ফাইল চিত্র।
দু’বছরের বেশি সময় পরে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট চূড়ান্ত হল। কিন্তু কংগ্রেস, তৃণমূল, বিজু জনতা দলের সাংসদরা তাতে আপত্তি জানিয়ে ‘ডিসেন্ট নোট’ দিলেন। তাঁদের মূল অভিযোগ, আমজনতার তথ্য যাতে যে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্য মোদী সরকার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে আসছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের থেকেই আমজনতার তথ্য সুরক্ষিত থাকছে না। তথ্য সুরক্ষায় আইন করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকার তার যে কোনও সংস্থাকে এই আইন থেকে ছাড় দেওয়ার ‘লাগামহীন ক্ষমতা’ নিজের হাতে রেখেছে। তারা চাইলে সাধারণ মানুষের তথ্য যেমন ভাবে খুশি কাজে লাগাতে পারে। বেসরকারি সংস্থা যাতে সাধারণ মানুষের তথ্য কাজে লাগাতে না পারে, তার জন্য অনেক রক্ষাকবচ রয়েছে। কিন্তু সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ নেই।
২০১৭-য় সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তিগত পরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দেয়। তারপরেই সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য, কে কাকে ফোন করছেন, কার সঙ্গে কী কথা বলছেন, কোথায় কী কেনাকাটা করছেন, এই সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যের সুরক্ষার প্রশ্ন ওঠে। সেই অনুযায়ীই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিলের খসড়া তৈরি হয়। তথ্য সুরক্ষায় বিশেষ নজরদারি সংস্থা তৈরির কথা বলা হয় বিলে। অনুমতি ছাড়া কারও ব্যক্তিগত তথ্য কাজে লাগানোর উপরেও নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়।
২০১৯-এ সংসদে এই বিল পাশের পরে তা আলোচনার যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। দু’বছর ধরে কমিটির আলোচনার পরে আজ যে রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে সংসদীয় কমিটিই প্রায় ২০০-র বেশি সংশোধনীর সুপারিশ করেছে। সূত্রের খবর, ২৯ নভেম্বর থেকে শুরু সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট পেশ হবে। কিন্তু বিরোধীরা আজ ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই বিল পাশের চেষ্টা হলে সংসদে মোদী সরকারকে প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়তে হবে।
আজ কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, মনীশ তিওয়ারি, গৌরব গগৈ, বিবেক তাঙ্খা, তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন, মহুয়া মৈত্র, বিজু জনতা দলের অমর পট্টনায়েক তাঁদের ‘ডিসেন্ট নোট’-এ মূলত সরকারি বিলের দু’টি ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রথম ধারায় কেন্দ্রীয় সরকারকে তার যে কোনও সংস্থাকে আইন থেকে ছাড় দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রমেশের দাবি, এর জন্য সংসদের অনুমতি নেওয়ার শর্ত রাখা হোক। দ্বিতীয়টিতে কারও ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের সময় অনুমতি নেওয়ার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আরও আঁটোসাঁটো নীতির দাবি উঠেছে। মনীশ তিওয়ারির মতে, এই বিল সংসদে পাশ বলেও তা সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নয় বিচারপতির বেঞ্চ ব্যক্তিগত পরিসরের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে যে রায় দিয়েছিল, সরকারের বিলটি মূলগত ভাবে তার বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রের থেকে সাধারণ মানুষের তথ্য এতে সুরক্ষিত নয়। ডেরেক-মহুয়ার অভিযোগ, কমিটি সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনার যথেষ্ট সময়-সুযোগ দেয়নি। অতিমারির মধ্যেও সপ্তাহে একাধিক দিন বৈঠক ডাকা হয়েছে।
প্রথমে যৌথ সংসদীয় কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লেখি। তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পরে প্রাক্তন মন্ত্রী পি পি চৌধুরীকে কমিটির প্রধান করা হয়। কেন্দ্র ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় বিল পেশ করলেও কমিটি যে সব তথ্য ব্যক্তিগত নয়, তার সুরক্ষা নিয়েও সুপারিশ করেছে। একে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিলের বদলে শুধুমাত্র তথ্য সুরক্ষা বিল হিসেবে নামকরণের সুপারিশ করেছে। তৃণমূলের সাংসদরা এ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy