—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কিছুটা অভূতপূর্ব রাজনৈতিক আবহেই সোমবার থেকে শুরু হতে চলেছে অষ্টাদশ লোকসভার প্রথম অধিবেশন। তৃতীয় নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ ও অধিবেশন শুরুর মাঝে রেল দুর্ঘটনা, একাধিক সর্বভারতীয় পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা সামনে আসায় উজ্জীবিত বিরোধী শিবির। প্রথম দিন থেকেই কংগ্রেস, তৃণমূল, এসপি বা ডিএমকের মতো দল একজোটে ময়দানে নামতে প্রস্তুত। সংসদের শুরুর দিনে বিরোধীরা কোনও বৈঠক না করলেও, ঠিক হয়েছে বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ ইন্ডিয়া মঞ্চের সাংসদেরা হাতে সংবিধান নিয়ে একত্রে সংসদের দু’নম্বর দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। লক্ষ্য, শুরুর দিন থেকেই জোটের বার্তা দেওয়া। ফলে তৃতীয়বার জিতে এসেও অধিবেশন শুরুর আগে রীতিমতো ব্যাকফুটে বিজেপি নেতৃত্ব।
গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে একার শক্তিতে ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে সক্ষম হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এ বারে পরিস্থিতি ভিন্ন। বিজেপি সরকার এ বারে শরিক নির্ভর। প্রতিপক্ষ অপেক্ষাকৃত দুর্বল হওয়ায় গোড়া থেকেই প্রতি-আক্রমণের পথে এগোনোর কৌশল নিয়েছে বিরোধী দলগুলি। আগামী দু’দিন সাংসদদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। তা মিটে যাওয়ার পরেই স্পিকার নির্বাচন। কারও কারও মতে, প্রোটেম স্পিকার নির্বাচন নিয়ে আগামিকালই শুরুতে কিছু হট্টগোল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেন সবচেয়ে বেশি বার জিতে আসা সাংসদ কংগ্রেসের কে সুরেশকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হতে পারেন বিরোধীরা। তবে অনেকের মতে, মূল সংঘাত লাগবে স্পিকার নির্বাচনের দিন থেকে। অতীতের ১৭টি লোকসভাতে বিনা নির্বাচনে, সর্বসম্মতিক্রমে স্পিকার নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা এ বার শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছেন। তলে তলে যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে শরিকদের গুছিয়ে নিতে পাল্টা তৎপর রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্বও।
দিন কয়েক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম শীর্ষ নেতা পি চিদম্বরম। সেই সাক্ষাতের পরে দুই শিবিরের মধ্যেকার শীতলতা অনেকটাই কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকের মতে, নৈকট্য বাড়ছে দুই শিবিরের। যা গত পর্বে সে ভাবে দেখা যায়নি। বিশেষ করে তৃণমূল আসন সংখ্যা বাড়িয়ে লোকসভায় ফেরার পরে কংগ্রেস নেতৃত্বও চাইছেন আগামী দিনে যাতে সংসদে সুষ্ঠু যুগলবন্দি করে শাসক শিবিরকে অস্বস্তিতে ফেলা যায়। উভয়েই যে পরস্পরের প্রতি আস্থা রেখে এগোতে চায়, সেই বার্তা দিয়েছে দুই শিবিরই। আজ সংবাদপত্রে প্রকাশিত পি চিদম্বরমের প্রবন্ধ টুইট করে তৃণমূল নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন লেখেন,‘‘চিদাম্বরম যে বক্তব্য রেখেছেন, তার সঙ্গে আমরাও একমত। বিশেষ করে ফি বছর একশো দিন সংসদ চলার দাবি নিয়ে তৃণমূলও অতীতে সরব হয়েছে।’’
পাশাপাশি, তৃণমূলের ধাঁচে দণ্ডসংহিতা আইন নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেসও। বিরোধীদের বক্তব্য, গত অধিবেশনে যে ভাবে ১৪৬ সাংসদকে সাসপেন্ড করে ওই আইন পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শপথগ্রহণের বিষয়টি শেষ হলেই, অন্য দলগুলিকে পাশে নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ইন্ডিয়া মঞ্চের সব শরিক দলকে সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে সংসদে এই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান তাঁরা।
অন্য দিকে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বাংলার কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা রয়েছে। যেমন, তাঁদের দাবি, একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়ে এসেছে এক দশক ধরে। সেই দাবিদাওয়া আদায়ে বিরোধী জোটকে পাশে চাইছেন তাঁরা। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লির গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনকে কার্যত অন্ধকারে রেখেই। আগামী দিনে ওই বিষয়েও সংসদে ধারাবাহিক ভাবে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাত বার সাংসদ ও তিন বার মুখ্যমন্ত্রী থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিরোধী শিবিরে মমতার মতো দীর্ঘ সংসদীয় জীবন ও প্রশাসন চালানোর মতো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেত্রী এই মুহূর্তে নেই বললেই চলে। তৃণমূল চায়, মমতার সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাক বিরোধী মঞ্চ।
গত সরকারের বিভিন্ন পর্বে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে মতানৈক্যের ছবি ফুটে উঠেছিল। অতীতে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে যখন সংসদে বিরোধী দলের বৈঠক ডাকতেন, সেখানে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সাংসদকে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু এ বারে বিজেপির সংখ্যার দিক থেকে দুর্বল হওয়া, শরিক নির্ভরতা, রেল দুর্ঘটনা থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অস্বস্তিতে জড়িয়ে পড়ার আবহে মমতার সঙ্গে চিদম্বরমের বৈঠকের পরে সেই দূরত্ব অনেকটাই কেটেছে। তাই অষ্টাদশ লোকসভার একেবারে শুরু থেকেই ইন্ডিয়া মঞ্চের প্রধান দুই দল, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় দেখা যাবে বলেই মনে করছে উভয় শিবির। যা যথেষ্ট চিন্তায় রেখেছে বিজেপিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy