Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
NRC

‘বিদেশি’ বা ‘সন্দেহভাজন’, ভোট ছোঁয় না যাঁদের

আবার নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-তে নাম ওঠার পরেও স্বস্তিতে নেই রুবি পুরকায়স্থ, মালঞ্চ দাসেরা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২১ ০৭:০৭
Share: Save:

নাগরিকত্ব আইনের সর্বশেষ সংশোধনী সংসদে পাশ হয়েছে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর। পরের দিন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাতে স্বাক্ষর করেন। শতায়ু ‘বিদেশি’ চন্দ্রধর দাস আশায় ছিলেন, কোর্ট-কাছারিতে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না আর। নতুন আইনেই ভারতীয় নাগরিক হওয়ার স্বীকৃতি মিলবে। না, কাছাড় জেলার আমড়াঘাটের চন্দ্রধরবাবুর সেই আশা পূরণ হয়নি। বিল পাশের পর পুরো এক বছর বেঁচে থাকলেও সেই সংশোধনী (সিএএ) কার্যকর হল না। তাঁর মেয়ে নিয়তি দাস বললেন, “আমাদের কাছে ভোটের কী আর গুরুত্ব? বিদেশির ছেলেমেয়ে বলে এনআরসি-র জন্যও আমাদের আবেদন বিবেচনায় আসেনি।”

আবার নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-তে নাম ওঠার পরেও স্বস্তিতে নেই রুবি পুরকায়স্থ, মালঞ্চ দাসেরা। একে তো নাম তোলার প্রক্রিয়ায় তাঁদের বেশ ভুগতে হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, ওই এনআরসি সরকার মানে না৷

ত্রিপুরার ধর্মনগরের মেয়ে রুবি দেড় দশক ধরে শিলচরের গৃহবধূ৷ বললেন, “পঞ্চাশ বছর আগের নথি খুঁজে বার করতে পারেননি বাবার স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরে বিকল্প নথির জন্য কী দৌড়ঝাঁপটাই না করলাম!”

‘পাঠশালা পাশ’ মালঞ্চ দাস সবচেয়ে পুরনো নথি বলে বাবার রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট যত্ন করে রেখেছিলেন। অন্য কিছু ধরে রাখতে পারেননি। সেই সার্টিফিকেটের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য যখন ত্রিপুরা সরকারের কাছে পাঠানো হল তখন তা আর ফিরে আসেনি। সে কী দুশ্চিন্তা বিধবা মালঞ্চের! কারণ চন্দ্রধর দাসের ক্ষেত্রেও যে একই ঘটনা ঘটেছিল।

১০২ বছরের চন্দ্রধরের অবশ্য এনআরসি-তে নাম তোলার সুযোগ ছিল না। আচমকাই পুলিশের সন্দেহ হয়, তিনি বোধ হয় বাংলাদেশি। ভোটার তালিকায় ডি (অর্থাৎ ডাউটফুল) চিহ্নিত হলেন। মামলা গেল ফরেনার্স ট্রাইবুনালে। শুনানিতে চন্দ্রধরবাবু ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে রিফিউজি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট জমা করেছিলেন। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ১৯৫৬ সালে তিনি ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন। ট্রাইবুনাল ওই সার্টিফিকেটের যথার্থতা মানতে পারেনি। অন্যান্য নথি দেখাতে নির্দেশ দেয়। সে দিন আর কোনও নথি হাতে না-থাকায় তাঁকে বিদেশি বলে রায় দেওয়া হয়। ১০২ বছর বয়সে তাঁর ঠাঁই হয় শিলচর সেন্ট্রাল জেলে (কাগজে-কলমে যা ডিটেনশন সেন্টার)। তিন মাস পরে অসুস্থ হয়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে তাঁর জামিন মঞ্জুর হয়েছিল৷

সে সব ভেবে মালঞ্চ নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে শুধু নথির সন্ধান করে গিয়েছেন। আত্মীয়-স্বজনের কারও কোনও কাগজে যদি তাঁর বাবার নামের উল্লেখ মেলে! শেষে ওই পথেই রেহাই পান তিনি।

ভোটের কথা উঠতেই রুবি বললেন, “আজও চিন্তা পিছু ছাড়ে না। এনআরসি-তে নাম ওঠার পরে মনে হয়েছিল, পরিশ্রম সার্থক। কিন্তু এখন শুনি, সরকার তা মানতে রাজি নয়।’’ বিস্মিত মালঞ্চও, “নিজেরা যে পঞ্জি তৈরি করল, সেটাই বাতিল করে দিতে চাইছে।”

ভোটের ইস্তাহারেও বিজেপি জানিয়েছে, ক্ষমতায় ফিরলে তারা সংশোধিত এনআরসি প্রকাশ করবে। একেই হাতিয়ার করে কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব বললেন, “বিজেপিকে ভোট দিলে আবারও কাগজপত্র জোগাড়ের জন্য তৈরি থাকতে হবে।” বিজেপি সাংসদ রাজদীপ রায় অবশ্য এই বলে আশ্বস্ত করছেন যে, “প্রকৃত ভারতীয়দের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। আর উদ্বাস্তুদের সুরক্ষার জন্য তো সিএএ রয়েছেই। পাশ যখন হয়েছে, বিধিও হবে।’’

স্বেচ্ছাসেবী সাধন পুরকায়স্থ, জয়দীপ ভট্টাচার্যদের আক্ষেপ, “বিজেপি হিন্দুত্বের কথা বলে। তাদের আমলেই সিএএ হল। কিন্তু বিধি প্রণয়ন হতে হতে চন্দ্রধর দাস মারা গেলেন, জিরিঘাট কলোনির কাজলবালা দেব ডিটেনশন ক্যাম্পে থেকে মানসিক ভারসাম্য হারালেন।”

সাধন-জয়দীপদের আক্ষেপ, “অসমে ভোট আসে, ভোট যায়। বাঙালিরা সন্দেহভাজনই থেকে যান। তিনি হিন্দু হোন বা মুসলিম!”

অন্য বিষয়গুলি:

Assam Central Government NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy