ্ঠানের মঞ্চে বলেন, “মাকে তুষ্ট করতে হলে মোষ কেন, গোবিন্দ নিজেকে বলি দিলেই পারতেন। মা কামাখ্যা হোন বা শিব-কৃষ্ণ-দুর্গা— কেউই অকারণ পশুহত্যা চান না। বলিপ্রথা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।” পাশাপাশি জুবিনের বক্তব্য, ব্রাহ্মণের সন্তান হয়েও তিনি পৈতে ছিঁড়ে ফেলেছেন। কারণ, পৈতা পরতে গেলে ন’টি গুণের অধিকারী হতে হয়। শুধু ব্রাহ্মণের সন্তান হলেই ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না। জাতিভেদ, বর্ণভেদ প্রথারও বিরোধিতা করে জুবিন বলেন, “কামাখ্যায় দাঁড়িয়ে আমি ‘ইয়া আলি’ গাইছি। মুম্বইয়ের গণপতি পুজোতেও ‘ইয়া আলি’ বেজেছে। গানের কোনও ধর্মভেদ হয় না। মানুষের মধ্যেও তা থাকা উচিত নয়।”
জুবিনের এই মত কামাখ্যার মানুষ মানতে পারেননি। তাঁরা প্রতিবাদে সরব হন। তাঁদের দাবি, জুবিনের নিজস্ব মতামত থাকতেই পারে, কিন্তু কামাখ্যায় দাঁড়িয়ে এখানকার ধর্মাচরণ, বলিপ্রথা, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের নিন্দা মেনে নেওয়া হবে না। প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাইলে জুবিনের কামাখ্যায় ঢোকা বন্ধ বলেও ঘোষণা করা হয়।
কামাখ্যা দেবালয়ের সচিব ভূপেশ শর্মা অবশ্য বলেন, “মন্দির কমিটি জুবিনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেনি। তা জনতার সিদ্ধান্ত। জুবিনকে গান গাইতে ডাকা হয়েছিল। তার বদলে তিনি নিজের ছবির প্রচার, ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও বলির বিরোধিতা করে চললেন।” ভূপেশবাবু মতে, বলি কামাখ্যার সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। এখানে কাউকে বলি দিতে বাধ্য করা হয় না। আবার বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। অবশ্য যুগ বদলাচ্ছে। চিন্তাধারা বদলাচ্ছে। মানুষ নিজেই যদি বলিপ্রথা বন্ধ করে দেয়, তবে তাই হবে। কিন্তু কারও ধর্মাচারে আঘাতের অধিকার জুবিনের নেই।
পশুপ্রেমী সংগঠনগুলি জুবিনের প্রতিবাদকে স্বাগতই জানিয়েছে। ‘পিপল ফর অ্যানিম্যাল’-এর রাজ্য চেয়ারপার্সন সঙ্গীতা গোস্বামী বলেন, “জুবিন নিজেও পিএফএ-র সদস্য। তিনি যা বলেছেন, তা সকলের বোঝা উচিত। প্রতি বছর কামাখ্যায় কয়েক হাজার পাঁঠা, বিস্তর পায়রা ও শতাধিক মোষ বলি হয়। এর কোনও শাস্ত্রীয় যুক্তি নেই। দেবী মোষ নয়, মহিষাসুর বধ করেছিলেন। অসুর যদি বাঘের রূপ ধরত, তা হলে কি বাঘ ধরে এনে বলি দেওয়া হত?” তাঁর প্রশ্ন, “আমি নিজেও কামাখ্যায় গিয়ে বলি বন্ধের কথা বলেছি। তার পরেও নিয়ম করে কামাখ্যায় পুজো দিতে যাই। আমাকে আটকানো না হলে, জুবিনকে কেন আটকানো হবে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy