Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

যুদ্ধের ক্ষতই মেলাল শান্তির সংগ্রহশালায়

এক দিকে ব্রিটিশ ও মিত্রপক্ষের সেনা। অন্য দিকে আজাদ হিন্দ ফৌজ ও জাপানের সেনা। দু’পক্ষেই লড়ছেন ভারতীয়েরা। এক দল ভারতকে পরাধীন রাখতে। অন্যেরা দেশকে স্বাধীন করতে।

শান্তি-বার্তা: ইম্ফলের অদূরে লাল পাহাড়ের নতুন শান্তি সংগ্রহশালার প্রবেশপথে মিলেমিশে ভারত, ব্রিটেন ও জাপানের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

শান্তি-বার্তা: ইম্ফলের অদূরে লাল পাহাড়ের নতুন শান্তি সংগ্রহশালার প্রবেশপথে মিলেমিশে ভারত, ব্রিটেন ও জাপানের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০২:৫১
Share: Save:

এক সময়ে পরস্পরের রক্ত ঝরিয়েছেন তাঁদের স্বজন। মৃত্যুর সেই স্মৃতিই মিলিয়ে দিল তাঁদের!

এক দিকে ব্রিটিশ ও মিত্রপক্ষের সেনা। অন্য দিকে আজাদ হিন্দ ফৌজ ও জাপানের সেনা। দু’পক্ষেই লড়ছেন ভারতীয়েরা। এক দল ভারতকে পরাধীন রাখতে। অন্যেরা দেশকে স্বাধীন করতে। মায়ানমার থেকে নাগাল্যান্ডের কোহিমা হয়ে মণিপুরের ইম্ফল— দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই লড়াইয়ের ৭৫ বছর পূর্তি মিলিয়ে দিল সকলকেই! ইম্ফলের বিভিন্ন যুদ্ধ স্মৃতি সৌধে নিহতদের প্রতি গত কাল একত্রে শ্রদ্ধা জানালেন ভারত, জাপান ও ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা। মণিপুরেরই মইরাংয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম তেরঙা উড়িয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। সেখানে এখন রয়েছে আজাদ হিন্দ সংগ্রহশালা। এর পাশাপাশি লাল পাহাড়ে গত কাল উদ্বোধন হল জাপানের নিপ্পন ফাউন্ডেশন গড়ে দেওয়া ‘ইম্ফল পিস মিউজিয়াম’-এর। ইম্ফল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে মাইবাম লোকপা চিঙের পাহাড় এক সময় সৈনিকদের রক্তে লাল হয়েছিল। সেই থেকে স্থানীয় মানুষ একে লাল পাহাড় হিসেবেই চেনেন। সেই পাহাড়ের নতুন শান্তি সংগ্রহশালাটিতে রাখা হয়েছে স্থানীয় মানুষের দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহ করা বিশ্বযুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র, গোলা ও বিভিন্ন স্মারক।

কোহিমা ও ইম্ফলের যুদ্ধে অন্তত ৩০ হাজার জাপানি সেনা ও ব্রিটিশ বাহিনীর অন্তত ১৬ হাজার সেনার মৃত্যু হয়। ইম্ফলে বিশ্বযুদ্ধের সমাধিস্থল ও পিস মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জানানোর পরে জাপানের রাষ্ট্রদূত কেনজি হিরামাৎসু ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডমিনিক অ্যাসকুইথ বলেন, ‘‘এই সংগ্রহশালা সেই সব বীরেদের স্মৃতিকে অমর করে রাখবে যাঁরা নিজেদের জীবন অন্যের কারণে বিসর্জন দিয়েছিলেন। এটি ইতিহাসের এমন একটা অধ্যায়কে তুলে ধরবে— যা হিংসা ভুলে পারস্পরিক সম্প্রীতিকে জোরদার করার শিক্ষা দেয়। অনুষ্ঠানে ছিলেন জাপানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও নিহত সেনাদের পরিবারের সদস্যেরা। নিপ্পন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইয়োহেই সাসাকাওয়া শোনালেন, ইম্ফল যুদ্ধের সময় বিমান হানা থেকে কী ভাবে প্রাণে বেঁচেছিলেন তিনি। সাসাকাওয়ার উপলব্ধি, ‘‘যুদ্ধ ও নিহত বীরদের স্মৃতি, সাধারণ মানুষের মৃত্যু, অনাহার ও স্বজন হারানোর এই কাহিনি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজে শান্তি বজায় রাখাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য।’’

যুদ্ধের স্মৃতিচারণে কাছাকাছি আসায় উঠে এল সহযোগিতার প্রসঙ্গও। মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ মণিপুরের পর্যটন, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বিকাশের ক্ষেত্রে সহযোগিতা চাইলেন ব্রিটেন ও জাপানের। ব্রিটিশ হাইকমিশনার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, চলচ্চিত্র তৈরি ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মণিপুর সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। জাপানের রাষ্ট্রদূতের অঙ্গীকার, মণিপুরের সার্বিক বিকাশের শরিক হবেন তাঁরা। দেখেশুনে উপস্থিত এক বিদেশিনী বলে ফেললেন, ‘‘ইতিহাস বুঝি এ ভাবেই শিখিয়ে পড়িয়ে নেয়!’’

তাঁর নাম জানা হয়নি।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Imphal Peace Museum World War 2 Japan Manipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy