প্রতীকী ছবি।
স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে ব্যক্তিগত তথ্য হাতানোর চেষ্টার জন্য ইজ়রায়েলি সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা এনএসও-র বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বুধবারই ঘোষণা করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে যাঁদের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে আড়ি পাতার চেষ্টা হয়েছিল, তাঁদের ব্যক্তিগত ভাবেও সতর্কও করে দেয় মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থাটি। নামের সেই তালিকা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে হইচই, প্রশ্ন উঠেছে— কাদের হয়ে কাজ করছিল ইজ়রায়েলি সংস্থাটি? ভারত সরকারই তাদের দিয়ে আড়ি পাতাচ্ছিল না তো? সব নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিসর ও গোপনীয়তার অধিকারের পক্ষে সওয়াল করা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি জানিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব বলেছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে সর্বোচ্চ আদালতের উচিত সরকারকে নোটিস দেওয়া।
অ্যাকাউন্টে আড়ি পাতার চেষ্টা হচ্ছে বলে গত এক সপ্তাহ ধরে হোয়াটসঅ্যাপের কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়েছেন প্রায় দু’ডজন বিশিষ্ট মানুষ। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় কেন্দ্রের ‘শহুরে নকশাল’ তকমা দেওয়া বেশ কয়েক জনের আইনজীবী নিহাল সিংহ রাঠৌর, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করা আইনজীবী বেলা ভাটিয়া, মানবাধিকার কর্মী ডেগ্রিপ্রসাদ চৌহান। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বলে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপের তরফে জানানো হয়েছে, ভিডিয়ো কলের সময়ে ‘পেগেসাস’ নামে একটি স্পাইওয়্যার এঁদের ফোনে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও বা কিউ সাইবার টেকনোলজিস। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ৭৫ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকের অজান্তে ফোনে ঘাঁটি গেড়ে এই স্পাইওয়্যার তাঁর সব ব্যক্তিগত তথ্য ইজ়রায়েলি সংস্থাটিকে পাচার করত। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
এনএসও ওরফে কিউ সাইবার টেকনোলজিস কারা? স্পাইওয়্যার ছড়িয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ ও আড়িপাতার কাজই করে এই সংস্থা। তবে নিজেদের ওয়েবসাইটে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘কারও ওপর বেআইনি ভাবে নজরদারি আমরা চালাই না। কোনও দেশের সরকারি দফতর থেকে বরাত পেলে শুধু তাদের হয়ে কাজ করি আমরা।’ সরকারি সূত্রে খবর—২০১৭ থেকেই এই কিউ সাইবার টেকনোলজিস নামে ইজ়রায়েলি সংস্থাটিকে দিয়ে ‘কাজ করায়’ দিল্লি। কিন্তু আড়ি পাতার বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপ প্রকাশ করার পরে তাদের ঘাড়েই সব দায় চাপিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, ‘ভারতীয় নাগরিকদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। ঠিক কী ধরনের লঙ্ঘনের চেষ্টা হয়েছে, এবং কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষায় হোয়াটসঅ্যাপ কী ব্যবস্থা করেছে, তাদের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হযেছে।’
আড়ির নিশানায় থাকা মানবাধিকার কর্মী বেলা ভাটিয়ার সাফ কথা, ‘‘আমাদের সরকার ছাড়া আর কেউ এই কাজ করাতে পারে না!’’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘ইজ়রায়েলি সংস্থা ভীমা কোরেগাঁও মামলার আইনজীবীদের ফোনে কেন আড়ি পাতবে? সরকার জবাব দিক, কে এই আড়ি পেতেছে, কেনই বা পেতেছে।’’ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘ভারতের নাগরিকদের ওপর আড়ি পাতার জন্য কে পেগেসাস স্পাইওয়্যার ছড়াচ্ছিল, তা হোয়াটসঅ্যাপের কাছেই জানতে চায় সরকার। অনেকটা দাসো-র কাছেই জানতে চাওয়া, ভারতে রাফাল বেচে কে পয়সা করেছে!’
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা টুইটে বলেছেন, ‘গোপনীয়তার অধিকারের বিরুদ্ধে সওয়াল করেছিল এই বিজেপি সরকারই। সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারির আগে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে নজরদারির পরিকাঠামোও গড়ে তুলেছিল মোদী সরকার। সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এখন কোর্টের উচিত, সাম্প্রতিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধেও নোটিস জারি করা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিরোধীদের অভিযোগকে ‘সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে। বিবৃতিতে মন্ত্রক বলেছে, দেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy