প্রতীকী ছবি।
রাম লালার জন্মস্থান বলে বিশ্বাস, এই যুক্তিতে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার বার্ষিকী ছিল সোমবার। সেই দিনটিতেই মথুরায় শাহি ইদগা মসজিদের অভ্যন্তরে কৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপনের কর্মসূচি নিয়েছিল চারটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, যাদের পিছনে ছিল বিজেপির একাংশ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। কারণ, এ ক্ষেত্রেও ‘বিশ্বাস’ যে ধর্মগ্রন্থের চরিত্র কৃষ্ণের জন্মস্থান ওই মসজিদের অভ্যন্তরেই। এই নিয়ে সোমবার টানটান উত্তেজনা ছিল মথুরায়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। পুলিশি টহল ছিল নজরে পড়ার মতো। তার মধ্যে কার্যত শুনশান ছিল শহরের রাস্তাঘাট।
অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা, শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি নির্মাণ ন্যাস, নারায়ণী সেনা এবং শ্রীকৃষ্ণ মুক্তি দল— এই চারটি সংগঠন কয়েক মাস আগে থেকেই প্রচার করে আসছিল, মিছিল করে গিয়ে তারা মথুরার শাহি ইদগা মজজিদে ঢুকে ‘জলাভিষেক’ করে ‘শুদ্ধিকরণ’ করবে। তার পরে সেখানে কৃষ্ণের একটি বিগ্রহ স্থাপন করবে। এই কর্মসূচির অনুমোদন চেয়ে জন্য পুলিশের কাছে আবেদনও করেছিলেন সংস্থাগুলির নেতারা। পুলিশ পত্রপাঠ তা খারিজ করে দিলেও সংগঠনের নেতারা হুমকি দিয়ে আসছিলেন— ৬ ডিসেম্বর বাবরি ধ্বংস পুলিশের অনুমোদন নিয়ে হয়নি, এ দিনের কর্মসূচিতেও পুলিশকে তোয়াক্কা করা হবে না। বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়ায় উত্তরপ্রদেশ জুড়ে। আসন্ন নির্বাচনের মুখে সেই আঁচকে বাড়িয়ে তুলে হিন্দুত্ববাদী ভোটকে এককাট্টা করার লক্ষ্য নিয়ে মাঝে মাঝেই তাতে ইন্ধন দিয়েছেন বিজেপির নেতারা। চার দিন আগেই রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য টুইট করে বলেন, অযোধ্যা ও কাশীতে মস্ত মন্দির তৈরি হচ্ছে, পরে মথুরায় কৃষ্ণের জন্মস্থানেও তেমন মন্দির নির্মাণ করা হবে।
সংবিধানে ধর্মস্থানের চরিত্র বদলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি আইনে বলা হয়েছে, ১৯৪৭-এ দেশ স্বাধীন হওয়ার সময়ে যে সম্প্রদায় যে ধর্মস্থানে উপাসনা করেন, তা পরিবর্তন করা যাবে না। অযোধ্যার রাম মন্দিরের জন্য ১৯৯১ সালে একটি বিশেষ আইন আনা হলেও, বলা হয় সে’টি শুধুমাত্র সেই একটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। মসজিদের জায়গায় কৃষ্ণ মন্দির গড়ার অনুমতি চেয়ে হিন্দুত্ববাদীদের করা মামলা এই আইনে এর আগে খারিজ করেছে আদালত। কিন্তু সম্প্রতি মথুরার একটি আদালত এই মামলা গ্রহণ করে সরকার ও মসজিদ কর্তৃপক্ষকে নোটিস দিয়ে তাদের অবস্থান জানতে চেয়েছে। বিজেপি সাংসদ রবীন্দ্র কুশওয়াহা সোমবার জানিয়েছেন, মথুরায় মন্দির হবেই। এ জন্য ধর্মস্থান পরিবর্তনে নিষেধাজ্ঞার আইন বদলানোটা নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে কিছুই নয়। কুশওয়াহা বলেন, “অযোধ্যা, কাশী এবং মথুরা নিয়ে প্রথম থেকেই বিজেপির পরিষ্কার অবস্থান রয়েছে। এই তিন জায়গার সঙ্গে মানুষের বিশ্বাস জড়িত। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে যুক্ত এই জায়গাগুলি। অযোধ্যার ফয়সালা হয়ে গিয়েছে, কাশীতে পুরনো গর্বকে ফিরিয়ে এনে নতুন মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। এর পরে মথুরার পালা।” অযোধ্যার রাম মন্দিরের প্রধান পূজারী সত্যেন্দ্র দাস অবশ্য মথুরার মন্দির নিয়ে কোনও উৎসাহ দেখাননি। তাঁকে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, “আমাদের এক্তিয়ার রাম লালার মন্দির পর্যন্ত। সেখানে বিশাল মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। এর পরে কাশীতে মন্দির হবে না মথুরায়, সে সব বিজেপির ব্যাপার। তারা তাদের রাজনীতি চালিয়ে যাবে।”
মথুরায় এ দিন রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড গড়েছিল পুলিশ। কাল থেকেই বেশ কয়েক বার মহড়া দিয়েছে দাঙ্গা পুলিশের বিশাল বাহিনী। ১৪৪ ধারা মেনে চলার জন্য মাইকে বার বার ঘোষণা করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। সব মিলিয়ে উত্তেজনা থাকলেও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি পিছিয়ে যাওয়ায় অশান্তি ছড়ায়নি। তবে আস্ফালনে খামতি রাখেননি বিজেপির নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy