বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিনে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
গান্ধী-নেহরু-পটেল-নেতাজি বা আম্বেডকর নন। তাঁদের বদলে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের জন্মদিনে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, হিন্দুত্ববাদী তাত্ত্বিক নেতা ভি ডি সাভারকর স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন। আগামী ২৮ মে সেই সাভারকরের ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। বেছে বেছে সেই দিনেই মোদী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করতে চলেছেন। আজ কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলল। কংগ্রেসের দাবি, এটা দেশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষদের অপমান। কেন প্রধানমন্ত্রী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। বিরোধীদের প্রশ্ন, কেন রাষ্ট্রপতি বা লোকসভার স্পিকার, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সংসদ ভবনের উদ্বোধন করবেন না?
বৃহস্পতিবারই লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার পরেই জানানো হয়, ২৮ মে উদ্বোধন হবে। আজ বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় জানান, ২৮ মে বিনায়ক দামোদর সাভরাকরের ১৪০তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৮৩ সালে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় আজ প্রশ্ন তুলেছেন, ২০২৩-এর ২৬ নভেম্বর দেশের সংবিধান ৭৫ বছরে পা দেবে। এই সংবিধানই দেশকে সংসদীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিল। সেই দিন নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন হওয়া যথোচিত ছিল। কিন্তু তার বদলে সাভারকরের জন্মদিনে উদ্বোধন হবে। এটা কতখানি প্রাসঙ্গিক? কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেন, ‘‘এ হল বেপরোয়া ভাবে সংবিধানের প্রণেতা ভীমরাও আম্বেডকরকে অস্বীকার করা। দেশের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষদের চরম অপমান। মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই পটেল, সুভাষচন্দ্র বসুর মতো সকলকে প্রত্যাখ্যান করা।’’
বেছে বেছে সাভারকরের জন্মদিনে সংসদ ভবনের উদ্বোধনের মধ্যে মহারাষ্ট্রের রাজনীতির কৌশল রয়েছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকেরা। কারণ কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল সাভারকরের বিরোধী হলেও শিবসেনা (ইউবিটি) বা এনসিপি মহারাষ্ট্রের ভূমিপুত্র সাভারকরকে ঘিরে স্থানীয় আবেগের কথা মাথায় রেখে এ বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নেয়। রাহুল ভারত জোড়ো যাত্রার সময়ে মহারাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে সাভারকরের নিন্দা করায় এনসিপি, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা তাঁর সমালোচনা করেছিল। বিজেপি নতুন করে মহারাষ্ট্রে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরাতে চাইছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা প্রশ্ন তুলেছেন, রাষ্ট্রপতির কি সংসদ ভবন উদ্বোধন করা উচিত ছিল না? এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসির প্রশ্ন, সংবিধানে সরকার ও আইনসভা ভাগ করা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান। আইনসভার নন। লোকসভার স্পিকার বা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান উদ্বোধন করতে পারতেন। করদাতাদের টাকায় সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এমন ভাব করছেন, তাঁর বন্ধুদের বেসরকারি তহবিলের মাধ্যমে সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। কংগ্রেসের লোকসভা সাংসদ মণিকম টেগোর প্রশ্ন তুলেছেন, নতুন সংসদে বিরোধীদের মাইক চালু থাকবে তো?
লোকসভার সচিবালয় বলছে, স্পিকারই প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধন করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিজেপি নেতা মালবীয়ের পাল্টা যুক্তি, ইউপিএ সরকারের সময়েই নতুন সংসদ ভবনের প্রয়োজনীয়তা টের পাওয়া গিয়েছিল। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের কথা ভেবে সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করেছেন। বিরোধীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নিজের কীর্তি স্থাপন করার জন্য করোনা অতিমারির সময়ে চিকিৎসা, অক্সিজেনের বদলে মোদী নতুন সংসদ ভবনে টাকা ঢালার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy