ফাইল চিত্র।
আর যা-ই হোক, অন্তত মুসলিমরা বিজেপিকে ভোট দেবেন না। কংগ্রেস বা বিরোধী শিবিরের কাছেই মুসলিম ভোট আসবে। এতদিন এ কথা ভেবেস্বস্তি পেতেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবিরের নেতারা।
এ বার বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে খোদ নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে দলকে ‘বঞ্চিত ও অনগ্রসর’ সংখ্যালঘুদের কাছে পৌঁছনোর বার্তা দিয়েছেন, তাতে কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবির প্রমাদ গুণছে। কংগ্রেস মনে করছে, হিন্দি বলয় থেকে উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি-র মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে চাইছে বিজেপি। সে কারণেই মোদী ‘পসমন্দা’ মুসলিম বা অনগ্রসর মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করতে চাইছেন। বিরোধী শিবিরের বক্তব্য, বিজেপি এর আগে শিয়া মুসলিমদের মন জয়ের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে ব্যর্থ হয়েই এখন ‘পসমন্দা’ বা ওবিসি মুসলিমদের মন জয়ের চেষ্টা করছে। বিরোধী শিবিরের চিন্তার বিষয় হল, মুসলিমদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ‘পসমন্দা’ মুসলিম। যার অর্থ, মোদী মুসলিমদের অধিকাংশকেই কাছে টানার নীতি নিচ্ছেন।
ফারসিতে পসমন্দা-র অর্থ যারা পিছনে পড়ে রয়েছেন। বিজেপি যে পসমন্দা মুসলিমদের কাছে টানার চেষ্টা করবে, দলের জাতীয় কর্মসমিতিতে মোদীর দিশানির্দেশের আগেই তার প্রমাণ মিলেছিল। উত্তরপ্রদেশে দ্বিতীয় যোগী আদিত্যনাথ সরকার গঠনের পরে পসমন্দা মুসলিমদের নেতা দানিশ আজ়াদকে মন্ত্রী করা হয়। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্পেও গত কয়েক বছর ধরে পসমন্দা মুসলিমদের সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে এতদিন যাদব নেতারাই মুসলিম ভোটের একচ্ছত্র দাবিদার ছিলেন। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহ যাদব, বিহারে লালু প্রসাদ। লখনউ থেকে সমাজবাদী পার্টির এক নেতা বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী নিজের ওবিসি পরিচিতিকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে উত্তরপ্রদেশে অ-যাদব ওবিসি ভোট কুড়িয়েছেন। মুসলিমদের ক্ষেত্রেও তিনি ওবিসি মুসলিম ভোটব্যাঙ্ককে নিশানা করছেন।’’
কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে জাতপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বিজেপি হিন্দুদের মধ্যে দলিতদের ছোট ছোট সম্প্রদায়, বিভিন্ন ওবিসি সম্প্রদায়ের কাছে আলাদা ভাবে পৌঁছে তাদের ভোট জেতার চেষ্টা করে। একই ভাবে মুসলিমদের ক্ষেত্রেও মোদী একই কৌশল নিতে চাইছেন। এতদিন মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো যে সব সংস্থা মুসলিমদের পক্ষে সরব হয়েছে, তারা আসলে মুসলিমদের প্রতিনিধি নয় বলে বিজেপি বোঝাতে চেয়েছে। বাস্তবেই এই সংস্থাগুলিতে অভিজাত শ্রেণির মুসলিমদের দাপট বেশি। পসমন্দা মুসলিমরা নিজেদের শিক্ষা, রোজগারের সমস্যা নিয়ে আলাদা ভাবে সরব হওয়ার চেষ্টা করেন। বিজেপি মুসলিম সমাজের মধ্যে এই ফাটলকেই হাতিয়ার করতে চাইছে।’’
উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেসের এক সংখ্যালঘু নেতার বক্তব্য, বিজেপি প্রথমে তিন তালাক নিষিদ্ধ করার কথা বলে মুসলিম মহিলাদের ভোট টানার চেষ্টা করেছিল। এ ছাড়া বিজেপি মুসলিমদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায়ের নেতাদের গুরুত্ব দিয়েছে। শিয়া সম্প্রদায়ের মুখতার আব্বাস নকভিকে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী করা বা প্রথম যোগী সরকারে মহসিন রাজাকে মন্ত্রী করা এর উদাহরণ। সেখান থেকে বিজেপি যে এ বার পসমন্দাদের দিকে নজর দিচ্ছে, তারই প্রমাণ হল, নকভিকে আর রাজ্যসভায় প্রার্থী না করা, মহসিন রাজাকে সরিয়ে দানিশ আজ়াদকে মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসা। এই কংগ্রেস নেতার বক্তব্য, ‘‘এতদিন আমরা মুসলিমদের একটি অখণ্ড সমাজ হিসাবে ভেবে এসেছি। এ বার আমাদেরও ভুল শোধরাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy