সংসদে চিদম্বরম। ছবি: পিটিআই।
সকলেই হেসে কুটোপাটি। রাজ্যসভায় বিরোধী বেঞ্চে সবাই হো হো করে হাসছেন।
হাসির কারণ কী? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘মোদী সরকার সংবিধানের ভাবনা নিয়েই চলছে।’’ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার সময় এই যুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। জানতেন, এই বিল সংবিধান সম্মত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। তাই আগেই বলে দেন কথাটা। লোকসভার পরে রাজ্যসভাতেও অভিযোগ উঠল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল অসাংবিধানিক এবং সংবিধানের পরিপন্থী।
জামিনে মুক্তি পেয়ে রাজ্যসভায় ফেরার পরে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম আজ প্রথম কোনও বিল নিয়ে বিতর্কে অংশ নিয়ে বলেন, এই বিল সুপ্রিম কোর্টে অসাংবিধানিক বলে খারিজ হয়ে যাওয়ার সব রকম কারণ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা সংসদের গালে থাপ্পড়। আমরা নির্বাচিত প্রতিনিধি। সংবিধান আমাদের প্রথমে যাচাই করতে বলেছে যে বিল সংবিধান সম্মত কি না। আমাদের দায়িত্ব রয়েছে, যে বিল পাশ করি তা যেন সংবিধান সম্মত হয়।’’ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরম আজ বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে জানতে চেয়েছেন, এই বিলকে কি সরকারের আইন মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বা অ্যাটর্নি জেনারেল সংবিধান সম্মত বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন? যদি দিয়ে থাকেন, তা হলে মন্ত্রকের সেই নোট সংসদে পেশ করা হোক। যদি অ্যাটর্নি জেনারেল সিলমোহর দিয়ে থাকেন, তা হলে তাঁকে সভায় ডাকা হোক। সেই নিয়মও রয়েছে।
জবাবে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের সব বিল আইন মন্ত্রকের স্বীকৃতি পেয়েই আসে। মন্ত্রক এই বিলকে সংবিধান সম্মত বলে মনে করেছে। তার পরেই মন্ত্রিসভার সিলমোহরের জন্য গিয়েছে। আইনমন্ত্রী হিসেবে তা স্পষ্ট করে দিতে চাই।’’ তাঁর যুক্তি, কেউ বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতেই পারেন। তার জন্য সংসদের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দুর্ভাগ্যজনক। রবিশঙ্করের যুক্তি, আদালত রায় দিলে তা নাকচ করার অধিকারও সংসদের রয়েছে।
কংগ্রেসের আর এক দুঁদে আইনজীবী কপিল সিব্বলও আজ অভিযোগ তুলেছেন, এই বিল সংবিধানের বিরুদ্ধে। তিনি অমিতকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন যে এই বিল ঐতিহাসিক। কারণ, এটি সংবিধানের মূল ভিত বদলে দিচ্ছে।’’ অমিত পাল্টা কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘আপনারা আদালতে গেলে বিচারপতিরা বলবেন, কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক।’’
চিদম্বরম, সিব্বল দু’জনেরই অভিযোগ ছিল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধানের ১৪-তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের চোখে সকলে সমান। রাষ্ট্র আইনের সামনে কোনও শ্রেণিবিভাজন করতে পারে না। কিন্তু অমিত, রবিশঙ্করের যুক্তি, ১৪-তম অনুচ্ছেদে আইনের চোখে সকলে সমান হলেও যুক্তিসঙ্গত শ্রেণিবিভাজন করা যায়। এখানে তিনটি রাষ্ট্রের ধর্মীয় নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। এই শ্রেণিবিভাজন যুক্তিসঙ্গত।
চিদম্বরম আজ অমিতের জন্য আধ ডজন প্রশ্নও তোলেন। এক, বাংলাদেশ-পাকিস্তান-আফগানিস্তানকে একই বন্ধনীতে কী ভাবে আনা হল? দুই, অন্য প্রতিবেশী দেশ কী ভাবে বাদ গেল? তিন, কী ভাবে ছ’টি ধর্মের মানুষকে বেছে নেওয়া হল? চার, রোহিঙ্গা, আহমদিয়ারা সংখ্যালঘু হয়েও কেন বাদ গেলেন? পাঁচ, ইব্রাহিমীয় ধর্মে শুধু খ্রিস্ট ধর্মকে রাখা হয়েছে। ইসলাম ও ইহুদি ধর্ম কেন বাদ গেল? ছয়, শ্রীলঙ্কার হিন্দু, ভুটানের খ্রিস্টানরা কেন বাদ গেলেন? চিদম্বরম বলেন, নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনকে স্বেচ্ছাচারিতার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ইচ্ছেমতো ঠিক করতে পারে, কাকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। শুধুমাত্র এই কারণে নাগরিকত্ব বিল আদালতে খারিজ হয়ে যেতে পারে। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমরা গণতন্ত্রের আর একটি স্তম্ভ, বিচারবিভাগের উপর দায় ঠেলে দিচ্ছি। এই বিষয়টি বিচারপতিদের টেবিলে যাবে। তাঁরা সম্মাননীয়, কিন্তু মানুষের দ্বারা নির্বাচিত নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy