ফাইল চিত্র
ঘরে-বাইরে প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকারি সম্পদ ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহারের সুযোগ বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কর্মসূচি থেকে পিছু হটছে না মোদী সরকার। বরং চলতি বছরেই রেল স্টেশন থেকে গ্যাসের পাইপলাইন পর্যন্ত বিভিন্ন সম্পদ যাতে বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দিয়ে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঘরে তোলা যায়, তার প্রস্তুতি পুরোদমে শুরু করে দিচ্ছে তারা।
সরকারি সূত্রের খবর, এ বছর ৪০টি রেল স্টেশন বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া হবে। ২,২০০ কিলোমিটারের বেশি গ্যাসের পাইপলাইন এবং ৭৫০ কিলোমিটারের বেশি তেলের পাইপলাইনও ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহারের জন্য হাতে পাবে তারা।
সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস) ঘোষণা করেছে, ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর তারা সারা দেশে মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ ও সরকারি সম্পদ বেসরকারি সংস্থাকে লিজ় বা ভাড়া দিয়ে টাকা তোলার বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান চালাবে। এর পরে ৯ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে আন্দোলন হবে। বিক্ষোভ হবে সমস্ত জেলা সদরে।
আজ কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৩১ অগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস নেতারা বিভিন্ন শহরে গিয়ে মোদী সরকারের এই ‘ন্যাশনাল মনিটাইজ়েশন পাইপলাইন’-এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক বৈঠক করবেন। শশী তারুর থেকে সচিন পাইলটের মতো বিক্ষুব্ধ বলে পরিচিত নেতাদেরও মাঠে নামানো হচ্ছে।
রাহুল গাঁধী গত সপ্তাহেই দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, মোদী সরকারের এই নীতির ফলে তাঁর হাতে গোনা কিছু শিল্পপতি ‘বন্ধুই’ লাভবান হবেন। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুরও কার্যত একই আশঙ্কা। কেন্দ্রের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা তথা
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদের বক্তব্য, রাশিয়ায় বরিস ইয়েলৎসিনের সময়ে এ ভাবে হাতে গোনা কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার হাতে সরকারি সম্পদ তুলে দেওয়ার ফলে ওই শিল্পপতিরাই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছিল। ভারতেও সেই ‘অলিগার্কি’-র সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রাহুলের সমালোচনার পরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পাল্টা আক্রমণে প্রশ্ন করেছিলেন, কংগ্রেস নেতা কি আদৌ সরকারি সম্পদ কাজে লাগিয়ে ঘরে টাকা তোলার মানে বোঝেন? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের প্রশ্ন, সীতারামন কৌশিক বসুর কথার কী জবাব দেবেন?
কৌশিক বলেছেন, সরকারের যে সব সম্পদ পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না, তা পুরোদস্তুর কাজে লাগিয়ে টাকা তোলার পরিকল্পনা নীতিগত ভাবে খুবই ভাল। কিন্তু কেন্দ্র যে ভাবে এগোচ্ছে, তা ঠিক নয়। এর থেকে সরাসরি সম্পদ বেচে দিলে লাভ
হত। কারণ, ২৫ বছরের লিজ় দিয়ে সরকার পুরো দাম পাচ্ছে না। অথচ বেসরকারি সংস্থা ওই সম্পদ নিংড়ে মুনাফা করবে। পরে সরকার যখন তা হাতে ফিরে পাবে, তখন তার মূল্য অনেক কমে যাবে।
মনিটাইজ়েশন প্রকল্প থেকে মোদী সরকার চার বছরে ৬ লক্ষ কোটি টাকা ঘরে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে। কৌশিকের মতে, অর্থনীতির এখন যা অবস্থা, তাতে এর অর্ধেক সরকারের ঘরে আসবে। কিছু ক্ষেত্রে
আবার একটি সংস্থার হাতে পুরো বাজার চলে গেলে, সেখানে তার একচেটিয়া দখল (মোনোপলি) তৈরি হবে। ক্রেতাদের সঙ্গে শ্রমিক-কর্মীদেরও তার খেসারত দিতে হবে। কৌশিকের মতে, কেন্দ্রের উচিত এই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা।
কেন্দ্র অবশ্য পিছু হটতে নারাজ। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ৬ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে চলতি অর্থ বছরেই ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয়ের
লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি রেল স্টেশন থেকে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা মেলার আশা। দু’টি
পাহাড়ি টয় ট্রেন প্রকল্প বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ৪৬০ কোটি টাকা আসতে পারে। বারাণসী, অমৃতসর, ভুবনেশ্বর, ইনদওর, ত্রিচী, রায়পুর বিমানবন্দর চলতি বছরেই বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুর, হায়দরাবাদ বিমানবন্দর প্রকল্পেও সরকারের হাতে
যেটুকু অংশীদারি রয়েছে, তা ছেড়ে দেওয়া হবে। এ থেকে প্রায় ৫,৭০০ কোটি টাকা মিলতে পারে। পাওয়ার গ্রিড, গ্যাসের পাইপলাইন ও তেলের পাইপলাইন থেকে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজকোষে আসার সম্ভাবনা। তালিকায় রয়েছে খাদ্য নিগমের গুদাম এবং বিশাখাপত্তনম, মুম্বই, পারাদ্বীপ, কান্ডলা, বিমানবন্দরের পরিকাঠামো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy