ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যসভার বরখাস্ত হওয়া ১২ জন সাংসদকে নিয়ে শীতকালীন অধিবেশনের তৃতীয় দিনটিও একই ভাবে উত্তপ্ত থাকল। রাজ্যসভা দিনভর কার্যত অচল থেকেছে। পাশাপাশি অধিবেশন কক্ষের বাইরে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্নায় বসেছেন সাসপেন্ড হওয়া ১২ জন সাংসদ। তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় যোগ দিয়েছেন প্রায় সব বিরোধী দলের সাংসদরা। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, সাসপেন্ড হওয়া ১২ জনের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। বিরোধীদের দাবি, গোটা বিষয়টি নিয়ে এতটাই অস্বস্তিতে রয়েছে কেন্দ্র, যে ভাবে হোক এই বিরোধী ঐক্য ভাঙতে চাইছে।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এই সাসপেনশনের ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে বিরোধীদের সার্বিক ঐক্যের ছবি আজ তৈরি হয়েছে গাঁধী মূর্তির সামনে। কিন্তু এই ঐক্য যে নেহাতই ‘বিষয়ভিত্তিক’, তা কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে একই সারিতে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেওয়ার পরেও উল্লেখ করতে ভোলেননি তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, বিরোধী ঐক্য সম্পর্কে, ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের মনোভাব নিয়ে আপাতত চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল।
আজ সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের লোকসভার বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় এক দিকে বলেছেন, “আগে থেকে ঠিক করা কোনও বিরোধী জোটের মধ্যে আমরা নেই। ব্যাপারটা বিরোধী জোটের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকারও নয়। আজ আমরা সবাই একসঙ্গে ধর্না দিয়েছি। তার কারণ, বিষয়টি সবার ক্ষেত্রেই একই রকম গুরুত্বপূর্ণ। কোনও বিরোধী দলের সঙ্গে ঝগড়ার ব্যাপার নেই। প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে বলেছি। প্রত্যেকেই বিজেপি-র নীতির বিরুদ্ধে।” পাশাপাশি তাঁর কথায়, “এটা বুঝতে হবে যে তৃণমূলের রাজনৈতিক অবস্থান অন্য বিরোধী দলের তুলনায় আলাদা। কংগ্রেসের সঙ্গে এনসিপি, শিবসেনা সরকার চালাচ্ছে। ডিএমকে-র সঙ্গে তারা উনিশের লোকসভায় জোট করে লড়েছিল। আমাদের কারও সঙ্গে কোনও জোট নেই। তাই তৃণমূলের অবস্থান তো স্বতন্ত্র হবেই।”
সৌগতবাবু জানান, “সাসপেন্ড করার পর ১২ জন সাংসদের মধ্যে বিভাজনের চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এঁদের মধ্যে দু’জনকে চেয়ারম্যানের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা যাননি। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই ফাঁদে পা না-দেওয়ার জন্য।” কে এই দুজন, তা সৌগত রায় না জানালেও রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এঁরা শিবসেনার দুই সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, চেয়ারম্যানের ডাক পাওয়া সাংসদরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু কাল সাসপেনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে যুক্তি দি্য়েছিলেন, সাংসদরা অনুতপ্ত নন। বিরোধী দলের নেতার অনুরোধ বিবেচনা করা হবে না। পাশাপাশি রাহুল গাঁধীর বক্তব্য, সাংসদরা কেন ক্ষমা চাইবেন? দেশের মানুষের কথা তুলে ধরার জন্যই তাঁরা সংসদে উপস্থিত রয়েছেন। তাই ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। সরকার ও বিরোধী পক্ষের অনড় মনোভাবের জন্য বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা চলতি অধিবেশনে রাজ্যসভাকে আপাতত অচল করে রাখবে বলেই মনে করেছে রাজনৈতিক শিবির। তাদের মতে, হঠাৎ করেই বিরোধী দলগুলির সামনে সংসদ চত্বরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এবং মোদীকে তোপ দাগার সুযোগ চলে এসেছে। তা হাতছাড়া করতে রাজি নন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস এবং অন্য বিরোধীরাও।
আজ তৃণমূলের বিক্ষোভরত দুই সাংসদ দোলা সেন এবং শান্তা ছেত্রীকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন সৌগত রায়। তাঁর কথায়, “চেয়ারম্যান বলছেন সাসপেন্ড হওয়া সাংসদদের দুঃখপ্রকাশ করতে হবে। কিন্তু আমরা তো মনে করি সরকারেরই দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, কী ভাবে রাতে অন্ধকারে গায়ের জোরে তারা কৃষি বিল পাশ করিয়েছিল। আজ সেই বিলই তাদের ফিরিয়ে নিতে হল।” তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যদি সাসপেনশন তুলে না নেওয়া হয়, ২৩ ডিসেম্বর, অর্থাৎ অধিবেশনের শেষ দিন পর্যন্ত বিক্ষোভ-ধর্না চালাবেন তাঁদের দুই সাংসদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy