বাজেট পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী। ছবি: পিটিআই।
টানা দু’ঘণ্টা দশ মিনিট। গড়গড় করে বাজেট পড়ে গেলেন নির্মলা সীতারামন। যখন শেষ হল, প্রথম পূর্ণ সময়ের মহিলা অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে এগিয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ‘‘এক বারও জল খেলেন না!’’ লাজুক দৃষ্টিতে হাসলেন নির্মলা। পিছন থেকে জয়ন্ত সিন্হা বললেন, ‘‘বিরোধীদের জল খাইয়ে দিয়েছেন। গোটা বাজেটে বিরোধীরা টুঁ শব্দটি করতে পারেনি।’’ অট্টহাসি বিজেপি শিবিরে।
বিরোধীরা বলছে, ‘শব্দ’ করব কী? বাজেট বুঝলে তো? এটি বাজেট না বিজেপির ইস্তাহার? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম এআইসিসি দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করতে এলেন বাজেট শেষ হওয়ার আড়াই ঘণ্টা পরে। পোড় খাওয়া এই নেতাটি তখনও বাজেট পুরোটা ‘ধরতে’ পারেননি। বললেন, ‘‘কখনও এমন বাজেট দেখেছেন, যেখানে মোট রাজস্ব, খরচ, রাজকোষ ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি খোলসা করা হল না? কখনও এমন বাজেট দেখেছেন, একশো দিনের কাজ, মিড-ডে মিল, স্বাস্থ্য-শিক্ষায় কত বরাদ্দ হল, কেউ জানলেন না? তফসিলি জাতি-উপজাতি, মহিলা, সংখ্যালঘুরা কেমন গুরুত্ব পেলেন, জানলেন না? আমরা তো স্তম্ভিত! এত অস্বচ্ছ, স্বাদহীন বাজেট কখনও দেখিনি।’’
নির্মলা যখন ব্রিফকেসের বদলে লাল শালুতে মোড়া খেরোর খাতার মতো করে কাপড়ের ব্যাগে বাজেট পেশ করতে এলেন, অনেকেই তারিফ করছিলেন। কেউ তো ছক ভাঙলেন। কিন্তু বাজেটের ছক ভেঙে যে হিসেবপত্র কিছুই দেবেন না, সেটি ভাবনার বাইরে ছিল বিরোধীদের। কথায় কথায় নির্মলা বললেন, সব আছে বাজেটের পরিশেষে। চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘দেশের ১৩০ কোটি জনতার মধ্যে এই পরিশেষ খতিয়ে দেখার সুযোগ আছে কত জনের? হাতে গোনা ক’জনই সেটি পারবেন। কিন্তু আম জনতা তো জানতেই পারলেন না, বাজেটে আসলে কী আছে?’’
বালাকোটের জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করে ভোট করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গোটা বাজেটে প্রতিরক্ষা বরাদ্দেরও কোনও উল্লেখ নেই। নেই কৃষির বিষয়েও কোনও কথা। চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের বিবৃতি লিখতে গিয়ে কৃষি নিয়েও কিছু লিখতে পারিনি। কারণ, খোদ অর্থমন্ত্রীই কিছু বলেননি।’’ সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও বলেন, ‘‘শব্দ নিয়ে খেলে অর্থনীতির ছবিটি উজ্জ্বল করা হয়েছে। মানুষকে তো ধোকা দেওয়ার শামিল।’’
চটজলদি পরিশেষ ঘেঁটে কংগ্রেস-সহ অন্য বিরোধীরা বলছে, একে তো এ বাজেটে নতুন কিছু নেই। কাউকে কোনও সুরাহাও দেওয়া হয়নি। উল্টে বোঝা চাপানো হয়েছে। চিদম্বরমের কথায়, মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা যে পথে ভেবেছেন, নরেন্দ্র মোদী ঠিক উল্টো পথে তা রূপায়ণ করছেন। মনমোহন সিংহের মতো কঠোর সংস্কারের সাহসও দেখাতে পারেনি সরকার। আর প্রধানমন্ত্রী এমন সব প্রস্তাব করেছেন বাজেটে, যেন গোটা দেশকে একটি বড় রাজ্য ভাবেন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্মের তোয়াক্কা না-করে রাজ্যের অধিকারেও থাবা বসাতে চাইছেন।
কংগ্রেসের রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার অভিযোগ, ‘‘রাজকোষ ঘাটতির যে অঙ্ক অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন, সেটিও ভুল। গ্রামীণ উন্নয়নের খরচ, পরিকাঠামো, খাদ্যে ভর্তুকি ধরা হয়নি। সেগুলি ধরলে ঘাটতির দাঁড়ায় ৪.৭ শতাংশ।’’ রণদীপের মতে, অতিরিক্ত বিদেশি ঋণ নিয়ে দেশের দেনা আরও বাড়বে। পাঁচ বছরে তেলের উপর ১৩ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করেও আরও বোঝা চাপানো হল আম আদমির উপর। যুবকদেরও ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। বেকারি, শিক্ষার সুযোগ নিয়ে একটিও কথা নেই। রণদীপের কথায়, ‘‘এই সব কারণেই মোদী-দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম বাজেটের পর আজ শেয়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়ে। এ সবই মোদীর নতুন ভারত!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy