একনাথ শিন্দে। —ফাইল চিত্র।
মহারাষ্ট্রে শিবসেনার অন্দরে একনাথ শিন্দের নেতৃত্বে বিদ্রোহের এক বছর পূর্ণ হবে মঙ্গলবার, ২০ জুন। গত বছর ওই বিদ্রোহের জেরেই মহারাষ্ট্রে পতন হয় মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকারের। মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব ঠাকরে। পরে বিজেপির সমর্থন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন শিন্দে। সেই বিদ্রোহের বর্ষপূর্তির দিনটিকে ‘গদ্দার দিবস’ হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করল এমভিএ জোটের অন্যতম শরিক তথা শরদ পওয়ারের দল এনসিপি। দলের রাজ্য সভাপতি জয়ন্ত পাটিল এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় কর্মীদের।
গত বছর ২০ জুন আচমকাই শিবসেনার ভিতরে বিদ্রোহ শুরু হয়। একনাথ শিন্দের নেতৃত্বে বেশ কয়েক জন বিধায়ক উদ্ধবের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা ঘোষণা করে মহারাষ্ট্র ছেড়ে বিজেপি-শাসিত গোয়ায় পাড়ি দেন। তখনই রাজনৈতিক মহল বিষয়টির মধ্যে বিজেপির জড়িত থাকার ইঙ্গিত দেয়। এর পরে বিক্ষুব্ধ শিবিরের সঙ্গে উদ্ধর এবং এমভিএ শীর্ষ নেতৃত্বের দফায় দফায় বৈঠকেও বরফ গলেনি। উল্টে শিন্দে ও তাঁর অনুগামী বিধায়কেরা বিজেপি-যোগের প্রমাণ স্পষ্ট করে দিয়ে অসমে পাড়ি দেন। শিবসেনার ভাঙন দ্রুত স্পষ্ট হয় এবং মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়েন উদ্ধব। বিজেপির সমর্থনে নতুন মুখ্যমন্ত্রী হন শিন্দে। শিবসেনা বিধায়কদের বড় অংশই উদ্ধবের সঙ্গ ছেড়ে শিন্দের হাত ধরেন।
সেই বিদ্রোহের বর্ষপূর্তিতেই গদ্দার দিবসের ঘোষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শিন্দে শিবির বিজেপির হাত ধরে সরকার চালালেও তাতে পদ্ম-শিবিরের বিধায়কদেরই দাপট বেশি। পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, শিন্দে নামেই মুখ্যমন্ত্রী, সব সিদ্ধান্তই বকলমে নেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফডণবীস। বিষয়টি নিয়ে শিন্দে শিবিরের অন্দরেও অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এই পরিস্থিতিতে বিবাদ উস্কে দিতেই এনসিপি নেতার এমন পরিকল্পনা বলে মনে করছেন অনেকে।
শিন্দে শিবিরের বিদ্রোহের পরেই এমভিএ শিবিরের বড় অংশ অভিযোগ আনে, বিজেপি টাকা দিয়ে ওই বিধায়কদের উদ্ধবের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। ‘গদ্দার দিবসে’ রাজ্যের নানা প্রান্তে ‘প্রতীকী টাকার বাক্স’ প্রদর্শন করে শিন্দে শিবিরকে খোঁচা দিতে চায় এনসিপি। পাশাপাশি তারা যে বিজেপির হাতের পুতুল, এবং বিশ্বাসঘাতকতার ফল যে তাদের ভুগতে হবে, সে প্রচারও চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জয়ন্ত পাটিল।
বিজেপি-শিন্দে শিবিরের নেতারা অবশ্য এনসিপির এই অনুষ্ঠানকে সস্তা নাটক বলে অভিযোগ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ক্ষমতা হারিয়ে ওই নেতারা দিশেহারা হয়ে গিয়েছেন। ভোট হলেই মানুষ কাদের পাশে রয়েছেন, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে দাবি বিজেপি-শিন্দে শিবিরের নেতাদের।
শাসক পক্ষ যা-ই বলুক, জোটের অন্দরে অস্বস্তির চোরাস্রোত স্পষ্ট। আর সে কারণেই এনসিপি নেতৃত্বের এমন কাজে রীতিমতো মজা পাচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে শিবিরের নেতারা। যদিও দলছুটদের ঘরে ফেরানোর আশায় প্রকাশ্যে এখনই কিছু বলছেন না। রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের ক্ষোভ এবং সাম্প্রতিক একাধিক সমীক্ষার পরে উদ্ধব শিবির আশাবাদী, এখনই ভোট হলে কার্যত মুছে যাবে শিন্দে শিবির। তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর ক্ষোভও যে বাড়ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে একাধিক ঘটনায়। এনসিপির অনুষ্ঠান সেই ক্ষোভের আগুনকেই উস্কে দিয়ে শিন্দে শিবিরের অস্বস্তি বাড়াবে বলে মনে করছেন এমভিএ নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy