প্রতীকী ছবি
মুকেশ এবং অনিল অম্বানীর জেড প্লাস নিরাপত্তা তুলে নিতে যে মামলা দায়ের হয়েছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশিই, বম্বে হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করেছে সুপ্রিম কোর্ট। যার সারমর্ম হল, যাঁদের জীবন সংশয় রয়েছে এবং যাঁরা সেই নিরাপত্তার ব্যয় বহন করতে পারবেন, তাঁদেরই জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া উচিত।
বস্তুত, বম্বে হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলেছিল, যাঁদের জীবন সংশয় রয়েছে এবং যাঁরা নিজেদের নিরাপত্তা বাবদে খরচ বহন করতে সক্ষম, একমাত্র তাঁদেরই এই উচ্চপর্যায়ের সরকারি নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন জনৈক হিমাংশু অগ্রবাল। তাঁর আবেদনে বলা হয়েছিল, অম্বানী ভাইদের নিরাপত্তার জন্য জনগণের টাকা ব্যবহার হচ্ছে। তাঁরা যথেষ্ট ধনী এবং নিজেদের নিরাপত্তার খরচ নিজেরা বহন করতে সক্ষম। অতএব তাঁদের সরকারি জেড প্লাস নিরাপত্তা তুলে নেওয়া হোক। কিন্তু তাতে সায় দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলেছে, জীবন সংশয় থাকলে এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি নিরাপত্তার ব্যয় বহন করতে পারলে ব্যক্তিবিশেষকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
পুলিশ রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে কাদের জীবন সংশয় রয়েছে, তা নির্ধারণ করে সরকার। তার পরেই তাঁদের সরকারি জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, জেড প্লাস নিরাপত্তাপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের জীবন সংশয়ের বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় অন্তর খতিয়ে দেখা উচিত সরকারের।
সুপ্রিম কোর্টে অম্বানীদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি জানান, অম্বানী ভাইদের জীবন সংশয় রয়েছে। সরকার তাঁদের যে নিরাপত্তা দিচ্ছে, তার খরচও দিচ্ছেন অম্বানীরা। আদালত প্রশ্ন তোলে, যে সব ব্যক্তির জীবন সংশয় রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং যাঁরা নিজেদের নিরাপত্তার খরচ বহন করতে রাজি, তাঁদের সকলকেই কি নিরাপত্তা দেওয়া উচিত সরকারের? এর পর সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকেই জানায়, কোনও ব্যক্তি যদি জীবন সংশয় থাকে এবং তিনি যদি তাঁর নিরাপত্তার খরচ দিতে পারেন, তা হলে তাঁকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া উচিত সরকারের।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে জেড প্লাস বা তার সমকক্ষ নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডায়মন্ডবারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ বছরের গোড়া থেকে নির্বাচন-কৌশলী প্রশান্ত কিশোরকেও প্রায় সমকক্ষ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে তাঁর জীবনের ঝুঁকির কথা ভেবে। নিরাপত্তার দিক থেকে এর পরের তালিকাতেই রয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, ফিরহাদ হাকিম। তা ছাড়াও রয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
২০১৩ সালে ছত্তীসগঢ়ের দরবা উপত্যকায় সেখানকার প্রথম সারির কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলা চালায় মাওবাদীরা। হামলায় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল, ছত্তীসগঢ়ের প্রথম সারির কংগ্রেসনেতা মহেন্দ্র কর্মা, নন্দ কুমার প্যাটেলের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের জীবনের ঝুঁকি এবং তাঁদের জন্য কী নিরাপত্তা রয়েছে, তার সমীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পরই নিরাপত্তা বাড়ানো হয় মমতা, বুদ্ধদেব এবং মমতা মন্ত্রিসভার দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। এ ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত দু’বছরে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ-সহ কয়েক জন বিজেপি নেতাকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং কমান্ডোদের দিয়ে জেড ক্যাটিগরির সমকক্ষ নিরাপত্তা দিচ্ছে।
এর আগে ২০১৩ সালেও দেশের শীর্ষ আদালত সরকারি খরচে জেড প্লাস নিরাপত্তা আদৌ কারা পেতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তখনও আদালত প্রশ্ন তুলেছিল, যাঁরা সরকারি খরচে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পাচ্ছেন, তাঁদের আদৌ কতটা ‘জীবনের ঝুঁকি’ রয়েছে। তার পরেও অবশ্য নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছবিটা বদলায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy