বিরোধী নেতা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, নির্বাচন কমিশনারের পর এ বার শিল্পমহল।
পেগাসাস স্পাইওয়্যার তদন্তে উঠে আসা নতুন তথ্য অনুযায়ী, বহুজাতিক সংস্থা মেহিকো মনসান্টো বায়োটেক ও মনসান্টো ইন্ডিয়া সংস্থার একাধিক কর্তাব্যক্তির মোবাইল আড়ি পাতার জন্য নিশানা করা হয়েছিল। কৃষি-প্রযুক্তি সংস্থা মনসান্টো এ দেশে জিন প্রযুক্তিতে তৈরি তুলোর বীজ বা বিটি কটনের বীজ বেচার চেষ্টা করেছিল বলে ২০১৭ ও ২০১৮-তে অভিযোগ ওঠে। সে সময় মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার তদন্ত শুরু করে। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর দফতরও নির্দেশ দিয়েছিল। এ বার পেগাসাস তদন্ত বলছে, ঠিক ওই সময়েই ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার কাজে লাগিয়ে মনসান্টো সংস্থার ৬ জন উচ্চপদস্থ কর্তার ফোন আড়ি পাতার নিশানায় ছিল।
তদন্ত অনুযায়ী, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত অসমের ছাত্র সংগঠন আসু-র নেতা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য, উগ্রপন্থী সংগঠন আলফা-র আলোচনাপন্থী নেতা অনুপ চেটিয়া, নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন-এর ৪ জন নেতার ফোনও পেগাসাসের নিশানার তালিকায় ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ হল, প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী নিজেই এনএসসিএন-এর সঙ্গে ঐতিহাসিক নাগা শান্তি চুক্তি হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তার পরেও নাগা নেতাদের ফোনে আড়ি পাতা বা তার চেষ্টা হয়েছিল।
যে ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও ফোন হ্যাক করার পেগাসাস স্পাইওয়্যার বিভিন্ন দেশকে বেচেছিল, তাদের তথ্যভাণ্ডার থেকেই প্রায় ৫০ হাজার ফোন নম্বরের তালিকা ফাঁস হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই এ দেশের ৩০০-র বেশি নম্বর রয়েছে। ভারত-সহ গোটা বিশ্বের একগুচ্ছ সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে তদন্ত করার দেখা গিয়েছে, এ দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, সাংবাদিক থেকে সমাজকর্মী, শিল্পপতিদের ফোন পেগাসাসের নিশানায় ছিল।
রবিবার থেকে একের পর এক তথ্য প্রকাশ্যে আসতে শুরু করার পরে ৭২ ঘণ্টা কেটে গেলেও মোদী সরকার এখনও একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। তা হল, মোদী সরকার কি ইজ়রায়েল থেকে পেগাসাস কিনেছিল? ইজ়রায়েলের এনএসও বলেছে, তারা শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাকেই স্পাইওয়্যার বেচেছে। ভারত তা কিনেছিল কি না, সে বিষয়ে হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না মোদী সরকার। বিজেপি সাংসদ সুব্রহ্মণ্যন স্বামী এ দিন টুইটে বলেছেন, ‘যদি আমাদের কিছু লুকনোর না থাকে, প্রধানমন্ত্রীর উচিত ইজ়রায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ঘটনার সত্যতা জানা এবং ভারতের পক্ষে কে এনএসও-কে পেগাসাসের দাম মিটিয়েছে, তা জানতে চাওয়া।’ বিরোধীদের বক্তব্য, এর ফলে সরকারই আড়ি পেতেছে বলে প্রমাণ হচ্ছে। এডিটর্স গিল্ড আজ বিবৃতি দিয়ে বলেছে, নিজের দেশের নাগরিকদের উপর সরকারই নজরদারি করেছে বলে সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে।
বিরোধীরা যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি)-র তদন্ত দাবি করলেও, বিজেপি তার পক্ষপাতী নয়। আগামী সপ্তাহে শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সরকারের বক্তব্য, বেআইনি ভাবে কারও ফোনে আড়ি পাতা হয়নি। কিন্তু স্পাইওয়্যার দিয়ে ফোন হ্যাক করাটাই বেআইনি বলে আইনজীবীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অশোক গহলৌত, কপিল সিব্বলের মতো নেতারা সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। যে ভাবে রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মীদের সঙ্গে সাংবাদিকদের ফোনও হ্যাক করা হয়েছে, আজ এডিটর্স গিল্ড তার কড়া নিন্দা করেছে। গিল্ডের বক্তব্য, ‘এটা বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের উপরে বেপরোয়া হামলা। এই নজরদারির মূল বার্তা হল, সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক বিরোধিতাকে এখন সন্ত্রাসবাদের সমান করে দেখা হচ্ছে।’
কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের বক্তব্য, সংবাদমাধ্যমের উপরে নজরদারির প্রশ্নে ভারত আজারবাইজান, মরক্কো, পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে এক শ্রেণিতে চলে এসেছে। যেখানে কোনও গণতন্ত্র নেই। এডিটর্স গিল্ডের প্রশ্ন, ‘সরকার বাক্স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টা না-করলে সাংবিধানিক গণতন্ত্র কী ভাবে রক্ষা পাবে? কোন ধরনের সমাজের দিকে আমরা এগোচ্ছি, তা নিয়ে গভীর ভাবে ভাবা দরকার।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy