Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in India

১৫০, ৪০০, ৬০০, এক দেশ এক দাম কেন নয়, প্রশ্ন-ঝড়ে টিকা

কেন্দ্রের নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, ৪৫ বছরের উপরে থাকা ব্যক্তি, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যেই প্রতিষেধক পাবেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবদাদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১৬
Share: Save:

৪৫-এর নীচে টিকার দায় রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু ৪৫-ঊর্ধ্বদের জন্য কেন্দ্র যে টিকা ১৫০ টাকায় কিনছে, সিরাম সংস্থার সেই কোভিশিল্ড প্রতিষেধক রাজ্যকে ৪০০ টাকা ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ৬০০ টাকায় কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে!

দেশের মানুষ যখন প্রতিষেধকের জন্য হাহাকার করছেন, তখন একই প্রতিষেধকের তিন ধরনের দাম কেন হবে, প্রশ্ন তুলে বিরোধীদের বক্তব্য, এ হল সরকারের কিছু শিল্পপতিকে আরও ধনী করে দেওয়ার কৌশল মাত্র। বিরোধীশাসিত রাজ্যগুলির বক্তব্য, প্রতিষেধক দেওয়ার প্রশ্নে এ ভাবে দায়িত্ব এড়ানো গর্হিত অপরাধ।

কেন্দ্রের নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, ৪৫ বছরের উপরে থাকা ব্যক্তি, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যেই প্রতিষেধক পাবেন। কিন্তু ৪৫ বছরের নীচে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্যের। এ ক্ষেত্রে প্রতিষেধক সংস্থা যে দাম ধার্য করবে সেই দামেই টিকা কিনতে হবে রাজ্যগুলিকে। কেন্দ্র ভর্তুকিতে প্রতিষেধক পেলেও রাজ্য বা বেসরকারি হাসপাতাল সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। তবে কেন্দ্রের দাবি, বেসরকারি হাসপাতালগুলি যাতে কালোবাজারি করতে না-পারে তার জন্য নজরদারি চালাবে কেন্দ্র।

বর্তমানে ভারতে সিরাম সংস্থার কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভাক্সিনের মাধ্যমে টিকাকরণ চালু রয়েছে। আজ সিরাম সংস্থা বিবৃতি দিয়ে জানায় রাজ্য ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে তাদের কাছ থেকে একই কোভিশিল্ড যথাক্রমে ৪০০ ও ৬০০ টাকায় কিনতে হবে। কেন্দ্রকে সেই টিকা মাত্র ১৫০ টাকায় বিক্রি করবে তারা। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মতে, একই প্রতিষেধক ভিন্ন দামে কেনা আর যা-ই হোক যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র হতে পারে না। এর ফলে আর্থিক ভাবে ধুঁকতে থাকা রাজ্যগুলির ভাঁড়ারের হাল আরও খারাপ হতে চলেছে।

জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরে ২০১৯ সালের স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাচীর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, এত দিনে এক দেশ এক সংবিধানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। সেই সূত্র মেনে এখন করোনার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে বাঁচানোর লড়াইয়ে কেন এক দেশে প্রতিষেধকের দাম একই হবে না, প্রশ্ন তুলেছেন জয়রাম। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “এ দেশে বরাবরই বিনামূল্যে সার্বজনীন টিকাকরণ অভিযান হয়ে এসেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। পিএম কেয়ার-এ যে লক্ষ কোটি টাকা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে প্রতিষেধক কিনে রাজ্যগুলিকে বিতরণ করা হোক। রাহুল গাঁধী উস্কে দিয়েছেন নোট-বাতিলের স্মৃতি। সেই সময়ে লোকে বাতিল নোট বদলাতে ভিড় জমিয়েছিলেন সড়কে। রাহুল বলেন, “আম আদমি প্রতিষেধকের জন্য সেই লাইনে দাঁড়াবেন। অর্থ, স্বাস্থ্য ও প্রাণহানি হবে। আর আখেরে কিছু শিল্পপতিদের লাভ হবে।”

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, কেন্দ্র কখনওই দেশের সব মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে বলে দাবি করেনি। সরকারের লক্ষ্যই ছিল, স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের সঙ্গে ৪৫ বছরের উপরে থাকা ব্যক্তি, যাঁদের মধ্যে সংক্রমণের কারণে মৃত্যুহার বেশি তাদেরই প্রতিষেধকের আওতায় নিয়ে আসা। নতুন নীতিতেও ওই তিন শ্রেণির জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আর ৪৫ বছরের নীচে যারা রয়েছেন, তাঁরা যদি প্রতিষেধক নিতে চান, সে ক্ষেত্রে তা নিজেদের অর্থের বিনিময়ে নিতে হবে। কারণ সরকার কখনই করোনার বিরুদ্ধে সার্বজনীন টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

আর বিজেপির বক্তব্য, দেশে প্রতিষেধকের সামান্য ঘাটতি দেখা দিতেই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলি দাবি করেছিল তাদের প্রতিষেধক সংস্থা বা বিদেশ থেকে সরাসরি প্রতিষেধক কিনতে দেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো দাবি করেছিলেন তাঁর সরকার রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দিতে প্রস্তুত। কার্যত কেন্দ্র তো সেই দাবিই মেনে নিয়েছে। বিরোধী দলগুলির উচিত এ জন্য কেন্দ্রকে ধন্যবাদ দিয়ে রাজ্যবাসীকে বিনামূল্যে টিকাকরণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণ করা।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona Vaccine COVID-19 Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy