সংসদের ওয়েলে নেমে আদানি কাণ্ড-জেপিসির তদন্তের দাবিতে সরব কংগ্রেস সাংসদেরা। ছবি: পিটিআই।
এত দিন যা ছিল স্রেফ অভিযোগ তা আজ হাতে-কলমে লোকসভায় প্রমাণিত হল বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। বিরোধীদের কণ্ঠস্বর আটকাতে মাইক বন্ধ তো হচ্ছিল। আজ টিভির পর্দায় লোকসভার অধিবেশন সম্প্রচার হল ঠিকই, কিন্তু কোনও আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেল না। গোটাটাই হল নীরবে। শব্দহীন টিভির পর্দা জুড়ে হাসি মুখে বসে রইলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। টিভির পর্দা তখনই সরব হল, যখন মুখ খুললেন তিনি। টিভির মাধ্যমে নজিরবিহীন নীরবতার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ।
গণতন্ত্র নিয়ে লন্ডনে বিতর্কিত মন্তব্য করা ছাড়াও রাহল গান্ধীর অন্যতম অভিযোগ ছিল, সংসদে বিরোধী কণ্ঠরোধে হামেশাই বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইক। এ যাবৎ ওই দাবি ভিত্তিহীন বলে দাবি করে এসেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু আজ নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থাকল লোকসভা টেলিভিশন। এ দিন অধিবেশন শুরু হতেই সংসদের ওয়েলে নেমে আদানি কাণ্ড-জেপিসির তদন্তের দাবিতে সরব হন কংগ্রেস সাংসদেরা। অন্য দিকে রাহুলের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার দাবি করে পাল্টা স্লোগান দিতে থাকেন বিজেপি সাংসদেরা। যেমনটি রোজ হয়।
কিন্তু যা কোনও দিন হয় না, সেই ঘটনাই আজ ঘটে লোকসভায়। বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁদের স্লোগান যাতে লোকসভার কক্ষ ছাড়িয়ে বাইরে যেতে না পারে সে জন্য অধিবেশন শুরুর কয়েক সেকেন্ড পরেই নীরব হয়ে যায় লোকসভা চ্যানেলের পর্দা। প্রায় কুড়ি মিনিট পরে এ দিনের মতো স্পিকার অধিবেশন বন্ধের ঘোষণা করার সময়ে সামান্য সময়ের জন্য সরব হয় টেলিভিশনের পর্দা। কংগ্রেস এবং বিরোধীদের অভিযোগ, বিরোধীদের প্রতিবাদের স্বর রুদ্ধ করতে ইচ্ছাকৃত ভাবে চ্যানেল নীরব করে দিয়েছিল মোদী সরকার। তাঁদের প্রশ্ন, পরের ধাপে কি লোকসভা চ্যানেলের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দেবে শাসক শিবির? যদিও শাসক দল বিজেপির পাল্টা যুক্তি, বিষয়টি নিছক ‘প্রযুক্তিগত ত্রুটি’ ছাড়া কিছুই নয়। এ প্রসঙ্গে সকালের টিভির পর্দার মতোই নীরব স্পিকার সচিবালয়।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার, অধিবেশন শুরুর পাঁচ থেকে সাত মিনিটের মধ্যে বিরোধী হট্টগোলের কারণে অধিবেশন মুলতুবি করে দিতে দেখা গিয়েছে স্পিকারকে। কিন্তু আজ প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে অধিবেশন চলে। অন্য দিন শাসক বেঞ্চ খালি থাকলেও, আজ ছিল সম্পূর্ণ ভর্তি। বিরোধী দল, মূলত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আজ রণংদেহি মনোভাব নেন বিজেপি সাংসদেরা। রাহুল গান্ধীর উদ্দেশে চলে পাল্টা স্লোগান-কটূক্তি। রাজনীতির অনেকের ধারণা, আসলে বিরোধীরা নয়, শাসক দল যে মনোভাব ও ভাষায় আজ কটূক্তি করেছে তা যাতে দেশবাসীর সামনে না আসে সে জন্যই টিভির পর্দা নীরব করে দেওয়া হয়। যদিও কংগ্রেস বলছে, রাহুল গান্ধীর অভিযোগ সত্য প্রমাণিত করে ছাড়ল শাসক দলই। কংগ্রেস আজ একটি ভিডিয়ো ক্লিপ টুইটারে পোস্ট করেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে, অধিবেশন শুরু হওয়ার পরে বিরোধীদের কন্ঠস্বর শোনা যাচ্ছে না। কিন্তু স্পিকার ওম বিড়লা যখন কথা বলছেন তখন তা শোনা যাচ্ছে। টুইটে লেখা হয়, ‘‘রাহুলজিকে বলতে দিন, বলতে দিন, বলতে দিন— এই স্লোগান শুরু হওয়ার পরেই দেখা যায় ওম বিড়লা হাসি মুখে এবং গোটা অধিবেশন নীরব। এটা কি গণতন্ত্র?’’
প্রসঙ্গত, গত সোমবার থেকে লোকসভায় তাঁর আসনের মাইকটি বন্ধ রয়েছে বলে স্পিকারকে চিঠি লিখে অভিযোগ করেছিলেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর বক্তব্য, বিরোধীরা যাতে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরতে না পারেন তার জন্য এমনটা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘রাহুল যে সত্যি কথা বলেছেন তা প্রমাণ হয়ে গেল। দু’দিন আগে স্পিকারের কাছে এই অভিযোগ আমি করেছিলাম।’’
তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে গত কাল রাতেই কলকাতা ফিরে গিয়েছেন। আজ সকালে তিনি লোকসভার অধিবেশন দেখবেন বলে টিভি চালিয়ে কোনও আওয়াজ না পেয়ে তাঁর কেব্ল টিভি অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং অভিযোগ জানান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায় যে সমস্যাটা সুদীপের টিভির নয়, লোকসভাতেই আওয়াজ বন্ধ হয়ে রয়েছে! সুদীপের বক্তব্য, “আমি পাঁচ বারের সাংসদ। এমন ঘটনা অতীতে কখনও দেখিনি।” যদিও তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, অতীতে বেশ কয়েক বার বিরোধীরা বলার সময়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ, কৃষি বিল পাশ করানোর সময়ে তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য শোনা যায়নি। কারণ তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু টিভির পর্দা সম্পূর্ণ ভাবে নীরব হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা অতীতে হয়েছিল কি না তা মনে করতে পারছেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy