কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। —ফাইল চিত্র।
এত দিন বিজেপি নেতারা রথে চেপে ভোটের প্রচারে বের হতেন। এ বার লোকসভা ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারি আমলাদের রথে চেপে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজেরপ্রচারে নামানো হচ্ছে! সরকারি নির্দেশ জারি হয়েছে, সরকারি অফিসারদের ‘রথ প্রভারী’ হয়ে গ্রামে গ্রামে প্রচারে যেতে হবে। সেখানে মোদী সরকারের গত নয় বছরের ‘সাফল্য’ তুলে ধরতে হবে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে এর প্রতিবাদে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখেছেন। অন্যান্য বিরোধী দলগুলি দাবি তুলেছে, অবিলম্বে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হোক। এর আগে সেনাবাহিনীকেও একই ভাবে সরকারের প্রচারে নামানোর পরিকল্পনা হয়েছে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ।
বিরোধীদের বক্তব্য, এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম সচিব, অধিকর্তা, উপ-অধিকর্তাদের ‘রথ প্রভারী’ করে মাঠে নামানো হচ্ছে। কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, মোদী সরকারের একমাত্র মাথাব্যথা হল প্রচার নিয়ে। এখন দেশে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে হাওয়া উঠতে শুরু করেছে। তা সামলাতে মোদী সরকারের নির্দেশ হল, সরকারি কর্তাদের সরকারি কাজ ছেড়ে মোদীর হয়ে প্রচারে নামতে হবে। এর আগে ফৌজিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা ছুটিতে গিয়েও যেন সরকারের কাজের প্রচার করেন। সরকারি অফিসারদের কাজ রথ যাত্রা বের করা, প্রচার করা নয়। দেশে এই প্রথম বার সরকারি অফিসার থেকে ফৌজিদের এ ভাবে প্রচারে নামানো হচ্ছে। খড়্গের মতে, বিজেপি এ সব করে দেশকে দুর্বল করছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শেষ করছে। সেই কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এই নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে।
গোটা বিতর্কের শুরু কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা থেকে। কৃষিসচিব সেই নির্দেশে জানিয়েছেন, গত নয় বছরের মোদী সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে ‘বিকশিত ভারত, সঙ্কল্প যাত্রা’ আয়োজন করা হবে। তাতে ২০ নভেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রচার চলবে।
এর আগে দেশের বড় শহরগুলিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য তুলে ধরতে সবক’টি বিভাগকে ‘সেলফি পয়েন্ট’ তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। বলা হয়েছিল, সে সব নিজস্বী কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক ভাবে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি বা প্রমাণ আকারের কাট আউট। যার অর্থ, সেই সব নিজস্বীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি নিশ্চিত করা। গত ৬ অক্টোবর এই নির্দেশিকা জারি করে ‘কন্ট্রোলার জেনারেল অব ডিফেন্স অ্যাকাউন্টস’।
দেশের বিভিন্ন শহরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দফতরগুলিতে ওই পয়েন্ট তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই কলকাতা, মিরাট, বেঙ্গালুরু, নয়াদিল্লি, প্রয়াগরাজের মতো ৯টি শহরের নিজস্বী-কেন্দ্র সরকারি ছাড়পত্র পেয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, দেশে এ ধরনের ৮২২টি কেন্দ্র হবে, ভারতীয় সেনা তৈরি করবে প্রায় শ’খানেক। সেখানে কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন স্বচ্ছ ভারত, আত্মনির্ভর ভারত, আবাস যোজনা, স্বচ্ছ জল, উজ্জ্বলা যোজনাকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রক।
বিরোধীরা এ নিয়ে আপত্তি তুললেও বিজেপি এর মধ্যে আপত্তির কিছু দেখছে না। বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার বক্তব্য, “সরকারি কর্মীদের গ্রামে গ্রামে সরকারি প্রকল্পের প্রচার করতে বলা হয়েছে, যাতে সকলে এর সুবিধা পান। কংগ্রেসের তাতেও আপত্তি রয়েছে দেখে আমি অবাক। সরকারি প্রশাসনের এটা মূল কাজ না হলে আর কী হবে?”
বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের বক্তব্য, নির্বাচিত সরকার যেমন মনে করবে, আমলাদের তেমনই কাজ করতে হবে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা যাতে একশো শতাংশ যোগ্য সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছয়, তার জন্যই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা পবন খেরার প্রশ্ন, সরকারি আমলাদের কী ভাবে নির্বাচনের প্রচারে নামানো হতে পারে? সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “সরকারি আমলাতন্ত্রের এই রকম প্রবল অপব্যবহার আগে কখনও দেখা যায়নি। সরকারের প্রতিটি মন্ত্রককে বলা হচ্ছে, মোদী সরকারের আমলে কী কাজ হয়েছে, তা তুলে ধরতে। গোটা সরকারকে মাঠে নামানো হচ্ছে প্রচারের কাজে। সেনাবাহিনী, রেল কেউ বাদ থাকছে না। সবাইকে নরেন্দ্র মোদীর হয়ে ভোট প্রচার করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নিন্দনীয়। এই সরকারি নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy