ফাইল চিত্র।
অক্সিজেনের অভাবে গত এপ্রিল-মে মাসে কত জন করোনা আক্রান্ত প্রাণ হারিয়েছেন, সেই তথ্য ‘অজানা’ বলে গত কালই বিতর্কের মুখে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ভারতী পওয়ারের সেই বক্তব্যকে ‘অস্ত্র’ করে আজ কেন্দ্রকে নিশানা করলেন একের পর এক বিরোধী নেতানেত্রী। তৃণমূলনেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো করোনা মোকাবিলায় মোদী সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন। প্রবল সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে বিজেপি নেতারা দিনভর রাজ্যগুলির উপরে দোষ চাপাতে চেষ্টা করেছেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে আক্রান্তেরা কী ভাবে অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। অক্সিজেন সঙ্কট নিয়ে হাইকোর্ট এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল হাসপাতালগুলি। পরিস্থিতি সামলাতে প্রায় মাসখানেক শিল্প ক্ষেত্রে অক্সিজেনের ব্যবহার বন্ধ রাখে কেন্দ্র। এত কিছুর পরেও অক্সিজেনের অভাবে কত রোগীর মৃত্যু হয়েছে সেই পরিসংখ্যান কেন্দ্রের কাছে না-থাকায় ক্ষুদ্ধ ও বিস্মিত অনেকেই। বিরোধীদের মতে, করোনা নিয়ে এটা কেন্দ্রের গা ছাড়া মনোভাবের পরিচয়। অক্সিজেন, ওষুধ ও ভ্যাকসিন সরবরাহ নিয়েও কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে আজ আঙুল তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা প্রমাণিত। প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশংসা করেছেন। আর সেখানে গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও আমরা, কখনও ঝাড়খণ্ড তা সরিয়েছে। এটা কি আমাদের কাজ!’’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর অক্সিজেনের অভাবে রোগী মৃত্যু নিয়ে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শিবসেনা সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘‘সরকার মিথ্যা কথা বলছে। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়া উচিত।’’ দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের কটাক্ষ, ‘‘অক্সিজেনের অভাব না-থাকলে হাসপাতালগুলি কেন আদালতে গিয়েছিল? এর পর তো কেন্দ্র দাবি করবে করোনা বলেই কিছু ছিল না!’’
গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে অক্সিজেনের ঘাটতি এতটাই তীব্র হয়েছিল যে তা মেটাতে বৈঠকে বসতে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পিএম কেয়ার্সের টাকায় দেশ জুড়ে ১৫০০টি মেডিক্যাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট গড়ে তোলা হবে। এক কংগ্রেস নেতার প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কিসের ভিত্তিতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট আর অক্সিজেনযুক্ত শয্যা বানানো হচ্ছে?’’ অক্সিজেনের অভাবে কত জন করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে তা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ কে সি বেণুগোপাল রাও। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংসদকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ আনবেন। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা বলেন, ‘‘কেন্দ্র বলেছে অক্সিজেনের অভাবে কারও মৃত্যু হয়নি। অথচ অতিমারির বছরে সরকার ৭০০ গুণ অক্সিজেন রফতানি বৃদ্ধি করেছিল।’’
আক্রমণের জবাব দিতে আসরে নামে বিজেপিও। সঞ্জয়ের টুইটের জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি জানান, মহরাষ্ট্র সরকার কেন্দ্রকে জানাক, সে রাজ্যে কত জন অক্সিজেনের অভাবে মারা গিয়েছেন। বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য রাজ্যের বিষয়। অক্সিজেনের অভাবে কত করোনা রোগীর মারা গিয়েছেন, তা রাজ্য কেন্দ্রকে না জানালে কেন্দ্রের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।’’ এ নিয়ে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার পাল্টা, ‘‘দিল্লিতে অক্সিজেনের অভাবে কত জনের মৃত্যু হয়েছিল তা খতিয়ে দেখতে অডিট কমিটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের নির্দেশে উপরাজ্যপাল কমিটিকে কাজ শুরু করার অনুমতি দেননি।’’ সরকারের মুখ বাঁচানোর চেষ্টা অবশ্য মাঠে মারা যায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর একটি পুরনো ভিডিয়ো সামনে আসতেই। যেখানে গডকড়ীকে বলতে শোনা গিয়েছে, কোভিডের সময়ে দেশের অনেককে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy